পাপমোচন
————-ছোটগল্প
রমেন মজুমদার,02/07/23
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল রেহানা।
আইজ তিনদিন পেডে ভাতের দানা পড়েনি।
বস্তির জীবন। কাম করলে ভাত,নইলে হারাদিন উপাস থাইক্যা খালি চোহের পানি ফেলন ছাড়া গতি নাই।
—
পনের বছর বয়সে রেহানারে বিয়া দিল মোখলেস,মা মরিয়ম তাতে সায় দিল।
একই বস্তির উত্তার পাশে থাকত হালিম।
মাইনষে তারে হাইল্যা কইয়া ডাকত।
এই হাইল্যা একদিন মরিয়মরে কয়, খালা মাইয়া বিয়া দাও।ওর বয়স অইছে।
মরিয়ম জিজ্ঞাস করল,রেহানার জন্য পোলা খুঁজতাছ?ভালা ভালা।
তয় কামাই রোজগার করবার পারে এমুন পোলা পাইলে আমারে জানাইও।
হালিম কইল,
আমি মুডামুডি খারাপ কামাই না। একখান সিএনজি কিনছি।
কয়দিন আর মাইনসের রিকশা ভাড়া কইরা চালামু।
সোমায় মত ট্যাহা শোধ দিতি না পারলে
চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে মালিকে।
হেইয়ার লাইগা হ্যার রিকশা বাদ দিয়া নিজেই কিছু লোন নিছি গেরামিন ব্যাংক থন। আমার কিছু আছিল নগদ। মিলাই ঝিলাই আশি হাজার ট্যাহা দিয়া কিনলাম।
নিজের স্বাধীন মত চালাই। ইনকাম খারাপ না। ব্যাংকরে লোন শোধ দেই মাসে
পাঁচশ করে।
হালিমের সব কথা শুইনা ওরা রাজি অইল।
রেহানারে বিয়া দেবার জন্য ওরা মনস্থ করছে।
হালিম রাইতে শুইয়া শুইয়া খালি রেহানারে স্বপ্নে দ্যাহে। আহ, কি সুন্দর!
লাউয়ের ডগার মত শরিরখান বারতাছে। কি সুন্দার বুকখান ! মধুর রসে টইটুম্বর!
ভাবতে ভাবতে হালিমের মাঝে মইধ্যে স্বপ্নদোষ হয়।
ধুর পেরতেক দিন বিছনা ধুইতে হয়। রেহানারে ঘরে আনতি পারলে এই জ্বালার থন রেহাই পাইতাম। যাউকগা, বিয়ার পরে হ্যারে দিয়া দুইকাম হইব।
হালিম এখন স্বপ্ন দেখে সিএনজি থুইয়া ট্রাক কেনার। লম্বা লম্বা খ্যাপ মারতি পারলে অনেক ট্যাহা।
বড় বড় ফ্লাট বাড়ির স্বপ্নও হালিমরে তাড়া করে।
খালা ইচ্ছা আছে,একদিন বড়লোক অমু। হালিমের কথায় ওরা রাজি হয়ে রেহানার বিয়ে দেয় ।
হালিম মনে মনে ভাবে,চাঁদ পাইছি।চাঁদের জোছনায় নদীতে জোয়ার আসে।আমি হেই জোয়ারে মন ভইরা নামু আর সাতরামু।
—-
দিন গড়িয়ে চলল।
হালিমের বউ রেহানা পোয়াতি অইছে। হালিমের নেশাটাও বাড়ছে।
রাইতে দুলতে দুলতে একেকদিন পোয়াতি বউডার উপর পশুর মত লাইফাইয়া ওঠে।
মদ খাইলে নাকি সেনসেক্স বাড়ে। আগে হালিম তাই শুনত বস্তির মাইনসের কাছে।
হ’ তাইতো ?
নিজেরে সামাল দিতে পারেনা। তার চাই রেহানার গতরখান।
রাইত হইলে নেশাটা বাড়ে।ইদানিং বেশি বেশি কইরা খায়,আর হেমরিডারে রাইত অইলে পিন্দনের কাপুর টাইন্যা খুলে।
–আহা, কি কারো ? আরষ্ট হয়ে রেহানা কয়,তুমি জানোনা আমি পোয়াতি অইছি।
পেডের বাচ্চাডার খেতি অইব।
আরে আমি কি পালাই যাইতাছি যে তুমি আমারে পাবানা বুঝি আর?
আট মাসের সময় হালিম কয়। বউরে দিবা ?
–,তুমি আর মানুষ অইবানা কোনদিন ?
–আরে অমু, আমিতো মানুষই….
—
একদিন অতি ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান জন্মনিল রেহানার গর্ভে।
হালিম খুশি।
এইবার ফ্লাট বাড়ি কিনুম। হাইল্যারে ঠ্যকায় কেডা (?)
হালিম বউডারে কয়, রেহানা আইজ একজন পুরুষ আইব আমার ঘরে,হ্যারে খুশি করবা।পাঁচে কন্ট্রাক্ট করছি।
এক রাইতেরইতো ব্যাপার। হ্যায় ট্র্যারাকের মহাজন। আমারে কইছে,লোনে ট্র্যাক বেচব। সুদ নিবো না।
রেহানার গতর গোলায় কথা হুইনা।
— আমি পাড়ুমনা।
–তোর পারতে অইব। না পারলে তোর মাইয়া বেচুম মেলা ট্যাকা পামু। একবারে বিল্ডিংয়ের মালিক হমু!!
রেহানা হালিমের কথা শুনে ভয় পায়।তারপর হালিমের কথায় সায় দেয়।
এই ভাবে রেহানার জীবন কলুষিত হতে থাকে।
রেহানা বলে, আমারে পানিতে ডুবাইচ, কিন্ত মাইয়াডারে পবিত্র রাইখ।
তারপরদিন বস্তির হগ্গলে চিল্লাপাল্লা শুরু করছে। ওদিকে পুলিশ আইছে বস্তিতে।
কি অইছে কি অইছে কইয়া হালিম
সিএনজিটা গেরেজ করল।
পাশের একজন মেয়ে মানুষ বলল, তোমার বউ বিষ খাইছে।
হালিমরে পুলিশে এসে জেরা শুরু করল।
—–শব্দ সংখ্যা -৫০৫