………..পরিতোষ জ্যেঠু’কে খুন করতে চাইছিলে কেন ?”
“ওর জন্যই আমার বাবা মাকে কাকা সব্বাইকে হারাতে হয়েছে। আমার পরিবারকে হারাতে হয়েছে।” বলতে বলতে জ্যেঠামশায় কেঁদে ফেললেন। চোখে জল, কন্ঠে আবেগ মেশানো, বললেন, ” আমি মায়ের ডাইরি থেকে জানতে পারি কারা বাবা কাকা’কে খুন করেছিল। এটা মা জানতে পেরেছিল কারণ ওরাই বাবা আর কাকা কে খুন করার পর হুমকি দেয়, সম্মান হানির। সেজন্য বাড়ির বাকিরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। মা ওদেরকে ভালো ভাবেই চিনতেন। ওদের জন্যই আমাদের এদেশে পালিয়ে আসতে হয়েছিল। আমি জ্যাঠামশায়’কে বললাম, ” ওরা কারা? ওরা তোমাদের মেরে ফেলতে চেয়েছিল কেন ?” জ্যাঠামশায় হাসতে হাসতে বললেন, ” ধর্ম যুদ্ধ বোঝো ? ওদেশে হিন্দুদের উপর সেসময় অত্যাচার করা হত। আর আমার বাবা উনাদের উদ্দেশ্যে প্রতিবাদ করেছিলেন ।সেজন্য, বাবা আর কাকা’কে খুন করা হয়েছিল। ইনস্পেক্টর বললেন, ” কিন্তু পরিতোষ বাবুর সঙ্গে এই ঘটনার সম্পর্ক কি ?” জ্যাঠামশায় বললেন, ” অন্যান্যদের থেকে জানতে পারি ওদের কাছে আমাদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য প্রদান করতেন এই শয়তান। ও ছোটোবেলায় আমাদের বাড়িতে আসতো খেলা করতে। আর বেশিরভাগ সময় এখানেই থাকত। আমার ভাইয়ের সাথে খেলা করতে আসতো। আর সব তথ্য ওদের জানিয়ে দিত।” বুঝলাম এক কথায় যাকে বলে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। এতক্ষণে সম্পূর্ণ বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেল।
আমি পরিতোষ জ্যেঠু’র দিকে তাকিয়ে বললাম, ” এই পৃথিবীতে আদর্শ বলে যে কিছুই হয় না, সেটা তুমি আরও একবার প্রমাণ করলে।” জ্যেঠু আমতা আমতা করলেও কিছুই বলতে পারলেন না।
আমি জ্যাঠামশায়ের দিকে ফিরে একটা কথা বলতে যাবো, ঠিক সেই সময় আমার মুখের কথায় কেড়ে নিয়ে বাবা বললেন, “এই বাড়ির বর্তমান মালকিন তোমার মেয়ে।” দেখলাম বাবা, মা,দিদিভাই আর একজন উকিল দাঁড়িয়ে আছেন। উনারা কখন এসেছেন বুঝতেই পারলাম না।
ইনস্পেক্টর কৌশিক সিকদার জ্যাঠামশায়কে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন, ” চলুন। শ্রীঘর থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি।” আমি ইনস্পেক্টর কৌশিক সিকদার কে বললাম, ” ধন্যবাদ আপনাকে। এত দ্রুত ফরেন্সিক রিপোর্ট বের করার জন্য। তা না হলে, রহস্য অধরাই থেকে যেত।
আমি এবার বললাম, ” জ্যাঠামশায়, চিন্তা করবেন না। দিদিভাই এর বিয়ে ধুমধাম করেই হবে। কোনো কিছু কমতি রাখবো না।”
জ্যাঠামশায় চলে যাওয়ার সাথে সাথেই দূরে দেখলাম দিদিভাই কাঁদছে। আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম, “কাঁদিস না ! আমরা আছি তো। উনি অন্যায় করেছেন তাই শাস্তি পেতেই হবে। সত্য কঠিন হলেও মেনে নিতে হয়।” দিদিভাই, যতটুকু সম্ভব শান্তনা দেওয়া চেষ্টা করলাম।
আসতে আসতে পটল মানে অভিজিৎ বললো, ” তুই বললি না কেন কীভাবে বুঝলি, অমাবস্যাতেই কেন খুনি আসবে? ” আমি হাসতে হাসতে বললাম, ” ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে বুঝতে পেরেছিলাম। আগের খুন হওয়া রক্ত থেকে এটা বোঝা গেল খুনগুলো নির্দিষ্ট সময় অন্তর হয়েছে।” এবার পেঁচা মানে কমলেশ বললো, ” খুনি আগে কাদের খুন করেছে মানে আমি বলতে চাইছি খুনির বাবা বা কাকা কে যারা খুন করেছিল তারা আজও বেঁচে আছেন ?” আমি বললাম, ” হয়ত সবাই নেই। দু একজন ছিল। তাদেরকেই হয়ত খুন করেছে।”
সব তো বুঝলাম বন্ধু, আমার পেট পুরোন বিরিয়ানি কে খাওয়াবি ! কথা দিয়ে কথার নড়চড় হলে কিন্তু………….. ।