নিঃসঙ্গতা এক অদ্ভূত অনুভূতি, যা খুব তীব্রতর আবেগের সৃষ্টি করতে পারে আবার আবেগের হ্রাসও ঘটাতে পারে। মনোবিজ্ঞানীদের জটিল বিশ্লেষণে না গেলেও এ কথা খুব সহজভাবেই বোধযোগ্য। নিঃসঙ্গতার অনুভূতি এমনটাই যে ব্যক্তি নিজেকে যে কোন ফার্নিচার বা জড় পদার্থের সাথে তুলনা করা শুরু করতে পারে। দিনশেষে আমরা সবাই একা, আমাদের কিছু অব্যক্ত অনুভূতি থাকে, যা কারো কাছেই প্রকাশ করা যায় না; হয়ত সামাজিক কারণে বা ব্যক্তির একান্ত Ethics এর জায়গা থেকে। বিশেষত, নিঃসঙ্গতার অনুভূতি তীব্রতর হয় যখন কোন কারণে মূলধারার পারিবারিক জীবনযাপন থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। যেমন প্রবাস জীবন, ডিভোর্স বা রোমান্টিক সঙ্গীর মৃত্যু। আবার অনেক সময় সঙ্গী থাকা সত্বেও মানুষ একা হয়ে যেতে পারে । এর কারণ হতে পারে অবহেলা, কাজের চাপ, পরকীয়া বা অাকর্ষণের অভাব । সাধারণত Mid Life Crisis বা বার্ধক্যে এ ধরনের শূন্যতা মানুষের মাঝে দেখা যায়। একাকিত্ব সুস্থ মানুষকে বিকৃত করে ফেলতে পারে। কেননা , সমাজের মাঝে থেকেও যেহেতু সে মূলধারার জীবন যাপন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যেসব মানুষ প্রাকৃতিক বা মানবসৃষ্ট কারণে নিঃসঙ্গ জীবন যাপনে বাধ্য হচ্ছে, তারা জীবনের প্রতি অাকর্ষণ হারিয়ে ফেলে। মানুষ যা করে, সবটাই লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গোটা এলাকায় আমরা যদি একাই বসবাস করতাম, কবে আমাদের পোশাক পরার প্রয়োজনই হত না । এমনকি, নিজের রূপলাবণ্য বৃদ্ধির চেষ্টাও অপ্রয়োজনীয়। নিঃসঙ্গ মানুষের ক্ষেত্রে এই সত্যটি অনিবর্চনীয়। ধরুন , এক স্বামী সন্তানহীন পরিবার থেকে দূরে থাকা নারীর জীবনে সকল সাজগোজই ব্যর্থ মনে হয় । নিঃসঙ্গতার অনুভূতিটি অনেকটা বুকে চাপা দেয়া পাথরের মত । বিশেষত , যারা বিচ্ছেদ বা মৃত্যু প্রভৃতি কারণে হঠাৎ করে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে , তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। কেননা একটি অভ্যস্ত জীবন থেকে হঠাৎ করেই নিঃসঙ্গতার মহাসাগরে আপতিত হয় । যাকে আমরা Fish Out of Water অবস্থা বলতে পারি ।
নিঃসঙ্গতার যে শুধুই খারাপ দিকই রয়েছে , তা নয়। নিঃসঙ্গতার কারণে মানুষ নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে । কেননা , মাথা ঘামানোর জন্য তার জীবনে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি থাকে না। তার সকল চিন্তা ভাবনা নিজেকেরঘিরে আবর্তিত হয় । By knowing thyself , এ ধরনের মানুষগুলো নিজের সৃজনশীলতার চরম শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।
অনেক ভালো লিখেছেন
আপনার সাথে কি যোগাযোগ করা যাবে?
WhatsApp এ?