আমার প্রকাশিত কোনো বই নেই বলে,
আমাকে নিয়ে লোকে আর কিছুই জানতে পারল না।
আমার বদ্ধ ঘর, এক কোণে বসে থাকা টেবিল,
নির্জন সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণি, ক্যালেন্ডার
কলমদানি, চশমার বক্স, মোমবাতি
সেল্ফে রাখা নিঃশব্দ বইয়ের সারি, আঁকার খাতা
আর দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে রাখা কবিতার খসড়াগুলো
হ্যাঁ, ওরাই কেবল জানে আমাকে।
ওরাই দেখেছে
দু’কলম লিখে ফেলার পর,
এক কাপ চায়ের পাশে আমার ছোট্ট আত্মতৃপ্তি।
আবার, পুরো একটা পাতা ভর্তি করে লেখা শব্দের সংসারে,
অন্তরে বেজে যাওয়া একধরনের নিঃশব্দ বেদনা।
এ পৃথিবীতে, যার কোনো শব্দসংজ্ঞা নেই।
লেখাগুলো আমার চোখের ভাষা জানতো,
জানতো, মস্তিষ্কের ভেতর ছুটোছুটি করা সহস্র ভাবনাদের।
কিন্তু পৃথিবীর কোনো প্রেসে ছাপা হয়নি ওদের আত্মা,
বেঁচে থাকতে লেখাগুলো প্রাণ পেল না।
আমার বুকের গোপন ড্রাফটে পড়ে ছিল তারা,
যেমন ভালোবাসার চিঠি অনেক সময়,
পোস্টবক্স অবধি পৌঁছাতে পারেনা।
আমি ভাবি,
আমি মরে গেলে লেখাগুলোর কী হবে?
ওরা তো আমারই মতো
স্বীকৃতির আশায় নয়,
শুধু একটু আশ্রয়ের জন্য কাঁপে।
ওদের এ আশ্রয়হীনতা নিয়ে, বড্ড দুশ্চিন্তায় ভুগি।
আমার জন্য কিছুই হলো না ওদের,
ওদের জন্য আমারও কিছু হলো না।
তবু আমরা জড়িয়ে আছি নিজেদের,
রোজ কথা হয়, পড়া হয়।
একেকটা শব্দ আমার বুকে, শিরায় রক্তের – মতো খেলে যায়।
নতুন কিছু লিখবো বলে,
পুরোনো লেখাগুলোকে একপাশে রেখে,
রোজ চষে বেড়াই আমার নিজের ভাবনার জগৎ’এ।
যেখানে শব্দেরা অর্ধেক ঘুমিয়ে থাকে,
অর্ধেক জেগে থাকে কেবল আমারই জন্য।
আমার প্রকাশিত কোনো বই নেই।
তাই কেউ জানতে পারেনি
আমি কেমনভাবে নিঃশেষ হই, একটা কবিতার শেষ লাইনে এসে।
তবু নিজেকে খুঁজি রোজ,
একটা নামহীন পাণ্ডুলিপির ভেতর।
যার প্রতিটা শব্দে,
আমি এক অসমাপ্ত মানুষ হয়ে উঠি।