Skip to content

কষ্টের মেয়ে – প্রসূন গোস্বামী

লজ্জার দেশে সে জন্মেছিল
যেখানে তার নাম ছিল অভিশাপ, আর তার কণ্ঠ ছিল পাপ
সে শিখেছিল বাধ্য হতে, ভয় পেতে
কিন্তু তার হাতে ছিল বই, আর তার হৃদয়ে আগুন

তার মুখে ছিল পর্দা
কিন্তু তার চোখে ছিল অশ্রু, আর তার ঠোঁটে প্রশ্ন
সে অন্যকে অনুসরণ করতে বাধ্য হতো, অন্যের কাছে আনুগত থাকতে
কিন্তু তার হাতে ছিল কলম, আর তার মনে সত্য

সে জনতার সামনে দাঁড়াল
কিন্তু তার হাতে ছিল মাইক্রোফোন, আর তার কণ্ঠে সাহস
সে ঘৃণার আক্রমণ ও হুমকির মুখোমুখি হয়েছিল
কিন্তু তার মাথায় ছিল ব্যান্ডেজ, আর তার কাপড়ে রক্ত ছিল

সে তার বাড়ি আর দেশ ছেড়ে চলে গেল
কিন্তু তার পাশে ছিল স্যুটকেস, আর তার আত্মায় আশা
সে ঘুরে বেড়াল, খুঁজে ফিরল জায়গা
কিন্তু তার কোন দেশ ছিল না নারীদের জন্য, আর কোন শান্তি ছিল না নিজের জন্য

সে লিখল তার জীবন, তার গল্প
কিন্তু তার কাছে ছিল না কাগজ লেখার জন্য, আর ছিল না মশাল রঙের জন্য
সে প্রকাশ করল তার ভালোবাসা, তার আনন্দ
কিন্তু তার চুলে ছিল ফুল, আর মুখে হাসি

সে তার পরিচয় আর সংস্কৃতি গ্রহণ করল
কিন্তু তার শরীরে ছিল শাড়ি, আর কপালে ছিল টিপ
সে বৈচিত্র্য আর বহুত্বকে শ্রদ্ধা করল
কিন্তু তার কাছে ধর্ম ছিল না অন্ধবিশ্বাসের জন্য, আর জাতি ছিল না সীমানার জন্য

সে সমর্থন করল স্বাধীনতা আর সমতা
কিন্তু তার হাত ছিল অন্য হাতের সঙ্গে, আর হৃদয় অন্য হৃদয়ের সঙ্গে
সে প্রতিবাদ করল অধিকার ও মর্যাদার জন্য
কিন্তু তার কাছে লিঙ্গ ছিল না ভূমিকার জন্য, আর যৌনতা ছিল না লেবেলের জন্য

সে অনুপ্রাণিত করল কয়েক মিলিয়ন নারীকে
কিন্তু তার পিছনে ছিল দেবদূত, আর তার মাথায় ছিল পবিত্র আভা
সে তাদের স্বপ্ন দেখতে ও লড়াই করতে শক্তি দিল
কিন্তু তার কাছে মৃত্যুর জন্য ভয় ছিল না, আর জীবনের জন্য লজ্জা ছিল না

সে ছিল কষ্টের মেয়ে
সে ছিল আহতের যন্ত্রণা
সে ছিল হারিয়ে যাওয়া লোকদের শোক
সে ছিল একা মানুষের কান্নাকাটি।

মন্তব্য করুন