Skip to content

সময়ের অন্ধকারে – প্রসূন গোস্বামী

আজ তোমার চোখে দেখি শূন্যতার ছায়া, ইউনূস ভাই
তোমার হাতের মুঠোয় জমেছে
অসংখ্য প্রজাপতির ডানা।
কখনও তুমি ছিলে সবুজ আশার প্রতীক
কখনও মাইক্রোক্রেডিটের স্বপ্নদ্রষ্টা
কখনও নোবেল জয়ী মানুষটি
স্টকহোমের আলোয় তোমার নাম উচ্চারিত হয়েছিল
কিন্তু এখন শুধু অন্ধকার
তুমি নীলাভ আকাশের দিকে তাকিয়ে থাক।

ময়মনসিংহের গ্রামে তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম
ততদিনে তোমার স্বপ্নগুলো পাখা মেলেছে
বাংলার গ্রাম
তুমি তো ভালোই জানো, দারিদ্র্যের জালে আবদ্ধ
ওখানকার মানুষেরা বলে
গ্রামীণ ব্যাংক হলো শুধু একটা স্বপ্ন
তুমি নাকি
দক্ষিণের জেলায় একটা পুকুরের পাড়ে
গরিবদের স্বপ্ন ভাসিয়ে দিয়েছিলে।
এখনও সেই পুকুরের জলে
মা বাংলা কাঁদেন,
তখন গোটা দেশের মেয়েরা
গ্রামের বধূরা
ঋণের বোঝা নিয়ে কাঁদে
আর চোখ মোছে।

আগে তোমাকে ভালো লাগত, ইউনুস ভাই
কত রাত জেগে
দারিদ্র্যের গল্প শুনেছি
শুধু তোমার স্বপ্নের কথা ভেবে ভেবে।
সেই দিনগুলোয় হিজবুত তাহরির ছিল না
কী নির্মল ছিল সব
এক ডাকে সাড়া দিত
যে কোনও দরকারে ডাকলে
মানুষ একসাথে দাঁড়াত।
পরে বড় হয়ে দেখলাম
আনসারুল্লাহ’র ছায়া নামে
তোমার চারপাশে জমে উঠল কালো মেঘ
সব কিছু বদলে গেল।
আমি যদি তোমার সঙ্গে থাকতাম
নিষিদ্ধ করার আগে বলতাম
ভাই, এ পথ ভুল,
জঙ্গিবাদ মেনে নেওয়ার আগে আমি বলতাম
ফিরে এসো, ভাই, এখনও সময় আছে।

তুমি এবং তোমার সরকার
শুধু বাংলাদেশে নয়
সারা বিশ্বে হয়ে উঠলে প্রশ্নবোধক
গণতন্ত্র এল
স্বাধীনতা এল
এল উন্নয়নের স্বপ্ন
কিন্তু তুমি এবং তোমার নীতি এখনও
অতীতের ছায়া থেকে মুক্ত নয়।
ঢাকার রাজপথ থেকে চট্টগ্রামের গলি
তোমার দ্বিধাদ্বন্দ্বের সাক্ষী।

আগে তোমাকে ভালো লাগত, ইউনুস ভাই
দেশে জঙ্গিবাদ ঢুকে পড়ল
তুমি নীরবতা দিয়ে সাড়া দিলে
মরণফাঁদ তৈরি হল
তুমি চোখ বন্ধ করে রইলে
পাকিস্তান থেকে বীজ বুনে গেল
তারা এল রাজধানীতে
তুমি তোমার অন্তর্বর্তী সরকারের
ছায়ায় দাঁড়ালে, নীরবে দাঁড়ালে
অন্ধকারে গিয়ে দাঁড়ালে।

তখনও তুমি দাঁড়াতে
তোমাকে নিয়ে লেখা
সব প্রশংসার কবিতা
তুমিও পড়তে তখন
তোমার চোখেও জল আসত।

কিন্তু এখন তুমি আর
তুমি নেই, তুমি
নিষেধাজ্ঞাকে করছ অস্বীকার
সত্যকে করছ অগ্রাহ্য।
জঙ্গিবাদ নামে বিষবৃক্ষকে বলছ ফুলগাছ?
আমি বলব তুমিই ভুলের মূল
ইতিহাস তোমাকে যতই মহান বলুক
শান্তির দূত বলুক
আমার সংশয় আছে
ওরা যখন দেশে ঢুকল
তোমার বাধা দেওয়া উচিত ছিল।
রাজধানী থেকে শান্তি হারাল
গ্রামে গ্রামে ছড়াল ভয়
তবু তুমি চুপ করে রইলে
দেখলে শুধু।
সারা দেশ জুড়ে লেগে গেল আতঙ্ক
এই ভয়ের বীজ
তুমি উপড়ে ফেলতে পারবে, ইউনুস ভাই?

দারিদ্র্যের দিনগুলো ভুলে যেও না
তোমার স্বপ্নের ভুলের জন্য
মনে মনে তুমি নিজেকে ক্ষমা করোনি কোনও দিন
আমি জানি
নীরবতায় তোমার ভালো লাগে না
সেই অন্ধকার দিনগুলো তুমি স্মরণ করো
তারও চেয়ে কালো দিন
আমাদের সামনে, তোমার হৃদয় কাঁপছে না, ভয় করছে না
তোমার নামে বাংলাদেশে
হাজার হাজার মানুষের আশা
তারা মতিঝিলে, গুলশানে, বনানীর
পথে পথে হাঁটে
দিনান্তে ঘরে ফিরে যায়
ভয়ের আঁধারে বসে
তাদের মা প্রার্থনা করে।

সারা বাংলাদেশ জুড়ে
রাত আটটায় মসজিদের আজান ভেসে আসে
যে মানুষগুলো এখন
দুটো মুঠো ভাত নিয়ে বসেছে খাবে বলে
তাদের কে সন্ত্রাসী কে নিরীহ
সেটা তোমার দেখার কথা ছিল না

ইতিহাসের পাতায় তোমার নাম
যখন লেখা হবে
তখন যেন কেউ
কালি দিয়ে মুছে না দেয়।

মন্তব্য করুন