শ্রাবণ শুরু হয়েছে মাত্রই।
নগরীর দাড়কাকটাও-
চালতা ফুলের সুবাস নিয়েছে।
ভোর রাতের চোরা শিশিরও-
ছুঁয়েছে একটুখানি,
অস্পৃশ্যতা রাখেনি।
মেঘ গুঁড় গুঁড়- মেঘ গুঁড় গুঁড়
আকাশ ঢেকে যায়।
মুহুর্মুহু গন্ধ ফোটে,
ক্যাম্পাসে বকুল তলায়।
ঘোষনা এসেছে-
বন্ধু তোর মুখ হেসেছে।
দুপুরের তপ্ততায় পুড়তে হবে,
ঘামে ভেজা কদম নিয়ে দাড়াতে হবে,
বুকের ভেতরের সুর্যদয়কে-
ঢেলে দিতে হবে রাজপথে।
যতই হই নানান রঙ্গে,
যতই হই নিমগ্ন স্বমতে,
এক হতে হবে-
এই বাংলার সমতটে।
অনেক নিয়েছে ওরা,
দিতে পেরেছি যতটুকু নিঃশেষে।
সুখে দুঃখে হেসে হেসে,
চেষ্টা করেছি।
তবুও স্বৈরাচারের করাঘাতে-
পিছিয়ে পড়েছি।
বুকের জমিনে যে আন্দোলন ঘটে-
তার রঙ হয় লাল সবুজ।
দমিয়ে রাখা যায় না কভু,
দিগন্তে উদ্যত সুরুজ।
মুষ্টিবদ্ধ হাতে-
রক্ত ঝরা চোখে,
আহত দিনের অভিশাপ।
আগুনে আজ দিবো ঝাপ।
বের হয়েছি আমি আজ্রাইলের সাথে,
হাতে নিয়ে জান।
আত্মাহুতির কাফনে মুড়ানো-
বিপ্লবী প্রাণ।
ভয় থাকে না তাতে,
দাবি আদায়ের ঘাত প্রতিঘাতে-
বিপ্লবীর শরীর হয়ে ওঠে-
জীবন্ত পোস্টার, ব্যানার ও স্লোগান।
দেয়ালে দেয়ালে জাগরণী গান,
ন্যায্য দাবির আহ্বান,
পিচ ঢালা নদীর মতো-
বইতে থাকে ধমনী পূরে।
জনসমুদ্র জেগে ওঠে-
মিছিলের ঢেউ আছড়ে পরে,
সব ব্যারিকেড ভেঙ্গে চুরে।
শ্রাবণের এই শহরে,
কে বাঁধবে ঝড়ে পড়ার বাঁধ?
কে রুখবি তোরা-
আজন্ম শহীদ হওয়ার সাধ।
সেদিনের সেই নুর হোসেন-
আজ সাঈদ হয়ে এসেছে।
মানচিত্র প্রসারিত করে-
মৃত্যুর কোলে হেসেছে।
লড়াই লড়াই লড়াই হবে,
বাঁচার মতো বাঁচতে হবে,
যতক্ষন নিশ্বাস।
মা গো তোর কপাল ভালো,
জন্ম করে আলো,
ছেলে তোর হলো-
স্বদেশ মুক্তির লাশ।
গর্বে ভরা তারুন্য দিলাম,
রক্ত মাখা বন্ধুর শার্ট দিলাম,
রাজপথে রক্ত দিলাম,
মায়ের চোখের জল দিলাম,
বাবার স্বপ্ন বিসর্জন দিলাম,
রক্তে ভেজা কদম দিলাম,
চালতা ফুলের রঙ দিলাম,
বৃষ্টি ভেজা শহর দিলাম,
প্রেমিকার চোখে মৃত্যু দিলাম,
বকুলের গন্ধে কাফন দিলাম,
নিয়ন জ্বলা রাত দিলাম,
সুর্য ঢেলে ভোর দিলাম,
দাবি আদায়ে স্লোগান দিলাম,
রাজাকার হয়ে গেলাম।
বিঃদ্রঃ ২০২৪ সালের বাংলাদেশ, শ্রাবণ মাসে স্বৈরাচার সরকার ও দেশের সকল দুর্নিবাজদের বিরুদ্ধে, সারাদেশে আন্দোলনরত ছাত্ররা “রাজাকার” শব্দটা মেটাফোরিক্যালি নিজেদের স্লোগান (তুমি কে- আমি কে, রাজাকার- রাজাকার/ কে বলেছে- কে বলেছে, স্বৈরাচার- স্বৈরাচার) হিসাবে ব্যাবহার করে ও ক্ষমতাসীনদের ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ করে।
…………………………
২২ জুলাই, ২০২৪
মন্ট্রিয়াল, ক্যানাডা।