শত বর্ষ আগে ও পরে
——
রমেন মজুমদার,২৪/২/২০
(কবি গুরুর ১৪০০সাল এবং নজরুলের ১৪০০সাল কবিতা পড়ে)
প্রণত চিত্ত খানি শতবর্ষ আগে আর শতবর্ষ পরে
এখনো স্মরণ করি মোর চিত্ত খানি ভরে।
কবিবর! কবিদ্বয় ! হেন অনুরাগে ;–
জুড়াইলে প্রাণখানি আমাদের সিক্তের প্রভাগে !
তোমাদের দেয়া সুখ–দেয়া আশীর্বাদ !
লইনু দুলিয়া প্রাণে,মর্মে মর্মে রহে কতশত খাদ ;–
সেই প্রাণ সেই প্রকৃতি এখন দুলিছে দোলায়
মধ্যে ব্যবধান বয়ে যায় ক্ষয়েক্ষয়ে ভোরের প্রভায়!
কত দিন কত বছর ! বসেনি মিলন মেলায়
প্রাতঃ সুখ বুকে নিয়ে রহস্য দোলায়।
এখন যৌবন মনে ঘোমটা টানিছে ধরা নৰ ফাল্গুনে
তোমাদের দক্ষিণ-দুয়ার ছিল ভরা স্বপনে স্বপনে,
কোন স্বপ্ন চারী মোরে ডাকিছে স্বার্থের দ্বারে (!)
হে বসন্ত! আমার লোভাতুর প্রাণে দিতে নারে
সেই সুখ সেই প্রাণ আমাদের করে
তোমাদের শতবর্ষ পরে ।
যৌবন আবেগ বশে ধংশ লীলায় প্রকৃতির গন্ধ
আমাদের মাঝে ধরেছে অসুখে তার
স্বাদ হীন স্বার্থের নব নব দ্বন্দ্ব ।
উদাসীন প্রজাপতি ফিরে যায় প্রকৃতি ছেড়ে
চপল চঞ্চল বাঁচাল আমাদের ঘিরে
তোমাদের সেই শত বৎসর পরে।
আনমনে নিহারি তুলে–যৌবন বেদনা ভুলে,
জাগরিত প্রাণে নেই প্রেমের মুরতি
কেমনে রাখিব ধরে,সুরে সুরে বসন্ত স্মৃতি
শিথিল শয়ানে রাখি নিজ নিজ স্বার্থ সাকি
সব সুখ সব কৌশল প্রকৃতির ধারে
আজি হাতে শত বর্ষ আগে
নুইয়ে পড়েছে ভার তিক্ত অনুরাগে ।
সেই গান সেই প্রাণ সেই পুষ্পের মুরতি
এখনও বহিছে বাতাস উদাস হয়ে প্রাণন্তের রতি!
খুলিছে শিথিল দুয়ার–নেই হেথা স্বপন বাহার
গুমরি গুমুরি কাঁদে বিশ্বখানি উচাটন শিরে,
আমাদের বসন্ত শত বৎসর পরে (!)
কবরী অশ্রুজলে বেণী খসা ফুলদলে;–
ঝরিছে অবিরাম প্রেমের অভাবে
হে পূর্বসূরি !
কে লয় হরিয়া মোহ অভাবের তরে
তোমাদের শত বর্ষ পরে।
যদি যায় ঝরে–বসন্ত সমীরে কিংশুক বসন ভার
যাহা দিলে নিয়েছিলাম সব উপহার!
আজ দেখি চারিপাশে, ঘিরিয়াছে নাগপাশে
কবির কবীন্দ্র প্রভা সকলে লুটিছে !
আমাদের প্রাণখানি—স্বার্থের মহামণি !
যে যার মত করে প্রকৃতির অম্ব-বিম্বু ধরে
ভাগ করে মদালশা ফাল্গুন নীড়ে
আজি হতে শত বর্ষ পরে।
রবি কবি দিয়েছিলে আশীর্বাদ আমাদের করে,
আকুলি বিকুলি করে –লয়েছে অন্তর ভরে
যত ছিল সবটুকু –নজরুল শিরে,
সিক্ত স্বপন ছুঁয়ে বিহঙ্গের গান গেয়ে
চির কিশোর চির উজ্জ্বল নেই আজ ভরে।
কিশোরী লতার সুখ হইতেছে চুরি !
নতশিরে প্রণত নেই মন্দির ভরি !!
পৃথিবীর যৌবন সুখ, আমাদের যৌবনে অসুখ !
মোহ-স্বার্থে ছেঁয়ে গেছে ,সম্মান নেই বেঁচে !
অর্ধ শয়নে কাঁদি ঘুম হীন প্রাণে,
তোমাদের দেয়া দান কে রাখে কাহার সম্মানে ?
কেঁদে যায় বিভাবরী–কবির কলমে উগরী
শ্রান্তশীতল নিদ্রা,–কে করিল চুরি ?
একান্ত শিয়রে,
তোমাদের শত বর্ষ পরে ।
সেই পূর্বকালের প্রণয়ী বিরাগ
খণ্ডে খণ্ডে আজি হইয়াছে ভাগ সকলের তরে,
অলক কুসুম খানি কত বা তারে প্রণমি ?
ধীরে ধীরে যৌবন হইয়াছে পার !
ক্লান্ত বয়সে নেই,—সেই সমাহার ।
শোকে তাপে হারাইয়াছি কারে কত দিয়াছি
নাই তার স্মৃতি উপহার ,
নিজ্ঝুম মুকুলিকা–সব দেখি প্রহেলিকা
সহসা খোলে না দ্বার দক্ষিণ দুয়ার !
শত বর্ষের ভারে আজ চেতনা হয়না সমাজ
গোপন কুঠুরে,
তোমাদের দেয়া সেই আশীর্বাদ ধারে
আজি নেই শত বর্ষ –সিক্ত উপহারে
আমাদের করে
কতশত বছর পরে ।
এখন কতকথা মনে পড়ে কবির আশীর্বাদ
যায় বুঝি ধুয়ে মুছে সতত প্রবাদ !
স্নিগ্ধ চন্দন ফোঁটা–সব যেন কাটা কুটা ;–
কেন তুই করিলি দেরি বিপন্ন প্রহরে
আজি হতে শত বর্ষ পরে ?
নবরেণু পুষ্প বায় কেবা কাহারে শুধায় !
রিনিঝিনি বীণাখানি সুরেতে প্রলয় !
শুধু হীন বর্ষ যাপন, কঠিনের স্বার্থ প্রকম্পণ !
লয়ে যায় সবটুকু আমোদ বিভোর ;–
তবুও প্রণমি, কমল শতদল বিগলিত সুরে
যৌবন অভিশাপে—ক্ষয় দেখি ধাপে ধাপে
সুচেতন বংশ ধরে স্বার্থটুকু মাপে !
তবুও সহি প্রাণে নবীনের সন্ধানে জাগিয়া বসন্তে,
তোমাদের রাখা পটে ভাগ্যের দৈবাৎ ঘটে
তবুও আসে যায় বসন্ত সমিরে ;–
আজি এই অপূর্ণের কণ্ঠস্বর যায় বুঝি ছিঁড়ে ?
এখনও কবিতা লিখি,
কতটুকু কিবা শিখি ভবিষ্য প্রজন্ম তরে
আজি সেই শত বর্ষ পরে ?।।
বেলামন্দির,কলকাতা ।