মেয়েটি রজঃস্বলা হল আজ
আজ থেকে সে অশুচি,
আজ থেকেই সে খাঁচায় বন্দী
আজ থেকে সে ভ্রুকুটি।
মেয়েটি রজঃস্বলা হল আজ
আজ থেকে তুমি অশুদ্ধ,
আজ থেকে তুমি বন্দিনী
অন্ধকার ঘরে অবরুদ্ধ।
আজ থেকে তোমার বন্ধ খেলা,
দৌড়ঝাঁপ, হাঁটা-চলা,
আজ থেকে তুমি নারী হলে
আজ থেকে তুমি ঋতুমতী,
আজ থেকেই তোমাকে
হতে হবে সতী।
মেয়েটি রজঃস্বলা,
অশুচি কেন তবে!
অম্বুবাচীতে মা কামাখ্যাও
হন রজঃস্বলা
তবে এই সময়ে তার
পূজা কেন হবে?
মাটির নারীমূর্তিকে ভক্তি ভরে
করছো সবাই পূজো,
রক্ত-মাংসের নারী রজঃস্বলা
তারে অবমাননার পথ খোঁজো ?
তোমরা সবাই শাস্ত্রজ্ঞানে
অতি জ্ঞানী, বিদ্বান,
শাস্ত্র পড়ো, শাস্ত্র মানো
শাস্ত্র মেনে বিধান হানো,
মন্দিরে প্রবেশে রজঃস্বলাদের
নিষেধাজ্ঞা আনো,
তাদের অপবিত্র বলে দাও আখ্যা।
এই তোমাদের শাস্ত্রজ্ঞান ?
এই তোমাদের শিক্ষা ?
“মনুসংহিতা” য় উল্লিখিত শ্লোকগুলি
তবে কি তা মিথ্যে,
নাকি দেখেও না দেখার ভান
বিদ্বেষধারী চিত্তে।
শ্লোকগুলিতে আছে বলা
নারীরা তোমরা শোনো,
তোমরা যদি মানুষ হও
শ্লোকগুলিকে জানো।
“মৃত্তোয়ৈঃ শুধ্যতে শোধ্যং
নদী বেগেন শুধ্যতি।
রজসা স্ত্রী মনোদুষ্টা সন্ন্যাসেন দ্বিজোত্তমঃ।।
অদ্ভির্গাত্রাণি শুধ্যন্তি মনঃ সত্যেন শুধ্যতি।
বিদ্যাতপোভ্যাং ভূতাত্মা
বুদ্ধির্জ্ঞানেন শুধ্যতি।। ”
“মনুসংহিতা” র পঞ্চম অধ্যায়ে
সবই আছে বলা,
নারী তোমাদের এবার
এর অর্থ বোঝার পালা।
“শোধনীয় বস্তু মাটি দ্বারা
এবং নদী প্রবল স্রোতাবেগ দ্বারা
হয় শুদ্ধ,
নারী এমনকি দুষ্টা নারীও রজঃস্বলা হলেই
হয় শুদ্ধ,
জল দ্বারা দেহ শুদ্ধ
সত্য কথায় মন শুদ্ধ
বিদ্যা ও তপস্যার দ্বারা জীবাত্মা শুদ্ধ
এবং জ্ঞান দ্বারা বুদ্ধি শুদ্ধ। ”
শ্লোকগুলি কি তবে মিথ্যে !
জাগো নারী, জেগে ওঠো
অশুদ্ধি, অশুচি নাম কাটিয়ে
বেঁচে ওঠো, গর্জে ওঠো,
সেজে ওঠো প্রসন্ন চিত্তে।
পুরুষ যখন বর বেশী
নারী চান তারা অনাঘ্রাতা,
পুরুষশাসিত সমাজে
নারীই কেন তবে, ত্রাতা ?
রজঃস্বলা নারীর গর্ভেই
বয়ে আসে মাতৃত্বের স্বাদ,
তবে কেন, রজঃস্বলার পথে
অশুচি কাঁটার বাঁধ।