Skip to content

মনীষার বিবাহ বিচ্ছেদ – রমেন মজুমদার

মনীষার বিবাহ বিচ্ছেদ
——-(ছোটগল্প)
কলমে : রমেন মজুমদার
তারিখ : ০৭/০৫/২৩
—-
নয়নপুর গ্রামের মানুষের জীবনে অনেক কিছু স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কষ্ট – বেদনা,হাসি – কান্না ইত্যাদি।
তবুও যে কষ্টের সাগর পারি দিয়ে ওরা
গঙ্গাস্নানের মত শুদ্ধ হয়ে সমাজ জীবনে
নিষ্কৃতি পাবে সুস্থির থাকার জন্য,সে উপায় হয়তো একসময় থাকলেও; এখন নেই।

গ্রামের মানুষের প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জায়গা করে দিতে চেয়েছিল মনীষা,কিন্তু বিধি বাম এই যে,
মনীষার বিয়ের আঠাশ দিনের মাথায় ভাঙলো স্বামীর ঘর। সবকিছু জেনেশুনে কী আর মনীষা ঘর করতে রাজি হয় ?
স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে ছেড়ে এলো নয়নপুর।

একটি মেয়ে বলেই সকল প্রকার সমঝোতায় আসতে পারে, এ ‘ কথা বলা যত সহজ; ক্ষেত্র বিশেষ কী এক ঢালাও মেনে নিতে হবে,তেমন অন্য হলেও মনীষার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। মনীষা কেন কোনো নারীর পক্ষেই সেটা মানা যায়না।

নয়নপুর গ্রামের মানুষ আর মানুষ আছে যে তাদের প্রতি আনুগত্যের দয়া নিয়ে মানুষ বসে থাকবে (?) কথায় বলে ওরা ফাজিলের এক শেষ!
যৌবনের সোনাঝরা সময়টা কাজে লাগায় নষ্টের মধ্যদিয়ে। যে বাড়িতে যাও,
শুনতে পাবে কলঙ্কের দাগ লেগে আছে কোথাও না কোথাও…
তেমনি একটি পরিবার শ্রীমন্তের।
ওরা টাইটেল ব্যবহার করে দাস। দূর থেকে লোকে বলে দাস পরিবার নাকি খাস নষ্টের তালিকায়।
তিনভাইয়ের মধ্যে দুইভাই বিবাহিত হলেও ছোট শ্রীমন্ত দাস।
বড়ভাই কিছুদিন হয় পৃথক হয়েছে।
ওদের পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে একটু দূরে নিজেই আলাদা ঘরবানিয়ে সেখানে থাকে।
স্বামীহারা সরলাদেবী বাকি দুইছেলে নিয়ে স্বামীর ভিটেয় থাকেন।
মেজো ছেলে রাজা দাস বিবাহিত।ছোট শ্রীমন্ত এখনও বিয়ে করেনি।
দ্যাখ দ্যাখ করে শ্রীমন্তের বিয়ের বয়স ছুটে চলছে হুহু করে। শ্রীমন্তের মেজো দাদা রাজা দাস অতি সহজ সরল।স্ত্রী বিদুষী অত্যন্ত সুচতুর।
বলতে গেলে বিদুষীই সংসারের সর্বেসর্বা।
সে যে ভাবে চালায়,সেভাবেই সবাইকে ওঠবস করতে হয়।
শাশুড়ি মা এতদিন যা দেখে এসেছে,তার অনেক প্রতিবাদ করলেও মেজো ছেলেকে দিয়ে বউয়ের শাসন করাতে পারেনি। একদিন শাশুড়ি মা লজ্জায়,ঘৃণায় নিজের ঘর ছেড়ে মেয়ের বাড়িতে গিয়ে থাকতে শুরুকরে।
রাজা দাস অশিক্ষিত হলেও কপালের গুণে সুন্দুরি বউ জুটেছে তার।
শ্রীমন্ত দাস ছোটকাল থেকে লেখাপড়ায় ভালো।তাই সে বড় হয়ে ভালো পড়াশুনা করে একটি মোটা অংকে সরকারি চাকরী জুটিয়ে নিয়েছে।
শ্রীমন্তকে এতদিন বিয়ে দিতে পারত সবাই। একমাত্র বৌদির কারণে দেবরের বিয়ে থেমে আছে ।
দেবরের বয়স এখন চল্লিশের কোঠায়।
বিয়ের পর থেকেই বৌদি বিদুষীই দেবরকে ব্যাবহার করে আসছে।
সবাই বলে শ্রীমন্তের অলিখিত বউ বিদুষী।
পরকীয়ার স্বাদ পেয়েছে ওরা দুজনেই। চোখের সামনে এগুলো কি করে মা সহ্য করে,তাই সে মেয়ের বাড়িতে গিয়েই থাকতে শুরুকরে।
—-
মনীষার বিয়ের বয়স হয়নি।শ্রীচেহারা দেখেই নাকি শ্রীমন্তের জন্য কেউ প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।
আইনের চোখে মেয়ের বিয়ের বয়স হয়নি।
সবে ইন্টারে পড়ছে।
সরকারী চাকুরে ছেলে। মোটা বেতন। এগুলো দেখে মেয়ের মা লক্ষ্মী ছেলের বয়স বিচার না করেই মনীষাকে ওর হাতে তুলে দিল ।
যা হোক সামাজিক মতে বিয়ে হয়েগেল।
বিদুষী এতদিন শ্রীমন্তকে নিজের স্বামীর স্থানে রেখে ইচ্ছেমত ব্যাবহার করেছে। রাজা দাস অতি সহজ ও সরল।তাই সে গভীর জলে ডুবে দেখার সাহস করেনি কোনদিন।
আর গভীরে যে ডুব দিয়ে দেখবে রাজা,সে পথে যেতে দেয়নি স্ত্রী বিদুষী।
শ্রীমন্তের বেতনের সবটাই তুলে দিত বৌদির হাতে।আর্থিক ও যৌবনিক স্বাদ পেয়ে বিদুষী মরিয়া হয়ে ওঠে। এতদিন তারই জন্য শ্রীমন্তের বিয়ে হয়নি।
দেবরের ঔরসে একটি সন্তান নিয়ে রাজাকে বঞ্চিত করেছে পিতৃত্বের স্বাদ থেকে।
মনীষা নিতান্তই ছোট।পনের বছর বয়স।ওর মা লক্ষ্মী এক প্রকার মনীষাকে জোর করেই বিয়ে দিয়েছে ।
বিয়ে হয়ে স্বামীর ঘরে সেদিন বাসর রাতের এতটুকু নিয়মের মধ্যে মণীষা উপভোগ করবে,সেটা হতে দেয়নি বিদুষী।
সেই বাসর শয্যায় শায়িত হলেন পরকীয়া জনিত বৌদি বিদুষী।
মণীষা সেটা লক্ষ্য করেছে। বাসর রাতে মনীষাকে থাকতে দিয়েছে একা একা বাহির কাছারি ঘরে।
ছোট হলেও মণীষা সবটা বুঝতে পারল।কেঁদেকেটে মাকে সবকথা ফোনে জানিয়ে দিল।
পরদিন,সকলেই ছি ছি করতে লাগল।
কি রে বিদুষী,তুই মেয়েটাকে আজকের রাতটুকু দিতে পারতিস ।
সেদিন কঠোর প্রতিজ্ঞা করল মণীষা আর নয় এক মুহূর্ত !!!
মাকে দিয়ে সালিশি বসাল ।
শ্রীমন্তের বৌদি সেই কাজে ইন্ধন যোগালো ,দেবরকে দিয়ে মনীষার গায়ে হাত তুলল।
বিদুষী চাইছিল নামে বিয়ে হলেও আসল কামে তার জায়গায় মণীষাকে ঘেঁষতে দেয়া যাবেনা।
মণীষার বিয়ের মাত্র আঠাশ দিনের মাথায় বিয়ে ডিফোর্স হয়ে গেল।
আদতে লাভ হলো বিদুষীর।
—- শব্দ সাংখ্য -৬০৮
——–

মন্তব্য করুন