রান্নাঘরের উনুনে জল টগবগ করে ফুটছে,
তুমি চা ছেঁকে বললে, “ভারতে তো এখন হিন্দুত্বের চাষ
অপরাধ বটে!”
আমি হেসে বললাম, “তাহলে বাংলাদেশের মুসলমানেরা
ইসলামের চাষ করে কেন নির্লজ্জতায় পারদর্শী?”
কাঁচের জানালায় ভাঙা রোদ পড়ে টেবিলে—
নুনের শিশি আর ডালের কৌটো যেন চুপচাপ
প্রতিবাদের মিছিল করে বসে।
চায়ের কাপ থেকে ধোঁয়া উঠে আসে,
আমাদের কথাগুলো মিশে যায় সেই ধোঁয়ার ভাঁজে।
তুমি বললে, “মানুষের মাটি এত নরম কেন?
ধর্ম কি তার পায়ের তলা চুরি করে নেয়?”
আমি দেখলাম, বেড়ালটা মেঝেতে লেজ নেড়ে
তোমার দিকেই তাকিয়ে আছে,
তার চোখে যেন হিন্দুত্বের পায়রাগুলো উড়ে যায়।
আমরা উঠোনে এসে দাঁড়ালাম,
পাশের বাড়ির কুকুরটা মুখ তুলে চাঁদ দেখে ডেকে উঠল।
তুমি বললে, “কুকুরেরা কি কখনো কবিতা লেখে?”
আমি বললাম, “না।
কিন্তু মানুষের কবিতা কুকুরের মনের চেয়ে কম মানবিক,
এটাই বড় কথা।”
জোছনার আলোয় ভেজা কার্নিশে বসে থাকা কাক
ঘুম ভেঙে উঠে ডানাটা ঝেড়ে নিলো,
তুমি চুপচাপ দাঁড়িয়ে বললে,
“জোছনা কি কোনো ধর্ম জানে?
তাহলে ওরা কেন রাতের আকাশে ধ্বজা ওড়ায়?”
তোমার চোখে জ্বলজ্বল করছিল সেই প্রশ্নের আলোকছটা।
আমাদের হাতের মুঠোয় একটা ছেঁড়া খবরের কাগজ,
যেখানে লেখা ছিল,
“ধর্মের নামে আজ আবারও হানাহানি চলছে।
পোড়া ঘর, পোড়া মাটি, মানুষের পোড়া শরীর।”
তুমি বললে, “ঈশ্বর কি কেবল তাদের
যারা মারতে পারে বেশে?”
আমি কিছু বলিনি, কিন্তু অনুভব করলাম—
মাটির নীচে ফাটলগুলো যেন আমাদের পায়ের নিচে
বড় হয়ে উঠছে।
তবুও, দূরে ভোরের আলো ফুঁটে ওঠে।
তুমি বললে, “আকাশ ডাকে।
পাখিরা ডাকে। মিথ্যার জাল ছিঁড়ে
সত্যির আলোয় ভিজে যেতে ইচ্ছে করে।”
আমি বললাম, “একদিন ঠিক শ্রাবণের বৃষ্টি
মাটি ভিজিয়ে দেবে অবিরত।
সেই দিনই আমরা জানব—
মানুষের পরিচয় আর ধর্মের ফোঁটা নয়।
সত্য হোক, সৃষ্টির জয় হোক।”
তুমি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলে,
আর রান্নাঘরের উনুনটা ধীরে ধীরে নিভে গেল।