পার্বতী
—–( ছোটগল্প)
— রমেন মজুমদার
১৯/০৩/২০২৩
শব্দসংখ্যা -৫৭৮
—–
কাল সন্ধ্যায় একটি ফোন এলো,
অজানা অচেনা নম্বর।
কেটে দিলাম। — আবার ফোন । বিরক্ত হয়ে ধরলাম।
রাগত সুরে বললাম,কে ? কেন বারবার
ডিস্টার্ব করছেন ?
কে রমেন দা ?
উত্তরে বললাম,
–আপনি মানে, তুমি কে ?
আমি পার্বতী।
— কোন পার্বতী ? কোথাকার পার্বতী ?
— ওহ,আমি বুঝতে পারিনি যে,তোমার আরও পার্বতী থাকতে পারে (?)
— ইয়ারকী বা হেঁয়ালি না করে পরিষ্কার করে জানাও তুমি কোথাকার পার্বতী ?
আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা।
আমার ফেসবুক বান্ধবী আছে চারজন।
চার হাজার নয়শত পঞ্চাশ জনের ফ্রেন্ড লিস্টে পার্বতী চারজন।
— ভুল,ভুল!
আমি তার কোনটাই নই। আমি ফেসবুক চালাই না,যে তোমার বন্ধু তালিকায় আমাকে স্থান দিবে(!)
— মাইরি বলছি, ঠিক তোমাকে এখনও অবধি চিনতে পারিনি।
— চিনতে পারনি ?
এবার শুন….
কোন একদিন রামায়ণ গান শুনতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পরে যাবার পরে, কাউকে পাঁজাকোল করে কাদার ভিতর থেকে টেনে তুলছিলে।
আমরা ছিলাম পাঁচবোন প্রায় সব বোনেদের বয়স একদুই বছরের ফারাক।
আমি ছিলাম তিন নম্বর বোন।
আমার উপরের দুইবোনও কিন্তু তোমার প্রতি দূর্বল ছিল,মনে মনে ভালোবাসত। সাথে আমিও…
আমার নিচের দুই বোনেরা একটু একটু।
হায়রে কপাল!
চেনার ইচ্ছা থাকলে আগেই চিনতে।
বাবার অনুশাসন,চোখ রাঙানির কাছে আমরা ছিলাম পরাভূত।
আর তুমি(?)
আমাদের ত্রিসীমানায় ঘেঁষতে না,বাবার ভয়তে।
এই দ্যাখো, তখনকার দিনে না ছুঁয়ে,না ধরে যে ভালোলাগার উল্টো পাশে থাকে ভালোবাসা, একেই বলে প্রেম।
— এবার বলো, তাও চিনতেন পারলে না ?
–দাঁড়াও ।
আমাদের পাশের বাড়ির পার্বতী তুই ?
বল, কোথা থেকে ফোন করছিস?
আর এলিই বা কবে ?
— কাল সন্ধ্যা এসেছি।
ভরাট কণ্ঠে বলল,
সেইদিন ছিল আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখেরদিন।
হটাৎ পা ‘ পিছলে পড়ে গেলাম। বোনেরা হাউ হাউ করে ওঠল।
আর তুমি, আমাকে নোংরা কাদামাটি থেকে পাঁজাকোল করে টেনে তুললে।
তোমার বাম হাতখানা আমার অন্তর ছুঁয়েছিল সেদিন। নরম মাংসপিণ্ডের থলিতে সজোরে আটকে গেল তোমার বাম হাতের তালু। অবশ্য ইচ্ছা করে নয় ,সে আমি বুঝতে পারছিলাম। অনিচ্ছাতে হলেও আমি স্বর্গীয় সুখে ভাসছিল। তখন পায়ের ব্যথা অনুভব করিনি ।
বাড়ি ফেরার পরে বুঝলাম, আঘাতেও সুখ আছে। মৃত নদীরবুকে হটাৎ জোয়ার।
আকাশের নীলিমায় বসন্তের শুভেচ্ছা নিয়ে পাখিরা উড়ে বেড়ায়। সার্থক হয় বসন্তের।
সুতীক্ষ্ণ তির নিক্ষেপ জানে একমাত্র ব্যাধই। তার কৌশলগত মেধায় ঘা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে পাখি।
আহত পাখি তখন ব্যাধের কাছে আত্মসমর্পণ ব্যতীত কোন রাস্তা থাকেনা।
ঠিক,
তেমনি আমার দশা। মনের অজান্তে তোমাকেই সেদিন থেকে আরও গভীর ভালোবাসায় আটকে গেলাম আমার মনের ঘরে।
কোনদিন খোঁজ নাওনি। তোমার একটাই ভয় ছিল,আমার বাবার চোখ রাঙানি।
এই দ্যাখো,
আজও তোমার কথা ভুলতে পারিনি।
তাই ফোন করলাম।
তোমার সেই পার্বতীর রং চটে গেছে। পলেস্তানার আস্তর খসে বিবর্ণ হয়েছে সেই শ্রী।
বাবার ইচ্ছায় স্বামীর ঘরে গেলাম।একটি সন্তানের জন্মদিলাম।
কিন্তু দেহজ সুখে ভাসলেও মনের সুখে ভাসতে পারিনি।
মানুষের মনতো একটাই…
এটিকে ভাগ করি কী করে ? পুরোটাই দিয়েছিলাম,আজও ভাবি তুমি আমারই।
এবার বলো, বৌদি কেমন আছে ?
ফোনের মধ্যে অস্ফুট কণ্ঠ শুনতে পেলাম রেবার।
ও বলছে,জানিস!
বৌদি ইহ সংসারে আর নেই…!!!
দাদার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে এখন।
আমার কণ্ঠ রোধ হয়ে গেছে। ও প্রান্ত থেকে এক তরফা বলেই যাচ্ছে,
তুমি ক্যান এখানে এলে। দেশ ত্যাগ বড্ড করুণ!!
মাইকেলের জীবনী পড়েছে। ঘরের লক্ষ্মী ছেড়ে যায় অভাগারে ।
বলতে বলতে ওর চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে বুঝতে পারলাম।
রেবা বলছে,চোখ মুছে নে। তুই নিজকে সামলে নে।
দাদার কষ্ট বেড়ে যাবে। ভীষণ একারে বোন !! তুই একটু সান্ত্বনা দে দাদাকে।
আমি নির্বাক!
নিশ্চল আমার কণ্ঠস্বর!!
ও বলেই গেল,কাল তুমি একবার এসো।
তোমাকে একটু দেখব।
তোমার সেই পার্বতী আর সেই নেই…
স্বামী,সংসার থাকলেও হৃদয়টা কেবলই শূন্য!!!
সরি,দাদা।
আমি না জেনে তোমাকে কষ্ট দিলাম।বৌদি নেই প্রায় দু ‘ বছর হতে চলল।
মেজদিদিই বলল।
কিছুক্ষণ পরে বললাম, আগামী মাসে একবার যাবরে তোদের দেশে। তখন সময় পেলে একবার দেখা দিয়ে আসব।
রাত অনেক হয়েছেরে পার্বতী। আমাকে এখন রান্না করে খেয়ে শুতে শুতে বারটা বেজে যাবে।
তুই ভালো থাকিস।
তখন দুই প্রান্ত থেকেই ফোনের কল বন্ধ হয়ে গেল।।
— সমাপ্ত