তুমি তো আমাকে এমন নিঃসঙ্গ দেখোনি,
আমি জানি এই আয়ুরেখা ধরে এভাবে হেঁটে গেলে
দিন শেষে থাকবে শুধুই অসহ্য ক্লান্তি
দিগবিদিকে সবকিছু আমায় সামলে রাখবে
নিমজ্জিত মন স্থির।
আমি জানতাম হাত ছুটে যাওয়ার ছিল,
নাকছাবি হারানোর কথা ছিল,
বাড়ি ঘর দোর ভাঙার ছিল।
আমি জানতাম
পথের শেষটা কান্নায় ভাঙা ছিল,
পাথুর জলে হোঁচট ছিল
ছিল আবেদন আকুল।
এক চালনির মত হৃদয়ে
সকল সুখের গুঁড়ো
টুপটাপ ঝড়ে যায় তোমার দিকে,
আমি বয়ে আনি নিঃসন্দেহে নিঃসঙ্গতা
মাথা উঁচু করে আমি হাঁটি না তোমার কিংবা আমার দিকে
আমি শুধু হৃদস্পন্দনের মত নিজের চলে যাওয়া দেখি,
এমন এক ঘোর খেলা করে চলে আমার হৃদয়ে।
তুমি অযৌক্তিক হৃদস্পন্দনের মতোই সজীব।
গহীনের খবর কেউ জানে না,
কবরের খবর কেউ রাখে না,
শুধু কিছু কিট পতঙ্গ আর শেয়াল ছাড়া।
তোমাকে ছাড়া চেনা দুঃখগুলোয় একটু বেশি জ্বালা ধরায়,
প্রাপ্তির জৌলুস খানিক ফিকে লাগে,
সম্ভাবনা কিছু অস্পষ্ট লাগে।
এই অম্লান অন্ধকারে
পথ ভুলে উড়ে আসে কিছু নিহত জোনাকি
বিদ্ধস্ত কিছু নিস্তব্ধতায়
খানিক লালচে সন্ধ্যায়
রক্ত কিছুটা আকাশে
কৃষ্ণচূড়ায় থমকে যায়।
তারপর আসে নিথর নিশিথ,
স্তব্ধতায় বীতশোক অতীত।
আমি খুব মুগ্ধতা নিয়ে মানুষ দেখি,
কিন্নরী হাসির আবেগে ঝরে যায় দু-একটি সোনালু ফুল,
ঘাসের পোকার পেছনে সারল্য শিশুর আঙুল,
সিঁথিতে দাঁতরাঙার রেনুর আলপথ,
ধ্রুপদী মুদ্রায়।
তখন তোমায় মনে পড়ে,
জানলার ভেতর থেকে আসা অসহ্য আলোর মতন
গোপন দহনের মতন,
হেক্সিসলের আর্তনাদের মতন,
নরম চেনা আঁচরের মতন।
জীবনের ব্যাপ্তি কী তাহলে এইটুকুই?
তোমার প্রস্থান পর্যন্ত!
এই আকুল হারানোর মৌসুমে
প্রাপ্তি কী এইটুকুই?
সব কী তবে সেই ফিরে ফিরে আসা
মহাশূন্যের ভেতর অলৌকিক কেন্দ্রবিন্দুর কাছে?
স্থুলতার সন্ধানে কেবল ক্রমশ নগন্য হয়ে ফিরে আসা?
স্থলের সন্ধানে সেই অতল গহন,
যার ভেতর কোন আশ্রয় নেই।
এই! তবে এই!
এই শূন্যতা যা সব টেনে নেয়,
এই নির্লজ্জ উৎসব কী পার্থিব হয়ে ওঠার কোন এক দিশেহারা নাবিকের?যে মাঝে মাঝে নিঃসঙ্গতায় একটা মৃত তারা খোঁজে? ক্লান্ত আঙুলে মৃত নদীর মতন কোন আসমানী ঢেউ খোঁজে?
কে তবে আলেয়া?
কীসের এই জাগরণ?
কেন ভাঙে ঘুম অবেলায়,
কেন স্বাদ বদলে যায়, বিদ্রোহ থেমে যায় প্রেমবৈচিত্তে?
কোথায় কোন ঘাসে কে শুয়ে থাকে?
কেউ কী জেনেছে কোথায় সেই দিগন্তরেখা, কোথায় বা সেই মাঠ?
কেউ কী জেনেছে কোথায় সেই আস্তাবল, কোথায় খেলা করে শক্তি?
এই সব আদিম সমর পুরোনো পাপকে জন্ম দেয়,
অরণ্যের হারিয়ে যাওয়া কী খুব স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্র নয়?
শাপমোচন কীসে হয় বলো?
এসব বোধ ঠিক স্পষ্ট নয়,
নির্লিপ্ততা এখনো ঠিক বাজারি নয়।