Skip to content

দুটি প্রবন্ধ – বিচিত্র কুমার

(০১)
কাশফুলের রাজ্যে নির্মলতা খোঁজার পাঠ
-বিচিত্র কুমার

শরতের আকাশ যখন সাদা তুলোর মেঘে ঢেকে যায়, তখন পৃথিবীর বুক জুড়ে কোথাও এক নরম ধূসর আলো ছড়িয়ে পড়ে। এই আলোয় প্রকৃতি যেন আপন মনে তার অন্তর্নিহিত নির্মলতাকে প্রকাশ করে। কাশফুলের রাজ্য সেই নির্মলতার প্রতীক, যেখানে জীবন নিজেকে খুঁজে পায় নিঃশব্দতার গভীরতায়, সরলতার স্বচ্ছতায়। “কাশফুলের রাজ্যে নির্মলতা খোঁজার পাঠ” মানে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা নয়, বরং জীবনের মণিকোঠায় জমে থাকা অস্থিরতা ধুয়ে ফেলার এক নিঃশব্দ অনুশীলন।

আধুনিক সভ্যতার কোলাহল, প্রতিযোগিতার দহন, লোভ আর বিভেদের গহ্বরে মানুষ দিন দিন ক্লান্ত। সে খুঁজে ফেরে কিছু নির্মল মুহূর্ত, যেখানে সে নিজের সঙ্গে কথা বলতে পারে। অথচ সেই নির্মলতাকে খুঁজতে হয় দূরে নয়, বরং কাছের কোন সরল দৃশ্যে, কাশবনের দোলায়। কাশফুলের রাজ্য যেন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রকৃত নির্মলতা বাহ্যিক অর্জন নয়, এটি অন্তরের উপলব্ধি।

কাশফুলের জীবনচক্র আমাদের শেখায় নিঃশব্দে বেড়ে ওঠার শিক্ষা। তারা ফুল ফোটে নিস্তব্ধতা নিয়ে, ঝরে যায় অভিমানহীনতায়। তাদের জীবনজুড়ে নেই কোনো দম্ভ, নেই আত্মপ্রচার। মানুষ যখন অহংকারের ভারে ভারাক্রান্ত, তখন কাশফুল তাকে বিনয়ের শিক্ষা দেয়। মানুষের মনে এক অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয় অহংকার, লোভ আর মোহের দ্বারা; সেই দেয়াল ভাঙার জন্য প্রয়োজন প্রকৃতির কাছে ফেরা, প্রয়োজন কাশফুলের নির্মল রাজ্যে নিজেকে খোঁজার।

শরতের দুপুরে কাশবনে দাঁড়িয়ে যখন বাতাসের মৃদু দোলায় দুলে ওঠে লক্ষ লক্ষ সাদা ফুল, তখন তারা যেন মৌন ভাষায় বলে—জীবন কেবল সংগ্রহের নয়, কিছু হারানোর মধ্যেও রয়েছে নির্মল আনন্দ। আমাদের জীবন যাত্রায় প্রতিদিন যা হারিয়ে যায়, তাকে আমরা শোক হিসেবে দেখি; অথচ প্রকৃতি বলে—হারানো মানে নতুন করে পাওয়া। কাশফুল ঝরে যায়, আবার ফিরে আসে। আমাদের জীবনেও প্রতিটি পতনই প্রস্তুতি হয় নতুন উত্থানের।

নগর সভ্যতার যান্ত্রিক জীবনে মানুষ যখন ক্লান্ত, তখন কাশফুলের রাজ্য তাকে আহ্বান জানায়—“এসো, কিছুক্ষণ থামো, শোনো বাতাসের ভাষা।” আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট উদ্বেগ, অহেতুক ব্যস্ততা, তাৎক্ষণিক অর্জনের দৌড়ে আমরা ভুলে যাই, জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য কোথায়। কাশবনের সেই নির্মল বাতাস, সাদা দোল খাওয়া ফুলগুলো যেন মানুষের হৃদয়ে জমে থাকা ক্লেদ ধুয়ে নিয়ে যায়।

কাশফুলের রাজ্যে হাঁটতে হাঁটতে মানুষ অনুভব করে, সত্যিকারের সুখ কোনো বাহ্যিক উপকরণে নয়, বরং অন্তরের প্রশান্তিতে। যেখানে নেই অহংকার, নেই অতিরিক্ত চাহিদা, নেই অন্যের সঙ্গে তুলনার বিষ। আধুনিক মানুষ সুখকে যত বাহিরে খুঁজেছে, তত দূরে সরে গেছে তার অন্তর্গত নির্মলতা থেকে। কাশফুলের রাজ্য তাই শিক্ষা দেয়, “অন্তরে শান্তি আনো, বাহির আপনিই সুন্দর হয়ে উঠবে।”

কাশফুলের জীবন আমাদের আরেকটি গভীর শিক্ষা দেয়—সহিষ্ণুতা। শরতের খর রোদ, কখনো ঝড়ো বাতাস, আবার কখনো ভারী বৃষ্টিতেও তারা মাথা নোয়ায় না। তাদের কোমলতা কোনো দুর্বলতা নয়; বরং সেটাই তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। মানুষও যদি কাশফুলের মতো নম্র হয়ে উঠে, তবে জীবন তার কঠিন বাস্তবতাকেও সহজ করে নেয়। আমাদের অহংকার, রাগ আর হিংসার আবরণ ভেদ করে কাশফুল শেখায়, “সহিষ্ণুতাই সত্যিকারের শক্তি।”

প্রকৃতির এই মৌন শিক্ষা মানুষকে আত্মবিশ্লেষণের পথে নিয়ে যায়। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় আমরা ভুলে যাই নিজেদের প্রশ্ন করতে—“আমি কি চাই?”, “কেন এত তাড়া?”, “কোথায় যাব?” কাশফুলের রাজ্যে দাঁড়ালে মনে হয়, আসলেই কি এত দৌড়ের প্রয়োজন ছিল? জীবনকে সহজ, সরল আর নির্মল করে তুলতে হলে প্রয়োজন হৃদয়ের প্রশান্তি।

কাশফুলের রাজ্য তাই কেবলই সৌন্দর্যের নয়, এটি আত্মিক বিশুদ্ধতার পথও বটে। এখানে দাঁড়িয়ে মানুষ উপলব্ধি করে, সত্যিকারের নির্মলতা আসে নিজেকে জানার মধ্য দিয়ে, নিজের দুর্বলতাকে মেনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে। কাশফুল আমাদের শেখায়, “তুমি যেমন, তেমনই সুন্দর; তোমার অস্তিত্বই যথেষ্ট।”

মানুষের মন থেকে বিভেদ, লোভ, অহংকার সরিয়ে দিলে, তার জীবন নিজে থেকেই নির্মল হয়ে ওঠে। কাশফুলের রাজ্যে যে নির্মলতা মানুষ খোঁজে, তা সে নিজের মনেই পেতে পারে, যদি সে নিজেকে একটু সময় দেয়, একটু থামে, একটু শোনে প্রকৃতির নিঃশব্দ আহ্বান।

কাশফুলের নরম দোলের মধ্যে যে প্রশান্তি, তা কোনো শব্দে বলা যায় না। এটি অনুভবের বিষয়। ঠিক তেমনি, মানুষের জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্যও উপলব্ধির জিনিস, বাহ্যিক প্রদর্শনের নয়। কাশফুলের রাজ্যে নির্মলতা খোঁজার পাঠ মানুষকে শেখায়, কিভাবে নিজের ভিতর থেকে শান্তি আহরণ করতে হয়, কিভাবে অন্তরের আভিজাত্যকে ফিরে পেতে হয়।

আজকের দিনে যখন মানুষ অস্থিরতার দাস হয়ে উঠেছে, তখন এই পাঠ আরো বেশি প্রয়োজন। কাশফুলের রাজ্যে ফিরে যাওয়া মানে শুধু প্রকৃতিতে ফেরা নয়, বরং নিজের আত্মার কাছে ফেরা। আমাদের ভিতরে যে শিশুটি হারিয়ে গেছে, যে সহজ সরল অনুভূতিগুলো মুছে গেছে—কাশফুলের দোল সেই সব অনুভূতিকে জাগিয়ে তোলে।

এই নির্মলতা খোঁজার যাত্রা কঠিন নয়, কেবল প্রয়োজন একটু ধৈর্য, একটু অনুভব, আর প্রকৃতির কাছে নত হওয়া। মানুষ যখন প্রকৃতির কাছে মাথা নোয়ায়, তখন প্রকৃতি তাকে তার নিজের সত্যিকারের চেহারা দেখিয়ে দেয়। সেই চেহারায় নেই কোনো মুখোশ, নেই কোনো ভান, কেবল নিখাদ নির্মলতা।

কাশফুলের রাজ্যে নির্মলতা খোঁজার পাঠ শেষ হয় না। প্রতিবার সে ডাকে নতুন ভাবে ফিরে আসতে, নতুন করে শিখতে। জীবনের প্রতিটি ধাপেই এই পাঠ প্রয়োজন। মানুষ যতবার হারিয়ে যাবে, কাশফুল ততবার তার হাত ধরে তাকে ফিরিয়ে আনবে নিজের কাছে।

কাশফুলের রাজ্য তাই নিছক কোনো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা নয়; এটি এক ধ্রুব দর্শন, যা মানুষের জীবন দর্শনকেও নির্মল করে তোলে। এখানে মানুষ শেখে কিভাবে নিজেকে ভালোবাসতে হয়, কিভাবে অহংকারের ভার নামিয়ে রাখতে হয়, কিভাবে সহজ, সরল এবং নির্মল হয়ে বাঁচতে হয়।

শেষ কথা, কাশফুলের রাজ্যে নির্মলতা খোঁজার পাঠ আমাদের মনে করিয়ে দেয়—জীবনের প্রকৃত সার্থকতা বাহ্যিক অর্জনে নয়, বরং হৃদয়ের বিশুদ্ধতায়। যে মানুষ এই নির্মলতাকে অনুভব করতে পারে, তার কাছেই ধরা দেয় জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য।

(০২)
শরতের ক্ষণিক সৌন্দর্য ও জীবনের অস্থায়িত্ব
-বিচিত্র কুমার

শরতের আকাশ যেন এক মহাকাব্যের উদ্বোধনী অনুচ্ছেদ, যেখানে প্রতিটি মেঘের রেখা, প্রতিটি কাশফুলের দোল, প্রতিটি হালকা বাতাসের স্পর্শ—সবকিছু মিলে জীবনের এক গভীর দর্শন ছড়িয়ে দেয়। এই শরৎকাল প্রকৃতির সেই আবহ যা আমাদের জানিয়ে দেয়, সৌন্দর্য চিরস্থায়ী নয়, সমস্ত কিছুই এক অদ্ভুত নিয়তির স্রোতে ক্ষণস্থায়ী। ঠিক যেভাবে কাশফুলের রাজ্যে নির্মলতা খোঁজার পর মুহূর্তেই দেখা যায়, একটি বাতাস এসে তাকে এলোমেলো করে দিয়ে যায়।

মানুষের জীবনও কি তাই নয়? ক্ষণিকের জন্য আমরা যা কিছু সুন্দর, যা কিছু নির্মল তা নিয়ে গর্ব করি, ভালোবাসি, আঁকড়ে ধরতে চাই। কিন্তু সময়ের প্রবল স্রোত তা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। শরতের মেঘের মতোই আমাদের জীবনের মুহূর্তগুলো আসে ও চলে যায়, রেখে যায় শুধু স্মৃতির পাতায় অঙ্কিত কিছু অস্পষ্ট রেখা। এই অস্থায়িত্বই জীবনের প্রকৃত সত্য।

শরতের কাশবন যখন দুলতে থাকে, তখন মনে হয় পৃথিবীতে আর কোনো দুঃখ নেই। কিন্তু সেই দোলের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে একদিন ঝরে পড়ার পূর্বাভাস। শরতের আকাশ যখন নির্মল নীল, তখনই তার বুকের মধ্যে জমে ওঠে বিদায়ের সাদা মেঘ। মানুষও ঠিক তেমনই, সুখের মুহূর্তে অজান্তেই ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার ছায়া লেগে থাকে। জীবন আমাদের শেখায়, কিছুই চিরস্থায়ী নয়, তবে সেই ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলোকেই ভালোবাসতে শেখা উচিত।

একটি শরতের সকাল যেমন হঠাৎ করেই মেঘলা হয়ে যায়, মানুষের জীবনও তেমনি। আমরা কখনোই জানি না আগামীকাল কী অপেক্ষা করছে। হয়তো আজ যাকে আমরা ভালোবাসি, আগামীকাল সে থাকবে না; আজ যেটা নিয়ে আমরা অহংকার করছি, আগামীকাল তার কোনো মূল্য থাকবে না। জীবন তার নিজস্ব গতিতে চলে, সেখানে কোনো কিছুই স্থির নয়।

শরতের মধ্যে রয়েছে এক ধরনের নীরব বেদনা। এই বেদনা নিঃশব্দে আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রকৃত সৌন্দর্য হলো সেই যা ক্ষণস্থায়ী। শরতের পাতা ঝরার শব্দ যেন বলে, ‘যা কিছু আজ আছে, তা কাল থাকবে না।’ এই উপলব্ধি আমাদের অহংকারকে ভেঙে দেয়, নম্র হতে শেখায়, এবং আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে বাঁচতে শেখায়।

জীবনের অস্থায়িত্ব আমাদের শেখায় প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্য দিতে। শরতের পাখির মতোই আমাদের গাওয়া উচিত সেই গান, যা শুধু এই মুহূর্তের জন্য। কালকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার সময় নেই, কারণ কালকে আমাদের হাতের বাইরে।

শরতের প্রকৃতি মানুষের জীবনের প্রতিচ্ছবি। যেমন শরতের সাদা মেঘ আকাশে ভাসে কিছুক্ষণ, তেমনি মানুষের জীবনও সময়ের নিরিখে একটুখানি অতিথি মাত্র। এই অতিথি জীবনকে অর্থবহ করতে হলে, আমাদের উচিত প্রতিটি মুহূর্তকে পূর্ণভাবে বাঁচা, প্রতিটি সম্পর্ককে ভালোবাসা, প্রতিটি ক্ষুদ্র সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করা।

অনেক সময় আমরা ভাবি স্থায়ীত্বেই নিরাপত্তা, চিরন্তনতাতেই সুখ। কিন্তু শরৎ আমাদের শেখায়, যে সৌন্দর্য স্থায়ী নয়, সেই সৌন্দর্যই সবচেয়ে মূল্যবান। কারণ সেই সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করার জন্য আমাদের চেতনাকে জাগ্রত থাকতে হয়। আমরা জানি, শরতের কাশবন বছরজুড়ে থাকে না, তাই সে যখন থাকে, তখন তার প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর হয়।

জীবনের অস্থায়িত্ব একধরনের আশীর্বাদও বটে। যদি সবকিছু স্থায়ী হতো, তবে আমাদের অনুভূতিগুলো এত তীব্র হতো না। আমরা যেমন শরতের শেষ বিকেলের আলো দেখে মুগ্ধ হই, ঠিক তেমনই জীবনের ক্ষণস্থায়ী মুহূর্তগুলো আমাদের অনুভূতির শিখরে পৌঁছে দেয়।

প্রকৃতপক্ষে, জীবনের আসল সৌন্দর্য এই অস্থায়িত্বেই। আমাদের প্রতিটি হাসি, প্রতিটি অশ্রু, প্রতিটি ভালোবাসা, প্রতিটি বিচ্ছেদ—সবই মূল্যবান কারণ তারা চিরস্থায়ী নয়। শরতের মতোই তারা এসে আমাদের জীবনের পৃষ্ঠায় একেকটি কবিতা লিখে রেখে যায়।

অস্থায়িত্বের মধ্যে লুকিয়ে থাকা এই গভীর সৌন্দর্য আমাদের শেখায়, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে। কারণ আজ যা আমাদের কাছে আছে, তা কালকে থাকবে কিনা আমরা জানি না। এই উপলব্ধি আমাদের বিনয়ী করে তোলে, আমাদের সম্পর্কগুলোকে আরও গভীর ও অর্থবহ করে তোলে।

শরতের সৌন্দর্য যেমন কোনো এক বিশেষ দিনের জন্য সংরক্ষিত নয়, তেমনি জীবনও শুধু ভবিষ্যতের জন্য নয়। বর্তমান মুহূর্তই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় উপহার। এই মুহূর্তকে কীভাবে আমরা মূল্যায়ন করি, সেটাই নির্ধারণ করে আমাদের জীবনের গুণমান।

শরতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের শেখায়, জীবনের সুখ কোনো বড় অর্জনের মধ্যে নেই; বরং তা লুকিয়ে আছে ছোট ছোট মুহূর্ত, ছোট ছোট ভালোবাসা, ছোট ছোট অনুভূতির মধ্যে। আমরা যখন প্রকৃতির ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্যকে অনুভব করি, তখনই বুঝতে পারি, জীবনের আসল মূল্য কোথায়।

জীবনের অস্থায়িত্ব আমাদের প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেয়, আমরা সময়ের মধ্যে বন্দি। কিন্তু এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসীম সম্ভাবনা। যতদিন আমাদের হাতে সময় আছে, ততদিন প্রতিটি মুহূর্তকে অর্থবহ করে তোলা আমাদের দায়িত্ব।

শরতের আকাশের মতোই আমাদের জীবনও অনিশ্চয়তায় ভরা। কিন্তু এই অনিশ্চয়তাই আমাদের শিখায়, কিভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষণকে পূর্ণতা দেওয়া যায়। আমাদের উচিত এই অস্থায়িত্বকে ভয় না পেয়ে বরং তাকে আলিঙ্গন করা, তাকে ভালোবাসা। কারণ এই অস্থায়িত্বই আমাদের জীবনের রঙ, আমাদের অনুভূতির গভীরতা, আমাদের অস্তিত্বের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য।

শরতের ক্ষণিক সৌন্দর্য ও জীবনের অস্থায়িত্ব আমাদের শেখায়, জীবন একটি চলমান নদী। সেই নদীর স্রোতে কখনো আমরা সুখের দ্বীপে পৌঁছাই, কখনো আবার দুঃখের ঘূর্ণিতে পড়ি। কিন্তু এই যাত্রাটাই আসল। স্থায়ীত্বের খোঁজে আমরা যেন সেই চলমানতাকে ভুলে না যাই। বরং এই পরিবর্তনশীলতাকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ পাঠ হিসেবে গ্রহণ করি।

শেষ পর্যন্ত, শরতের মতোই আমাদের জীবনও এক মহাকাব্যিক ক্ষণস্থায়িত্ব। সেই ক্ষণস্থায়িত্বের মধ্যেই লুকিয়ে আছে প্রকৃত সৌন্দর্য, প্রকৃত উপলব্ধি, এবং সবচেয়ে বড় শিক্ষা—’এখন’ ই হচ্ছে আমাদের আসল সম্পদ।

এই উপলব্ধিই আমাদের জীবন দর্শনকে আরও গভীর ও সার্থক করে তোলে।

নামঃ বিচিত্র কুমার
গ্রামঃ খিহালী পশ্চিম পাড়া
পোস্টঃ আলতাফনগর
থানাঃ দুপচাঁচিয়া
জেলাঃ বগুড়া
দেশঃ বাংলাদেশ
মোবাইলঃ 01739872753

https://www.facebook.com/profile.php?id=100014642137028&mibextid=ZbWKwL

মন্তব্য করুন