দীপিকার পালা বদল
———-ছোটগল্প
——–রমেন মজুমদার ৩১/৭/১৯
ত্রয়োদশীর আধ ভাঙা পূর্ণিমার মধ্য নিশিতে
যে কন্যার জন্ম হয় সে নাকি দুইটি পথের অনুসারী হয়ে জগৎ সংসারে আসে।
এক,হয় কুলাটা ! দুই ,না হয় দেবী !
…..এমন আওড়ানো বুলি কোনো এক জ্যোতিষী বলেছিলেন দীপিকার জন্মের সময়।
বিত্ত বৈভবে পরিপূর্ণ রামচন্দ্রের স্ত্রী জাহ্নবীর গর্ভের প্রথম সন্তান দীপিকা তার কোল আলো করে সংসারে পদার্পণ করলো।
সংসারে কোনো কিছুর অভাব নেই রামচন্দ্রের। তাই অনেক টাকা ব্যয় করে কেন্দ্রীয় কলেজিয়েট স্কুলে দীপিকাকে ভর্তি করে দিয়ে এলেন ।
বাবার একমাত্র সন্তান দীপিকা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো—–
শরীফ কাকা মানে শরিফুল হালদার প্রতিদিন তাকে গাড়িতে করে স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে আসেন।
দীর্ঘ দিনের পুরানো গোমস্তা শরীফ, রামচন্দ্রের বাড়িতে কাজ করেন। গাড়ি চালানো থেকে
বাড়ির বাজার ঘাট পর্যন্ত শরীফের দ্বারাই সম্পন্ন করেন মধ্যবিত্ত জমিদার
রামচন্দ্র আচার্য ।
আদুরে কন্যার জন্য যখন যা চায় তখন তাই
এনে দেন রামচন্দ্র । কোনো কিছুর আবদার সে অপূর্ণ রাখেনা । পিতা হিসাবে রামচন্দ্র
গর্বিত। তবুও একটা সংশয় তার মনের মধ্যে রয়েই গেছে। সেটা হলো জ্যোতিষীর কথা।
তবে সে কন্যাকে দেবী হিসাবেই মান্যতা দিয়ে
নিজের কন্যাকে স্নেহ করেন।
আজ দীপিকা স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থান নিয়ে সারা পূর্বপাকিস্থান থেকে চতুর্থ হয়ে পরীক্ষায় পাশ করেছে।
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য রামচন্দ্র দীপিকাকে ঢাকা কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়ে এলেন। দীপিকা হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করেন।
ওদিকে শরীফের পুত্র টেনেটুনে বি এ পাশ করেছে নোয়াখালী কলেজ থেকে। সেও রামচন্দ্রের দয়ায় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এম এ ক্লাসে ভর্তি হয়েছে—-
শরীফের পুত্র আরিফ
সে বেশির ভাগ সময় রাজনীতির মাঠ চষে বেড়ায়—-
তার রক্তে আন্দোলনের বাতাস বইতে লাগলো।
১৯৪৮-৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন কানুন দারুন ভাবে কড়াকড়ি করা হয়। এবং
তখন ২৭ জন ছাত্র ছাত্রীকে বহিস্কার করা হলে তার মধ্যে আরিফ একজন । পরে তারা
জরিমানা ও ক্ষমা চেয়ে সেই আদেশ হতে মুক্তি লাভ করলেও একমাত্র শেখ মুজিব ক্ষমা চাইলেন না—-
তখন পূর্বপাকিস্থান চরম দুর্ভিক্ষ শুরু হলে
একটা অশান্তির বাতাবরণ শুরু হয়
আন্দোলনের মাধ্যমে।
১৯৬০ সালে সামরিক আইন জারি হলে শুরু হয় চরম আন্দোলন। সেই সময় বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করেন আইয়ুব খান।
তখন থেকেই আরিফ ও দীপিকা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজপথে—-
দীপিকা তখন রোকেয়া হলে থেকে পড়াশুনা করেন অনার্স নিয়ে।
তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য রাস্তায় দুর্বার আন্দোলনে সামিল হলো হাজার হাজার ছাত্রলীগের মিছিলে।
আরিফ ও দীপিকা রাজপথে আন্দোলন করার সময় থেকে দুজনের মধ্যে একটা
নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়ে উঠলো।
তার পরে গড়িয়ে গেল অনেক পদ্মার জল।
অনেকে রাজপথ থেকে বন্দী হয়ে জেলের ঘানি টানতে লাগলো।
অনেক রক্ত ঝরে গেলে ঢাকার রাজপথে,
তখন পুনরায় শেখ মুজিবকে আগরতলার
ষড়যন্ত্র মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি করলো পাকিস্তান সরকার।
সে সময় পার্টির নেতা কর্মীদের মধ্যে শতশত মানুষ আটক করা হলে
দীপিকা ও আরিফ দুজনেই কারাগারে বন্দি হন।
তারপর একদিন তারা মুক্তি পেয়ে আজিমপুর ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে গিয়ে মৌলিভির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করেন।
রামচন্দ্রের কতদিনের আশা আকাঙ্খা সবই বিফলে বিবর্জিত হলো।
তিনি জ্যোতিষীর কথাকে মান্যতা দিয়ে নিজের মনের আসন থেকে দেবীকে সরিয়ে
দিয়ে দীপিকাকে কুলাটা বলে আখ্যা দিয়ে
তিনি ঘরে চলে গেলেন।
পরদিন সকালে সবাই জানলো রামচন্দ্র তার স্ত্রী জাহ্নবীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে গেছেন।
সমাপ্ত।
দীপিকার পালা বদল
———-ছোটগল্প
——–রমেন মজুমদার ৩১/৭/১৯
ত্রয়োদশীর আধ ভাঙা পূর্ণিমার মধ্য নিশিতে
যে কন্যার জন্ম হয় সে নাকি দুইটি পথের অনুসারী হয়ে জগৎ সংসারে আসে।
এক,হয় কুলাটা ! দুই ,না হয় দেবী !
…..এমন আওড়ানো বুলি কোনো এক জ্যোতিষী বলেছিলেন দীপিকার জন্মের সময়।
বিত্ত বৈভবে পরিপূর্ণ রামচন্দ্রের স্ত্রী জাহ্নবীর গর্ভের প্রথম সন্তান দীপিকা তার কোল আলো করে সংসারে পদার্পণ করলো।
সংসারে কোনো কিছুর অভাব নেই রামচন্দ্রের। তাই অনেক টাকা ব্যয় করে কেন্দ্রীয় কলেজিয়েট স্কুলে দীপিকাকে ভর্তি করে দিয়ে এলেন ।
বাবার একমাত্র সন্তান দীপিকা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগলো—–
শরীফ কাকা মানে শরিফুল হালদার প্রতিদিন তাকে গাড়িতে করে স্কুলে দিয়ে এবং নিয়ে আসেন।
দীর্ঘ দিনের পুরানো গোমস্তা শরীফ, রামচন্দ্রের বাড়িতে কাজ করেন। গাড়ি চালানো থেকে
বাড়ির বাজার ঘাট পর্যন্ত শরীফের দ্বারাই সম্পন্ন করেন মধ্যবিত্ত জমিদার
রামচন্দ্র আচার্য ।
আদুরে কন্যার জন্য যখন যা চায় তখন তাই
এনে দেন রামচন্দ্র । কোনো কিছুর আবদার সে অপূর্ণ রাখেনা । পিতা হিসাবে রামচন্দ্র
গর্বিত। তবুও একটা সংশয় তার মনের মধ্যে রয়েই গেছে। সেটা হলো জ্যোতিষীর কথা।
তবে সে কন্যাকে দেবী হিসাবেই মান্যতা দিয়ে
নিজের কন্যাকে স্নেহ করেন।
আজ দীপিকা স্কুল ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম স্থান নিয়ে সারা পূর্বপাকিস্থান থেকে চতুর্থ হয়ে পরীক্ষায় পাশ করেছে।
উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য রামচন্দ্র দীপিকাকে ঢাকা কলেজে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে দিয়ে এলেন। দীপিকা হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করেন।
ওদিকে শরীফের পুত্র টেনেটুনে বি এ পাশ করেছে নোয়াখালী কলেজ থেকে। সেও রামচন্দ্রের দয়ায় ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় এম এ ক্লাসে ভর্তি হয়েছে—-
শরীফের পুত্র আরিফ
সে বেশির ভাগ সময় রাজনীতির মাঠ চষে বেড়ায়—-
তার রক্তে আন্দোলনের বাতাস বইতে লাগলো।
১৯৪৮-৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন কানুন দারুন ভাবে কড়াকড়ি করা হয়। এবং
তখন ২৭ জন ছাত্র ছাত্রীকে বহিস্কার করা হলে তার মধ্যে আরিফ একজন । পরে তারা
জরিমানা ও ক্ষমা চেয়ে সেই আদেশ হতে মুক্তি লাভ করলেও একমাত্র শেখ মুজিব ক্ষমা চাইলেন না—-
তখন পূর্বপাকিস্থান চরম দুর্ভিক্ষ শুরু হলে
একটা অশান্তির বাতাবরণ শুরু হয়
আন্দোলনের মাধ্যমে।
১৯৬০ সালে সামরিক আইন জারি হলে শুরু হয় চরম আন্দোলন। সেই সময় বিভিন্ন জায়গায় হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র করেন আইয়ুব খান।
তখন থেকেই আরিফ ও দীপিকা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন রাজপথে—-
দীপিকা তখন রোকেয়া হলে থেকে পড়াশুনা করেন অনার্স নিয়ে।
তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন করার জন্য রাস্তায় দুর্বার আন্দোলনে সামিল হলো হাজার হাজার ছাত্রলীগের মিছিলে।
আরিফ ও দীপিকা রাজপথে আন্দোলন করার সময় থেকে দুজনের মধ্যে একটা
নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়ে উঠলো।
তার পরে গড়িয়ে গেল অনেক পদ্মার জল।
অনেকে রাজপথ থেকে বন্দী হয়ে জেলের ঘানি টানতে লাগলো।
অনেক রক্ত ঝরে গেলে ঢাকার রাজপথে,
তখন পুনরায় শেখ মুজিবকে আগরতলার
ষড়যন্ত্র মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি করলো পাকিস্তান সরকার।
সে সময় পার্টির নেতা কর্মীদের মধ্যে শতশত মানুষ আটক করা হলে
দীপিকা ও আরিফ দুজনেই কারাগারে বন্দি হন।
তারপর একদিন তারা মুক্তি পেয়ে আজিমপুর ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে গিয়ে মৌলিভির মাধ্যমে বিবাহ সম্পন্ন করেন।
রামচন্দ্রের কতদিনের আশা আকাঙ্খা সবই বিফলে বিবর্জিত হলো।
তিনি জ্যোতিষীর কথাকে মান্যতা দিয়ে নিজের মনের আসন থেকে দেবীকে সরিয়ে
দিয়ে দীপিকাকে কুলাটা বলে আখ্যা দিয়ে
তিনি ঘরে চলে গেলেন।
পরদিন সকালে সবাই জানলো রামচন্দ্র তার স্ত্রী জাহ্নবীকে সঙ্গে নিয়ে কলকাতা চলে গেছেন।
সমাপ্ত।