পদ্মমুল
এক দেশে ছিল এক বাদশা । বাদশার ছিল সাত ছেলে আর এক মেয়ে । রাজবাড়ীতে সব সময় উৎসবের আমেজ ভরাপুর থাকত । রাজরানী মা ভীষণ ভালো মনের মানুষ ছিলেন ।একে বারে দয়ার সাগর । রাজবাড়িতে প্রায় আথিতি আপ্যায়ন চলত । দূর দেশ থেকে নানা অথিতিরা এই রাজবাড়িতে আহার করতেন । রাজরানী মা নিজের হাতে রাঁধতেন । শাহী পোলাউ , রেজালা , চমচম ,দই ,মিষ্টি ইত্যাদি মুখোরোচক খাবারে শাহী টেবিল ভরিয়ে দিতেন । আর অথিতিরাও সেই সব আহার খেয়ে ভীষণ খুশি হত । এক দিন হল এমন হল যে সন্ধ্যের সময় রাজ বাড়ির প্রধান ফটকে এলো একটি সাদা ঘোড়া । ফটকের প্রহরী দেখল – কেউ একজন সেই ঘোড়ার উপর বসে আসে । প্রহরী নাম জিজ্ঞাস করলে – সে কিছুই জবাব দিল না । এই সংবাদ সুলতানের কাছে গেল । তিনি আর রানী মা দুজনে রাজবাড়ির বারান্দা থেকে দেখলেন – কেউ একজন নিচে অপেক্ষা করছে । তারপর ধীরে তারা রাজবাড়ির ফটকের কাছে গেলেন । সেখানে তারা দেখলেন – একটি সাদা ঘোড়া দাঁড়িয়ে আছে । আর সেখানে সুখপাখি বসে আছে । তারপর রাজা জিজ্ঞাস করলেন – কে তুমি ? কেনই বা এখানে এসেছে ?
সুখ পাখি ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে মানুষের আকারের পরিণত হল । তারপর সে রাজা আর রানীকে একটি পদ্মফুল দিয়ে বলল এটাকে রাজবাড়ির ঝিলে রাখবেন । এই বলে হাওয়ায় মিলিয়ে গেল সেই সুখপাখি আর ঘোড়া । সুলতান আর রানী মা বুঝলেন এটা তাদের জন্য আশীর্বাদ । তাই দেরি না করে রাজবাড়ির ভিতরে একটি ঝিলের নকশা কড়া হল । ঝিলতিকে মার্বেল পাথর দিয়ে সাজালেন । তারপর রাজবাড়ীতে সবাই মিলে সেই ঝিলের জলে পদ্মফুল রেখে দিল । এমনি ঘটল এক আশ্চর্য ঘটনা । পদ্মফুল থেকে একে একে অসংখ্য পদ্মফুল বেরিয়ে ঝিলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করল । এই ফুল কোন সাধারণ ফুল নয় এটা সকলেই বুঝল । পদ্মফুলের মিষ্টি সুবাস রাজবাড়িতে ভরে গেল ।একদিন ভোরের দিকের রাজা স্বপ্নে দেখলেন সুখপাখি বলছে পদ্মের মুল খেতে তাতে সকলের মঙ্গল হবে । ঘুম থেকে জেগে সুলতান রান্নার রাঁধুনিকে কে ডেকে পাঠালেন – ঝিলের জল থেকে ভালো জাতের মুল কেটে এবং তা দিয়ে ভালো করে সবজি রান্না করতে বললেন । রান্নার রাঁধুনি রাজার হুকুম মত কাজে নেমে গেল । পদ্ম মুল কেটে ধুয়ে সবজি রান্না করে শাহী টেবিলে উপস্থাপন করল ।দুপুরের খাবারের এই সবজি দেখে বাদশার ছেলে আর মেয়ে সকলে ভীষণ বিরক্ত হল । বাদশা বললেন – এটা আশীর্বাদ । এই সবজি তোমরা সকলেই খেয়ে নাও । তারপর কিছুটা জোর করেই সকলে পদ্ম মুলের সবজি খেয়ে নিল ।