আমি তো এসেছি একুশের প্রান্তর পেরিয়ে,
রক্তের অক্ষরে লেখা নাম,
স্বাধীনতা যাকে তোমরা বলো।
আমার নিশ্বাস মিশে আছে বাংলার ধুলোয়,
আগুনমুখার ঢেউয়ে আমারই কান্না।
দেখেছি কত ভাঙাগড়া, কত স্বপ্ন ভস্মস্তূপ।
এখন আমি যেন এক শুকিয়ে যাওয়া নদী,
আমার দেশ যেন জীর্ণশীর্ণ এক নকশি কাঁথা।
তবুও আমি চোখ তুলি, দেখি আকাশে
একলা চাঁদ, তার ম্লান আলোয় দেখি
আমারই ফসলের মাঠ, আমারই গ্রাম,
যেখানে আজ শেয়ালের ডাক আর
পেঁচা ওড়ে ডানা ঝাপটে।
তারা বলে দেশপ্রেম, বলে বলিদান!
হাসি পায়, বড় হাসি পায়!
যে হাত আমার ফসল কেড়ে খায়,
যে চোখ আমার মা-বোনের দিকে লোভাতুর,
সে হাত, সে চোখ কেমন করে দেশপ্রেমী হয়?
তাদের বন্দুকের নল আমার দিকে তাক করা,
তাদের বুটের নিচে আমারই মাটি।
মৃত্যু? সে তো নিত্য সঙ্গী।
আমার ঘরের চালে সে বসে আছে কাকের মতো।
কিন্তু আমি মাথা নত করব না।
আমি বলব না, “তোমরা দেশপ্রেমী।”
আমার বুকে আগুন, সে আগুন নেভে না।
আমার শিরায় প্রবহমান একুশের রক্ত,
সে রক্ত মিথ্যা বলে না।
আমি মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করব,
যদি তা হয় আমার দেশের জন্য।
কিন্তু এই যে সৈন্যরা, এই যে শাসক,
এদের দেশপ্রেম! ধিক্কার জানাই, ধিক্কার!
আমি দেখিনি তাদের চোখে সেই আগুন,
যা দেখেছিলাম আমার ভাইয়ের চোখে,
আমার মায়ের মুখে।
মৃত্যু আসুক, আমি প্রস্তুত।
কিন্তু আমার শেষ নিশ্বাসও বলবে,
“না, এরা দেশপ্রেমী নয়!”
আমার কঙ্কালও বিদ্রোহ করবে,
আমার ছাইও কথা বলবে।
আমার দেশের মাটি সাক্ষ্য দেবে।
তোমরা শোনো আমার স্বজন,
আমার এই কথাগুলো বাতাসের কানে পৌঁছে দিও।
জেনে রেখো, আমি মরলেও,
আমার প্রতিবাদ মরবে না।
আমি তোমাদের মাঝে বেঁচে থাকব
এক মৃত্যুঞ্জয়ী প্রতিবাদ হয়ে।