Skip to content

অতৃপ্তি–গোপাল দাশ

এবঁড়ো থেঁবড়ো গলি
ময়লা নোংরা কাঁদার ছড়াছড়ি।
তার পাশে ময়নার খাল
বয়ে গেছে শীতলক্ষার দিকে,
শীর্ণকায় খালের পাশেই
উত্তর দিকে কিছু গাছগাছালি
বকুল, বিলাতি গাব আর কত কিযে!

শিবলু আর আমি গাছে চড়ি বেশ,
বিলাতি গাব পাড়া শেষে
নীল রং-এ হাফ প্যান্ট গেল ছিড়ে,
বিলাতি গাবের স্বাদ তেতো হওয়ার রেশ
মায়ের বকুনি আর লাঠির চিন্তায় আসে ক্লেশ।

নতুন হাফ প্যান্ট পড়া হয়নি কখনও
ছাপোষা সংসারে অর্থের টানাপোড়ানে,
বাবা বলতেন,
আসছে পূজায় প্যান্ট হবে নতুন
পূজা আসে পূজা যায়
নতুন হাফ প্যান্ট কখনও হয়নি কেনা।

বাবার পূরানো ফুল প্যান্টে
হতো দুটো আমার নতুন প্যান্ট
তাতেই আমার কি অহংকারের হাসি, কি গর্ব
দাঁত চিবিয়ে বলতাম,
‘দেখ আমার দু’টো নতুন প্যান্ট’
শীতলক্ষার চিত্ত পাড়ার পাশের খালটি
চলেছে লাঠি ভর দিয়ে বুড়ো মানুষের মতো,
তার পাশেই বকুল তলা নয় বিরাট বৃক্ষ
স্কুল পালিয়ে
বকুল তলায় বকুল খেয়েছি মধ্যাহ্ন ভোজে।
তার পাশেই টিনের চালায় থাকতেন
জমশেদ ভাই,
দর্জি ছিলেন ভালই, কিন্তু রোজগার ছিল কম
প্যান্ট বানিয়ে হতো কিছু আয়
তা দিয়ে সংসার চলে যায়।
আমার বন্ধু শিবলু,
সোনালী শঙ্খচিল ঘুড়ি ছিল তার বড় শখ,
ও বকুল ফলের চেয়ে গাবই ভালোবাসতো,
আমি কিন্তু বকুলই চাইতাম,
শিবলু চলে গেছে
অনন্ত গোধুলী লগ্নে।
আজ বিলাতি গাবে তার নি:শেষ অধিকার।
নেই জমশেদ ভাই,
বলতেন, ‘তোকে আমি সত্যিই
নতুন হাফ প্যান্ট বানিয়ে দিব’!
আমার আর পড়া হয়নি
নতুন হাফ প্যান্ট
রুপালি ডিসকো জুতা
আর বাহারি বুক পকেটের শার্ট।
অন্ধকারে থেকে আরও বহু দূরে
আকাশের উপরে আকাশে,
বাবার স্বর্গলোকে যাত্রা,
আমার ইচ্ছে গুলো ঝাপসা হয়ে আসে
ফিকে হয়ে আসে আমার হাফ প্যান্টের রং
আর বাবার চশমার ফ্রেম।
তবু আশা ছাড়িনি কখনও
একদিন হয়তো পথিকের বেশে
আকাশের নিচে ঝর্ণার স্নান শেষে
শ্বেত শুর্ভ্র কোন ঈশ্বর এসে
বলবেন, ‘এই নে দু’টো নতুন প্যান্ট’
পর মুহুর্তে হাওয়ায় মিলায়
আমার নতুন হাফ প্যান্ট আজ ধুসর স্বপ্ন
ঘাস হয়ে জন্মায় না পৃথিবীতে আর।

2 thoughts on “অতৃপ্তি–গোপাল দাশ”

মন্তব্য করুন