Skip to content

দেশদ্রোহী – বিকাশচন্দ্র সরকার

ভারতবর্ষের বুকের উপর দাঁড়িয়ে
যার অহংকারে
প্রভাতী সূর্যের মতো ফোটে অলংকৃত সৌর্য্য,
ভারতবর্ষের বুকের উপর দাঁড়িয়ে
যার পঁচিশটি অংশ আর বারোটি তফসিলে
চার’শ ধারায় অর্পিত শৃঙ্খলা আমাদের শেখায়
সার্বভৌম, সমাজতন্ত্র
বলে, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রের কথা;
বলে, প্রজাতান্ত্রিক স্বাধিকারের বাণী
তার নাম -সংবিধান।
স্বাধীনতার গনগনে আগুনে সেঁকে
স্বদেশীয় বীজ মন্ত্রে উজ্জীবিত ক’রে,
যখন তাকে শপথের অলংকারে অলংকৃত ক’রে
সর্বশ্রেষ্ঠ আসনে বসানো হলো,
সে যেন সৌম্য দীপ্ত জ্যোতির্ময়ী আলো;
ঘোষণা করলো-
ভারতবর্ষ মানে সাম্য।
ভারতবর্ষ মানে ন্যায়।
ভারতবর্ষ মানে মৈত্রী।

এখন,
দেশ বলতে যারা ঝাঁপিয়ে পড়ে মানচিত্রের উপর
আমি তাদের দলে নেই,
দেশ বলতে যারা জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে
বিজয় উল্লাস করে
আমি তাদের দলে নেই,
দেশ বলতে যারা ধর্মের আফিমে ঘুমিয়ে পড়ে
অথবা রক্ত চুম্বনে আঁকে মাতৃভূমির ছবি,
আমি তাদের দলে নেই।

আমার কাছে ভারতবর্ষ মানে,
আশি ভাগ স্বাক্ষরের সাথে কুড়ি ভাগ নিরক্ষরের বেড়ে ওঠা;
আমার কাছে ভারতবর্ষ মানে,
বাইশটি প্রধান ভাষার সঙ্গে ষোলশত আঞ্চলিক ভাষার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা;
আমার কাছে ভারতবর্ষ মানে ,
শুধু সনাতন নয়-
আরো পাঁচটি ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা নিবেদন;
আমার কাছে ভারতবর্ষ মানে
একশো কোটি মানুষ আর চল্লিশ কোটি দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষের
দুঃখ-কষ্টে সমান ভাবে পাশে এসে দাঁড়ানো;
আমার কাছে ভারতবর্ষ মানে
মিছিলের সম্মুখে নয় স্লোগানের শেষ প্রান্তে নগ্ন পায়ের কাছে ঝরে পড়া ক্যামেরার ফ্ল্যাশ।

বিজয় মানে যদি
পনেরোই আগষ্ট আর লালকেল্লা,
স্বদেশ মানে যদি
ছাব্বিশে জানুয়ারি আর রাষ্ট্রীয় ভাষণ
তবে তেরঙ্গা পতাকার পাদদেশে
মানুষের স্বপ্ন নয়
শাসকের আত্ম-হুংকার প্রতিধ্বনি তোলে।

লাঙলের কাব্য আর শ্রমিকের ঘাম
যদি মূল্যহীন হয়
তোমার পোখরানের আনন্দ উল্লাসে,
হাতুড়ির আর্তনাদ আর দাঁড়ের ভাটিয়ালি
যদি ঢাকা পড়ে যায়
তোমার ইসরোর প্রগতিশীল রথের চাকায়,
ফুটপাতের গদ্য আর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ক্ষুধা
যদি পদপিষ্ট হয়
তোমার বৃহত্তম প্রজাতান্ত্রিক পদচারণায়,
পদাতিক মানুষের ক্লেশ আর উৎপীড়িত মানুষের স্বপ্ন
যদি নিছক স্তবকের ভীড়ে হারিয়ে যায়,
বিকিয়ে যাওয়া সাহেবী আদলে গড়া
আদালত থেকে
তারা যদি ফিরে আসে আর্থিক অনটনে
ভঙ্গ স্বপ্নের সমাধি বেদিতে।

তবে,
এ দেশ আমার নয়,
এ প্রগতি আমার নয়,
এ স্বদেশ আমার নয়,
এ স্বাধীনতা আমার নয়।

নিছক কল্পনা নয়
বসন্ত হোক বা শ্রাবণ
গ্রীষ্মের দাবদাহ হোক বা শরতের অবকাশ
হেমন্তের শিশির হোক বা শীতের পরিযায়ী-
শাসকের কারাদণ্ড আর কারাগার
উন্মুক্ত রাখো।
মাটি আর আকাশের মাঝে দাঁড়িয়ে
সমুদ্র আর পাহাড়ের পাদদেশে
স্ব-দীপ্তময়ী কন্ঠে
আমি ঘোষণা করতে পারি
আমি “দেশদ্রোহী।”
আমি “দেশদ্রোহী।”
আমি “দেশদ্রোহী।”

1 thought on “দেশদ্রোহী – বিকাশচন্দ্র সরকার”

মন্তব্য করুন