Skip to content

সৌদামিনী

” চকিত চপলা সৌদামিনী
মেঘের আড়ালে লুকায় লাজুক মুখ ,
তোমায় ধরা সাধ্য সবার নাই
তবুও আশা দেখে বুক করে ধুকপুক ।।”
এমন‌ই কয়েকটি পদ্যের লাইন কাগজের চিরকুটে লিখে কিশোর নামের কবি কবি ভাব , সদ্য যৌবনে পা দেওয়া ছেলেটা হাতে দিয়েছিল মেয়েটির । মেয়েটি মিষ্টি হেসে কাগজটা ব‌ইয়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়েছিল আর পরদিন একটা চিরকুটে লিখে দিয়েছিল —-
“বুকে ওঠে ঝড় ,মেঘ কড়কড়
তার‌ই মাঝে আলোর ঝলকানি ,
আমায় ধরিবে এমন সাধ্য কার
আমি যে অনুরাগী সৌদামিনী ।”
সদ্য যৌবনের দোড়গোড়ায় দাঁড়ানো এক কিশোর কিশোরীর এমন প্রেম প্রস্তাব ও তার প্রত্যুত্তর সেদিন সহপাঠীরা খুব উপভোগ করেছিল । কিশোরের সাথে সৌদামিনীর প্রেমটা আর হয়নি । সৌদামিনী রূপে গুনে অনন্যা , পড়াশোনায় বুদ্ধিমত্তা এক ছাত্রী স্বপ্ন দেখতো উজ্জ্বল ভবিষ্যতের । বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান স্বপ্ন দেখেছিল কন্যাশ্রী হয়ে বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে , স্বপ্ন দেখতো বিমান সেবিকা হ‌ওয়ার।
” আঠরো বছর বয়স ভয়ঙ্কর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা। ”
এই আঠারো বছর বয়সেই সেই সৌদামিনী যৌবনের ডাক উপেক্ষা করতে পারেনি । কিশোরের কাব্যিক প্রেমকে উপেক্ষা করলেও , মোবাইল ফোনে টিউশনি টিচারের প্রেম প্রস্তাব । কিশোর ছিল তার সহপাঠী এবং বন্ধু তাই হয়তো কিশোর তার চোখে হিরো হয়ে উঠতে পারেনি । টিউশন টিচার অনল পাল অনেকের চোখেই হিরো ছিল , তার কথা বলার ভঙ্গিমায় অনেকেই মন্ত্রমুগ্ধ , মেয়েরা আড়ালে স্যারকে নিয়ে কতো মজাই না করতো । সেই টিউশন টিচারের প্রেম প্রস্তাবে এই নিমেষেই হাঁ করেছিল সৌদামিনী ‌।
যে সৌদামিনী একসময় গর্ব করে বলতো আমি সৌদামিনী ,আমায় ধরবে এমন সাধ্য কার , আমায় বাঁধবে এমন ক্ষমতা কারো নেই , শেষ পর্যন্ত সে ধরা দিল এক পুরুষের বাহু বন্ধনে । চাঁদে গ্ৰহণ লাগলে চোখে না দেখলেও যেমন সকলেই জানতে পারেন তেমনই অনল স্যারের সাথে সৌদামিনীর প্রণয় কাহিনী সকলেই জেনে গেল । একসময় সৌদামিনীর বাবা মা ও জেনে গেল বিষয়টা । প্রেম করা কী অপরাধ ? এ প্রশ্ন থেকেই যায় কিন্তু কোন বাবা মা চান না তার সন্তান পড়াশোনা ছেড়ে বিপথে চালিত হোক । বাড়ি থেকে প্রবল আপত্তির সম্মুখীন হতে হলো ……. প্রথমত সৌদামিনীর এখন পড়াশোনার বয়স , দ্বিতীয়ত অনলের পদবী পাল , সৌদামিনী রায় ব্রাহ্মণ , তৃতীয়ত দুই পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের পুরোনো একটা ঘা ।
প্রেম ঠিক গোলাপের মতোই , যার বৃন্তে কন্টকাকীর্ণ । গোলাপ তুলতে গেলে , হাতে কাঁটা ফুটবে কিন্তু ভয় পেলে হবে না । প্রেমের কাঁটা উপেক্ষা করে লুকিয়ে লুকিয়ে চলতে থাকলো দুটি হৃদয়ের গোপন আলাপন । এক সময় সৌদামিনী অনলের এতোটাই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠলো যে সৌদামিনী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে গেল । সৌদামিনীর বাবার সাথে অনলের পরিবারের দীর্ঘদিনের এক গোপন শত্রুতা ছিল কিন্তু বর্তমানে দুই পরিবার সেটা ভুলে গেলেও বর্তমানে সেটা প্রকট হয়ে উঠলো । সৌদামিনীর বাবা
মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে অনলের পরিবারের কাছে গেল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে । অনলের পরিবার সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল , দুই পরিবার বসে রফা হলো প্রেমের চিহ্ন মুছে ফেলা হবে এবং অনলের পরিবার সৌদামিনীর পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে । সৌদামিনী অনলের হাত ধরে অনেক দূরে চলে যেতে চাইলো কিন্তু যে অনলকে সে এতোটা ভরসা করেছিল সে সেই প্রস্তাবে সম্মত হলো না । সব হারিয়ে বিরোহিনী প্রিয়া গান ধরলো —–
” মোর প্রথম প্রেমের মুকুল
ঝরে গেল হায় ……… ”
পড়াশোনায় ভালো জীবনে প্রতিষ্ঠিত হ‌ওয়ার স্বপ্ন দেখা মেয়েটি হারিয়ে ফেলল নিজেকে। ভালোবাসা হারিয়ে ধীরে ধীরে মানসিক রোগী গেল । আলুথালু বেশ , শুস্ক চেহারা জৌলুস হীন চোখের নীচে কালি পড়া মেয়েটির মুখের দিকে তাকালে একটাই কথা মনে হয় …. ” ভালোবাসা ছাড়া আর আছে কী ? ”
অনলের বিয়ে হয়েছে , নতুন ব‌উ এবং সন্তানকে নিয়ে বেশ আনন্দেই আছে । সৌদামিনী এখন আগের থেকে ভালো আছে , হৃদয়ের ঘা টা আগের থেকে অনেক ভালো , পুরাতন ঘটনা প্রায় ভুলে গেছে । সৌদামিনী আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে , আবার নতুন করে পড়াশোনা শুরু করেছে । এখন সে এম এস সি পাঠরতা । ইতিমধ্যে সৌদামিনীর বিয়ে ঠিক হয়েছে , বেশ কয়েকটি সম্বন্ধ ভেঙে গেছে পাড়া প্রতিবেশীর সৌজন্যে । অবশেষে সৌদামিনী বিয়ে করে বরের হাত ধরে শ্বশুরবাড়ি গেল নতুন স্বপ্ন চোখে ।
সৌদামিনী যেই না নতুন জীবন শুরু করেছে , মোবাইলে হঠাৎ ভেসে উঠলো পুরাতন প্রেমিকের শুভেচ্ছাবার্তা । ধীরে ধীরে মেসেজ আসাটা বাড়তে শুরু করলো । সৌদামিনী নাম্বারটা ব্লক করে দিল , পরদিন আবার নতুন নাম্বার থেকে হোটাস‌আপে ভেসে উঠলো একটা পুরাতন ছবি । সৌদামিনী আর দেরী না করে কাঁপা হাতে ফোন ধরালো — ” কী চাও তুমি ? ”
—- কিছু না তোমায় কাছে পেতে চাই ।
—- আমি তোমায় ভুলে গেছি । তোমায় আমি ঘেন্না করি । আমায় আর ফোন করবে না কোনদিন ।
ফোনটা কাটতেই আবার একটা ছবি , সাথে লেখা তুমি আমার কথা না শুনলে এই ছবিগুলো তোমার হাসবেন্ডকে সব পাঠিয়ে দেব ।
সৌদামিনী তার স্বামী রূপককে ভীষণ ভালোবাসতো। সে চাইনি রূপককে ধোঁকা দিতে , সাহস করে বলতে চেয়েছে রূপককে সব কথা কিন্তু ভয়ে বলতেও পারেনি । অবশেষে সৌদামিনী ঠিক করলো , সে চিরতরে মিলিয়ে যাবে । বিয়ের ঠিক দশ মাসের মধ্যেই একদিন নিজের হোটাস‌আপের সব মেসেজ মুছে দিয়ে নীরবে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল সৌদামিনী । রূপক দেখল সিলিং ফ্যানে ঝুলছে সৌদামিনীর নিথর দেহ ……..

বিঃ দ্রঃ — গল্পের ঘটনা এবং চরিত্র কাল্পনিক

মন্তব্য করুন