Skip to content

সিধু মুর্মু, আমার বন্ধু — নীল অঞ্জন

  • by

ভূমিপুত্র সিধু মুর্মু, আমার বন্ধু;
আমি কিভাবে যেন নিজের অজান্তেই
হারিয়ে ফেলেছি আজ তাকে!
সেই আদ্দিকালের আদি মানব-মানবী
পিলচু হড়ম, পিলচু বুড়ি-ও যেন ঠিক
রক্ষা করতে পারেনি তাকে।
প্রধান দেবতা সূর্য দেবতা সিং বোঙ্গা’ও
মাথার উপর থেকে শুধুই নিরাশার
প্রবল অক্ষম চাহনিতে দেখেছে,
প্রতিবাদে নেমে দাঁড়াতে সাহস করেনি!
গ্রাম দেবতা পাহাড় মারাং বুরু-ও
পারেনি, প্রতিবাদে একটা ভূমিকম্প
অথবা সর্বনাশী ভূমিধ্বসে
লুট হয়ে যাওয়া মাটি দাবিয়ে দিতে!

রাতের অন্ধকারে প্রকান্ড এক
হলুদ অজগর তার লকলকে জিভে
মূহুর্তেই একে একে গ্রাস করে যায়
হতভাগা ভূমিপুত্রদের যত অধিকার!
পুড়ে ছাই যত পূর্ব পুরুষের আশীর্বাদ,
চিরচেনা মাটির সুগন্ধি আদর।
যেখানে আড়াল ছিল সেখানে কয়লা,
হাহাকার, চাপ চাপ রক্তের দাগ!
সভ্যতার ঐ পারে তোমরা, সিধু মুর্মুরা
তিরন্দাজ, নির্বাসিত ভূমিপুত্রদের দল!
অতীতের গৌরবহীন, শেকড়হীন,
ঠান্ডা আর মৃত শবেদের মতো।

সরকারি কর্তা বাবুরা, স্থানীয় প্রশাসন,
রেশোনের বদলে হাতে করে নিয়ে এলো
আনকোরা নতুন চকচকে বুলেট!
বন্দুকের শব্দের সাথে ভেসে আসে কান্না,
দাঁতাল শুয়োরের উচ্চকিত চিৎকার,
হাহাকার ভূমিপুত্রদের, পোষা কুকুরের!
ঐপারে তখনো খুঁজে পাই আমার বন্ধু
সিধু মুর্মুকে, অশ্রুহীন অশ্রুতে কাঁদে ___
আমি চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম,
না, বন্দুক না, গুলি না, প্রতিহিংসা না
ভূমিপুত্র সিধু মুর্মু, আমার বন্ধু!

রাতের অন্ধকারে প্রকান্ড এক
হলুদ অজগর তার লকলকে জিভে
মূহুর্তেই একে একে গ্রাস করে যায়
হতভাগা ভূমিপুত্রদের যত অধিকার!
ওপার থেকে চিৎকার করে সিধু মুর্মু,
আমার খোকার বোকাবোকা সরল
স্নিগ্ধ দাঁতের হাসিটা কোথায় গেল?
মা-মরা খুকীটার দুধ খাওয়ানোর
রূপোর চামচ সেই থেকে আর
খুঁজে পাচ্ছি না কেন বন্ধু?

অন্ধকার, কালো, উগ্র রাতের শেষে
উপহাসের হাসি হেসে যাওয়া সকাল,
দুপুর, বড় বেমানান সন্ধ্যের আয়োজনে!
তিস্তার বহতা জলে বড় ম্লান মুখে
চিত হয়ে শুয়ে থাকে মানবতার ধিক্কার,
গণমানুষের ব্যথিত আত্ম-হাহাকার।
আমি হতবুদ্ধি, বোবা-কালাদের মতো,
চোখের পাতা ফেলে সর্ষে ফুলের মতো,
চেয়ে থাকি, বলতে পারি না আর ___
ভূমিপুত্র সিধু মুর্মু, আমার বন্ধু!

মন্তব্য করুন