Skip to content

রুটি – দয়াল দাস

একটা রুটিকে তাওয়ায় ছ্যাঁক দিতে দেখে
তোমার কি কষ্ট হয়?
যখন রুটিটা ফুলে ওঠে, তোমার কি মনে হয়,
ওর গায়ে ফোস্কা পড়ে গেল?
সে ফোস্কার ভেতরে জল নেই কেন জানো ?
শ্রমিকের শরীরের ক্ষত ঢাকে নেবানল পাউডার যেমন
রুটির রসকে তেমনি তুমিই শুকিয়ে দিয়েছ
শুষ্ক গুড়ো ময়দা দিয়ে।

প্লেটে রাখার পর রুটিটা যখন আস্তে আস্তে চুপসে যায়,
তোমার কি মনে হয়, ওর আত্মা বেড়িয়ে গেল?
জানি, মনে হয় না।
মনে হলে তো আর মৃত রুটিতে অমৃত মেখে
চিবিয়ে খেতে পারতে না।

তোমার রাক্ষুসে দাঁতের উল্লাস দেখেও
রুটিটার জন্য আমার কষ্ট হয় নি।
আমি জানি, যে আটাকে তুমি হত্যা করেছো
গরম পানিতে চুবিয়ে-ডুবিয়ে,
তোমার রোলার বা বেলনের পিষ্টনে তার অনুভতি শূন্য;
তাওয়ার ছ্যাঁক তার কাছে পরকালে-নরক-লাভ।

রুটিটার জন্য আমার কষ্ট হয় এখন।
তোমার কি কষ্ট হয় না শ্রমিকের জন্য?

তোমার জন্য এক কেজি ছানা বানাতে গিয়ে
কোন ময়রার দুই পোয়া ঘাম ঝরেছে,
তুমি যে কাপড়টা পরে আছ সেটা বানাতে গিয়ে
কোন নারীকে হয়তো দিতে হয়েছে কাপড় বিসর্জন;
তার মালিকের কাছে।
যে টয়লেট তোমার আজ খাবার প্লেটের মত ঝকঝকে,
কোন মেথর তার জন্য গলায় পুরেছে গাঁজা, মদ কিংবা আফিম।
সেই ময়রা-নারী-মেথরের কথা ভেবেছ তুমি?
হয়তো ভাব নি।
আমিও ভাবি নি।

তোমরা যাদের ব্যবহার করো কল-কারখানাতে,
কবিরা তাদের ‘ব্যবহার’ করে কবিতা-কারখানাতে।
মালিকে-কবিতে তফাৎ কোথায়?

সাত-পাঁচ ভাবি না।
শেষ পর্যন্ত আমরা রুটিটাই খাই।
চলুন, সবাই রুটিটাই খাই।
ঘাসের কষ্টের কথা ভাবলে,
গরুগুলো কি ঘাস খেতে পারত?

মন্তব্য করুন