Skip to content

দেশের তরুণদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাবনা

  • by

আমাদের দেশের তরুণ সমাজ আমাদের অনুপ্রেরণা। তরুণ সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করলে দেশের উন্নয়ন অবশ্যম্ভাবী। প্রথমেই আমাদেরকে বুঝতে হবে তরুণ বলতে কি বুঝায় বা কারা তরুণ। তরুণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ‘Young People and mental health in a changing world’, অর্থাৎ ‘পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে তরুণ সমাজ এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্য’। যদিও ‘Young People’-কে বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘তরুণ মানুষ’ বা ‘তরুণ সমাজ’; কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘ÔYoung People’কে একটি বয়সের সীমারেখা দ্বারা সংজ্ঞায়িত করে। WHO- এর সংজ্ঞা অনুযায়ী Adolescent age (বয়োঃসন্ধিকাল) ১০-১৯ বছর, Youth (তরুণ-তরুণী) ১৫-২৪ বছর এবং Young people (তরুণ সমাজ) ১০-২৪ বছর। কাজেই ‘Young people ’ বললে বয়োঃসন্ধিকাল এবং তরুণ-তরুণী বা যুব সম্প্রদায় উভয়কেই বোঝায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কারিগরি ভিত্তিতে বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে চলছে। বিশ্বে খুব শিগগির চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ঘটবে। এ জন্য এই বিপ্লবের সঙ্গে মানিয়ে চলতে আমাদের দক্ষ মানব সম্পদ উন্নয়ন করা দরকার।এ লক্ষে ইতোমধ্যেই সরকার কাজ শুরু করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী আজ ২ ফেব্রুয়ারি সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ২৩ তম আইডিইবি জাতীয় সম্মেলন এবং ‘স্কিলস রেডিনেস ফর এচিভিং এসডিজি এন্ড এডপটিং আইআর ৪.০’ বিষয়ক তিনদিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। এই কথাটির মধ্যে তরুণদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার ইঙ্গিত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে যুব সমাজকে তাঁদের মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহবান জানিয়ে বলেছেন, সরকার চায় এই মুজিব বর্ষে দেশে কেউ বেকার থাকবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধুমাত্র চাকরির মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তরুণদের মাঝে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে-একটা কিছু তৈরী করার, তাঁর চিন্তা এবং মননকে বিকশিত করার, সেই কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে।
‘নিজে কাজ করবে এবং আরো দশ জনকে কাজের সুযোগ করে দেবে, ’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি এই বক্তব্যেই আমরা বিশ্বাস করি। কাজেই সেই লক্ষ্য নিয়েই যুব সমাজকে আরো কর্মক্ষম করে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩০ জানুয়ারি সকালে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে (পিএমও) জাতীয় যুব পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি অনুষ্ঠানে ২২ জন আত্মকর্মী এবং পাঁচ যুব সংগঠনের মাঝে এই পদক প্রদান করেন। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রদান করা এ পুরস্কারে এ পর্যন্ত ৪৪৫ জন আত্মকর্মী সম্মানীত হয়েছেন।
শেখ হাসিনা তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘চাকরি না করে চাকরি দেব বা দিতে পারবো। সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেই চিন্তাটা মাথায় থাকতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে।’
‘সেটা থাকলে আমারতো মনে হয় বাংলাদেশে আর কেউ বেকার থাকবে না, ’যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একটা লক্ষ্য হচ্ছে যে, এই মুজিব বর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশে আর কেউ যেন বেকার না থাকে।’
তিনি দু’টি ঘটনার উদাহারণ টেনে চাকরি না করলেই কাউকে বেকার ভাবার মন মানসিকতাও পরিবর্তনের জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের মানুষের মাথার মধ্যে ঐ একটা জিনিস ঢুকে আছে, চাকরি ছাড়া যেন আর কিছুই করা যায় না। অথচ ফ্রিলান্সিং কাজ করে মাসে ২ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করা যায়।’
‘লার্নিং এন্ড আর্নিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এক একজন স্বাবলম্বী হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে কাজ করেই এখন ঘরে বসেই মানুষ অনেক টাকা রোজগার করতে পারছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এদেশের যুব সমাজ হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে লড়াই করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। আর বিজয়ী জাতি হিসেবেই আমরা বিশ্বে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা চাই, আমাদের যুব সমাজ আত্মনির্ভরশীল হোক, আত্মমর্যাদাশীল হোক। তিনি বলেন, সে লক্ষ্য নিয়ে যখনই সরকার গঠন করেছি তখনই আমাদের যুব সমাজের জন্য আমরা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুব সমাজ খেলাধূলা, সংস্কৃতি চর্চাসহ সর্বক্ষেত্রেই যেন পারদর্শী হয়ে ওঠে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি এবং নিচ্ছি।
যুবকদের প্রশিক্ষণে তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই প্রশিক্ষণটা একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই। সেলক্ষে ৬ষ্ঠ শ্রেনী থেকেই যেকোন একটা বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেয়া শুরু হবে।
সরকার প্রধান বলেন, যুবকদের প্রশিক্ষণ কেবল যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকেই নয়, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকেও এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। তাঁর সরকার ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি চালু করেছে, সারাদেশে ২৮ শ’ ডিজিটাল সেন্টার করে দিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে, সারাদেশের সকল ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস চালু করছে, এর সবই যুবকদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই। আর একারণেই বেসরকারী খাতকেও উন্মুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এ পর্যন্ত আমরা ২ কোটি যুব সমাজের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের যুব সমাজকে আমি এটাই বলবো-যে বহুমুখী সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে দেখতে হবে আমি নিজে কি করতে পারি। নিজে কতটুকু কাজ করতে পারি। আর নিজে মানুষকে কিছু দিতে পারি কিনা সেটাই বড় কথা। আর এক্ষেত্রে যা দরকার সরকারের পক্ষ থেকে আমরা সে ব্যবস্থা নিচ্ছি, দিচ্ছি এবং সেই সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দেব।’
‘আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মেধাবী ’উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি স্বপ্রণোদিত পদক্ষেপ নিলেই অনেক বড় বড় কাজ তাঁরা করতে পারে। সে বিশ্বাস আমার আছে।’
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ মাদক ও দুর্নীতির প্রতি তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির থেকে দূরে থাকতে হবে এবং এটা প্রতিহত করতে হবে। একটা শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। যাতে মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
তিনি জাতির পিতার আত্মত্যাগ ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, জাতির পিতা তাঁর ছাত্রজীবন থেকে এদেশের মানুষের জন্য সংগ্রাম করেছেন। এই দেশ ও দেশের জনগণের স্বার্থে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আজ আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু তাঁর আদর্শ রয়েছে। তাঁর সেই আরাধ্য কাজ সম্পন্ন করাটাই আমাদের লক্ষ্য। আর যে দেশের জন্য লাখো মানুষ রক্ত দিয়েছেন, সেই দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা এই দেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আর আজকের তরুণ সমাজই হবে সেই গড়ে তোলার কর্ণধার।’

এখানে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে লক্ষণীয় যে, আমাদের প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তরুণদের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন। তরুণদরেকে চাকুরীর পেছনে না ঘুরে আত্মকর্ম সংস্থান সৃষ্টির প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই কথাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রত্যেকটি উন্নয়শীল দেশেই আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি খুবই জরুরী। কারণ আমাদের দেশে চাকরির সংখ্যা সীমিত। ইচ্ছে করলেই চাকরি সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব নয়। তাই পড়াশোনা শেষ করে চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থান করার উদ্যোগ হাতে নেয়া প্রয়োজন।

আমি আশাবাদ ব্যক্ত করছি যে, প্রধানমন্ত্রীর এই মনোভাব আমাদের দেশের তরুণ সমাজের জন্য ইতিবাচক। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে আমাদের তরুণ সমাজ অচিরেই আমাদের সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।

পরিশেষে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। পাশাপাশি তরণ সমাজকে আত্মকর্মসংস্থান হতে সরকারী সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ প্রদানের অনুরোধ করছি।

লেখক ঃ কাজী জহির উদ্দিন তিতাস, সভাপতি, জাতীয় সাংবাদিক ক্লাব, কেন্দ্রীয় কমিটি।

মন্তব্য করুন