Skip to content

ছোটপোট – অথই মিষ্টি

“ছোটপোট’’

“ আপু ! তোমাকে কি ক্ষুদা লাগতেছে ?’’
“ কই না-তো । তোমাকে কি ক্ষিদা লাগছে ?’’
“ না-মানে একটু একটু ! বেশি না ।’’
তখন আমি উঠান থেকে চিৎকার করে আম্মু কে বলে দিতে আরাম্ভ করলাম,‘ আম্মু ! আম্মু ! তোমার মেয়ের ক্ষিদা পায়েছে ।’ আমার চিৎকার করা শুনে , ও আমার হাতটা ধরে নিচের দিকে টান মারলো , আমি নিচের দিকে হেটে পড়তেই ও আমার মুখজেপে ধরলো ।আর ফিস ফিস করে বলতে লাগলো,
“ ঐ ! তোমাক আমি কি বলছি, আম্মুকে বলতে ! আমার ক্ষিদে পায়েছে ।’’ (বিরক্তির সাথে, কপালে ভাঁজ ফেলে)
“ তুমিই তো বললে যে , তোমার ক্ষিদে পায়েছে ।’’
“ আমি তো বললাম, বেশি না , একটু, মানে না আমার ক্ষিদে পায় নাই ।’’
“ ও ’’ (লম্বা করে)
আমি মুক্তা । আর মনি আমার ছোট বোন । ওর আমি চার বছরের বড় ।মনি এবার প্রথম শ্রেনিতে । আজ প্রথম রোজা, আর এখন চলতেছে রমজান মাস । আম্মু আমাদের কে রোজা থাকতে দিবেই না । আর আমিও নাছর বান্দা থাকবোই রোজা ।তাই গত কালকেই আম্মুকে বলে দিয়েছি যে, ‘ সেহেরীতে আমাকে না ডাকা হলে , না খেয়েই আমি রোজা থাকবো ।’ আর আমার কথা শুনে মনি, অর্থাৎ আমার একমাত্র প্রতিদ্বন্দি সেও ঐ একই কথা বলেছে আম্মুকে ।কি আর করার , বেচারী আম্মুর ! উপায় না পেয়েই দু-জন কেই ডেকেছিলো আজ সেহেরীতে । আমি আর মনি তো অনেক খুশি , কেননা আমারা প্রথম রোজা দিতেছি ।তাই আজ সকাল বেলা বিছানা থেকে উঠেই দৌড় দিয়ে বাহিরে এসে দেখি মিতুদের উঠনে মিতু, রুজি, সাজি, জিতু আর, ওমা সেকি মনিও এখানে এসেছে আমার আসার আগেই
।সাবাই অনেক খুশি । সাবার মুখেই হাঁসি ভরা ।আমাকে দেখে ওরা সবাই আমার দিকে এগিয়ে এসে, একে একে আমাকে জিজ্ঞস করতে লাগলো,
“ তুমি কি রোজা ?’’
আমি অনেক আনন্দের সাথে খুশি হয়ে হাঁসি মখে উত্তর দিলাম যে,
“ হুম ’’
আর মনি বলে উঠলো,
“ আপু , আমারা সবাই রোজা ।’’
আর তখন থেকে আমরা সবাই মিলে বিভিন্ন ধরনের খেলা খেলতে আরাম্ভ করলাম । খেলতে খেলতে সময় এসে দ্বাড়া্লো বেলা ১১-টায়, আর তখন হঠাৎ খেলার মাঝে সাজি বলে ঊঠলো,
“ আমি আর খেলবোনা ।’’
বুঝলাম না সে কেনো খেলবেনা ! কিন্তু তাকে বড্ড ক্লান্ত দেখাচ্ছিলো ।তারপরেও আমি তাকে জিজ্ঞাস করলাম,
“ কেনো খেলবিনা ?’’(কিছুটা রেগে গিয়ে)
“ খেলবো না , আমার ভাল্লাগতিছেনা ।’’(ভাব নিয়ে)
“ যা তুই এখান থেকে, তোক আর কখনো খেলতে নিবোনা ।’’(বিরক্তির সাথে)
“ খেলবো না, তোর সাথে না খেললে কি আমার দিন জাবেনা !এই গেলাম আমি ।’’
বলে সাজি চলে গেলো ।তারপর আমি বাকিদের সাথে খেলতে আরাম্ভ করলাম । এই কিছুক্ষন খোর পর, রুজি আর জিতুও বলে উঠলো,
“ আমরাও খেলবোনা ।’’
“ যা যা , তোদের কারোর প্রয়োজন নাই আমার । আর খেলবোই না ।’’(রেগে গিয়ে বিরক্তির সাথে )
সবাই যার যার মতো চলে গেলো । আমি আর মনিও আমাদের উঠনে আসলাম । আর তখন থেকেই এখন ।
মনিকে প্রচুর ক্লান্ত লাগতিছে । আমাকেও ক্লান্ত লাগতিছে । মনি আমাদের উঠনের কাঁঠাল গাছের ছাঁয়ায় সজরে মাটিতে বসে পড়লো আর আমি ওর পাশে দ্বাড়িয়ে রইলাম নিশ্চুপ হয়ে ।আর তখই ক্ষুদার কথা উঠলো ওর আর আমার মাঝে । আমি লম্বা করে ‘ ও ’ বলতেই হঠাৎ, আম্মুর কন্ঠে,
“ মনি মুক্তা ? মনি মুক্তা ?’’
“ জ্বি, আসতেছি আম্মু ’’
আমি বাড়ির দিকে যেতে আরাম্ভ করলাম, কিন্তু মনি বসেই আছে । আমি পিচন ফিরে মনির হাত টেনে ওকে দ্বার করে টেনে টেনে বাড়িতে নিয়ে আসলাম । আম্মুর নজরে পড়লো সে দৃশ্য । আর তখন আম্মু রেগে গিয়ে আমাদের দুজন কে টেনে নিয়ে গিয়ে বকা দিতে দিতে গোসল করিয়ে দিলো ।তারপর ঘরে এনে দুজনকে ভাত দিতে আরাম্ভ করলো । আম্মু ঐ পাশে তাকাতেই
“আমি খাবো-না ।’’
বলে দিলাম এক দৌড় বাহিরের দিকে । আমাকে অনুসরন করে আমার প্রতিদ্বন্দিও একই কাজ করতে চাইলো কিন্তু আম্মু ততক্ষনে মনিকে ধরে ফেলেছে । তার পর ওকে জোর করে ভাত খাইয়ে দিলো আম্মু ।
বাকি সময়টা আমি অনেক কষ্টে ডুলে ডুলে এপাশ-ওপাশ করে কাঠিয়ে দিলাম । একদম আসরের পরে ভয়ে ভয়ে নিঃশব্দে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই আম্মু চোখে পড়লাম । আম্মু রান্না ঘর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলেউঠলো,
“ এতক্ষনে বাড়িতে আসার সময় হলো আপনের ?’’
আমি আর কিছু না বলে, নিঃশব্দে মাথা নিচু করে দরজার কাছে দ্বাড়িয়ে রইলাম
। আর আমার প্রতিদ্বন্দি আমার দিকে তাকিয়ে খিলখিলিয়ে হাঁসছে ।যদিও তখন আমার শরীর একদম ন্যাহাল তবুও মনে হচ্ছিলো আম্মু সামনে নাথাকলে, মনিকে এমন মার মারতা যে ওর সারা জীবন মনে থাকতো ।আম্মু ততক্ষনে আবার ধমক দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলে উঠলো,
“ এভাবে কি দ্বাড়িয়েই থাকবি ! না-কি ব্রাশকরে হাত-মুখ ধুয়ে প্রস্তুত হবি ! ‘’
আম্মুর কথায় সায় দিয়ে আমি ব্রাশ করে হাত-মুখ ধুয়ে রেডি হোলাম । আর বেশিক্ষন সময় নাই ইফতারের ।তবুও কেন জানি অনেক নাজেহাল মনে হচ্ছিলো নিজেকে আর অনেক ক্লান্ত ।মনে হচ্ছে আর একটাও রোজা দিতে আমি পারবো না । আম্মুও ওদিকে প্রাই প্রস্তুত ।ততক্ষনে আব্বুও বাড়িতে আসলো । তারপর আমাদের ঘরের মধ্যে মেঝেতে ইফতার সাজিয়ে আমরা চারপাশ দিয়ে বসে পড়লাম । আমার যেনো আর ধৈর্য কুলাচ্ছেনাহ্ ।সাবাই চুপচাপ হয়ে বসে রইলাম । আর আমার প্রতিদ্বন্দি, হিংসার হাঁসি হেঁসে আমার দিয়ে তাকিয়ে আছে ।আমি যে ওকে একটা ধমক দিবো তারে মতো শক্তিও আমার নাই মনে হচ্ছে ।আম্মুর সাথে বসেছে এক দিয়ে আব্বু আর অন্য দিকে মনি , তার পর আমি । তো আমি আম্মুর থেকে একটু দূরে বসেছি । আম্মু এবার স্যালাইন গ্লাসে ঢেলে দিচ্ছে ।আর আব্বু বলতেছে,
“ আলহামদুলিল্লাহ্ , আমার মেয়ে প্রথম রোজা দিলো ।’’
এবার আম্মু মনির হাতে গ্লাস দিয়ে বলল আমাকে দিতে । আমি আবার আব্বুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাঁসতেছি । মনি আমার গা স্পর্শ করে স্যালাইনের গ্লাসটা আমাকে দিয়ে বলল,
“ এই নে খা …
আমি গ্লাসটা হাতে নিয়েই, চোখ বন্ধ করে, এক চুমুকে একে বারে শেষ করে দিলাম ।শেষ করে দিয়ে চোখ খুলে দিখি , আম্মু, আব্বু আর মনি আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । কিছু মুহূর্তের জন্য আমি তেনাদের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“ কি হলো … ?’’
আমার প্রতিদ্বন্দি হাঁসতে হাঁসতে বলে ঊঠলো,
“ তোমার রোজা ভেঙ্গে গেছে …

মন্তব্য করুন