Skip to content

চরিত্রান্তর – পর্ব ২ – জয়ন্ত সেন

অনামিকা বাড়ি ঢুকতেই অশান্তি শুরু হয়ে যায়। কি না আজেবাজে ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে, বাউন্ডুলেদের মতো রাস্তায় নাকি টো-টো করে ঘুরে বেড়ায়, বেলাল্লাপানার একশেষ , এসব কি কোনো ভদ্র বাড়ির মেয়েরা করে নাকি! শিক্ষা-দীক্ষা নেই, কালচার নেই, অনামিকার জ্যেঠা চিত্কার করছে। সবার থেকে বড় বলে অনামিকার জ্যেঠারিই হুকুম চলে এখনো এ বাড়িতে। অনামিকার অসয্য লাগছে, কিসের শিক্ষা-দীক্ষা, কালচারের কথা বলছে জেঠু ? ওনার পরিবারে ওনার বউ তার ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেছে, নিয়ে গেছে ঘরের আসবাবপত্র পর্যন্ত, ওনার মেয়ে যে কি কিত্তিটাই না করে বেড়াচ্ছে।অনামিকা বাড়ি ঢুকতেই অশান্তি শুরু হয়ে যায়। কি না আজেবাজে ছেলেদের সাথে মেলামেশা করে, বাউন্ডুলেদের মতো রাস্তায় নাকি টো-টো করে ঘুরে বেড়ায়, বেলাল্লাপানার একশেষ , এসব কি কোনো ভদ্র বাড়ির মেয়েরা করে নাকি! শিক্ষা-দীক্ষা নেই, কালচার নেই, অনামিকার জ্যেঠা চিত্কার করছে। এখনো একটা ঘটনার কথা কাউকে জানায়নি অনামিকা। ত্রিশাদির প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর দিন, অর্নবদাদের বাড়িতে পার্টি ছিল, পরিবার বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে। অনামিকা খুব বিরক্ত অনুভব করছিল সেখানে। তার বয়সী কেউ সেরম নেই যেন, সবাইকে চেনেও না, তাছাড়া অর্নবদাদের বড় বড় ব্যাপার। মুখ বিকৃত করে সবাই যেন নিজেদের আপন প্রসংসায় পঞ্চমুখ। দামী দামী আর নাম করা ব্র্যান্ড-এর শো-অফ। অনামিকার বাবা সাধারন খুব সল্প মাইনেতে দারোয়ানের একটা কাজ করে। কোনরকমে তাদের সংসার চলে। মা বাবা অনেক কষ্ট করে অনামিকার পড়াশোনার খরচ চালায়। তার শো-অফ করার মত এখানে কিই বা থাকতে পারে ? এককোণে অনেক্ষণ কাটাবার পর অর্নবদার বাড়ির পেছনের দিকের স্টোর-রুমে চলে যায়। সেই ঘরটার কথা অনামিকা জানত। এখানে যতসব বাজেয়াপ্ত করা আসবাবপত্র রাখা হয়। কেউ এখানে আসে না। ঘরের বাইরের দিকে মুখ বাড়িয়ে অনামিকা সিগারেট টানতে থাকে। স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে এখন অনামিকা কলেজে। অনেক বন্ধুদেরকেই খেতে দেখেছে, কৌতুহলে নিজেও টেনেছে বহুবার, সেই বন্ধুরাই বলেছে ‘ খুব টেনস লাগলে বা বিরক্ত লাগলে টেনে নিবি , দেখবি রিলাক্স লাগবে।” হটাত কেমন যেন আওয়াজ পেল, কেউ কথা বলছে, লুকিয়ে শোনবার চেষ্টা করল, বুঝলো ‘কে’ নয় ‘কারা’ যেন কথা বলছে। কথা থামতেই শীত্কার-এর শব্দ আসতে থাকে, একটা মেয়ের। তারই সাথে কাঠের কিছুর সাথে দেওয়ালে বারবার ঠোকা-ঠুকির শব্দ। শব্দটা আরো তীব্র হতে থাকে। খুব কৌতুহলের সাথে আর সতর্ক ভাবে নিজেকে আড়াল করে অনামিকা তাদেরকে দেখার চেষ্টা করে। শাড়ি, ব্লাউজ মাটিতে পরে, তার জেঠতুত দিদি যার কিনা আজ বিবাহ-বার্ষিকী, সে অর্ধ-নগ্ন অবস্থায় দু-পা ছড়িয়ে একটা পুরনো ড্রেসিং টবিলের ওপর পরে আছে, আর তার পাশে সুখ দিতে ব্যস্ত জয়ন্তদা।

অনামিকা উত্তর দেয় “তুমি নিজের চিন্তাটাই ভালো মত কর জেঠু , আমার ভালো খারাপ আমি বুঝে নিতে জানি।”

কথাটা শুনে অনামিকার জ্যেঠার গলার স্বর আরো তীব্র হয়। এই মারে তো সেই মারে করে ছুটে আসছিল। সজোরে একটা চর মেরে অনামিকার মা অনামিকাকে ঘরে নিয়ে চলে যায়।

রাতে খাওয়ার সময় অনামিকার মা বলে “কেন যে তুই বড়দের সাথে মুখ লাগাস !”

মাকে ধমক দিয়ে ওঠে অনামিকা, “চুপ করো তো ! জেঠুর নিজের অবস্থা দেখেছ, ঘরের খাচ্ছে বনের মোষ তাড়াচ্ছে। ওই যে অর্নবদার থেকে অতগুলো টাকা নিল, কারখানাটা কি চালাতে পারলো ! আর ত্রিশদি ! এত বড় ঘরে যে বিয়ে হোলো, তুমি তো ওকে মানুষ করলে বড় করলে, কই তোমার প্রতি তো কোনো দায়িত্ব পালন করেনি, দিদি কি পারত না ?”

“চুপ কর। নাই বা করুক। আমি আশাও রাখি না। কে করেছে বা করেনি সে নিয়ে চিন্তা করে কি লাভ বল। তুই আমার মেয়ে, তুই বড় হবি, তুই আমার নাম করবি।” শান্তভাবে অনামিকার মা অনামিকাকে বোঝায়।

কিছুক্ষন চুপ থাকার পর জিজ্ঞাসা করে “তুই কি জয়ন্তর সাথে মেলামেশা করিস ?”

অনামিকা বুঝতে পারে, গতকাল ত্রিশা বাড়ি এসেছিল, মাঝেমধ্যেই আসে। ত্রিশাদির শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি বেশি দুরও নয়। নিশ্চই বলেছে জয়ন্ত অনামিকার কথা।

ত্রিশাদির অনেক গুলো প্রেমিকের মধ্যে জয়ন্তদাও একজন ছিল, বিয়ের আগে। অনেকদিন চলেও ছিল ওদের সম্পর্কটা। অনেকবার দিদির মুখ থেকে জয়ন্তদার গল্পও শুনেছে। বাড়ির পেছনের অন্ধকার গলিতে মুখে মুখ লাগিয়ে চুমু খেতেও দেখেছে বহুবার। তখন অনামিকার কতই বা বয়স হবে, দিদিকে অনেকবার জিজ্ঞাসাও করেছে যে তারা কি করছিলো। দিদি বলতো ‘বুঝবি না এখন কিছু, তুই আরো বড় হবি যখন তখন বুঝবি কি করি কেনো করি।’ দিদি ঠিকই বলেছিলো।

তারপর একদিন রাস্তায় খুব হই-হট্টগোলের আওয়াজে জানলা দিয়ে উঁকি মেরে দেখে জয়ন্তদাকে ঘিরে তিন-চারজন লোক। তাদের একজনের হাতে শক্ত কাঠের বাটাম। তারপর সবাই মিলে ঝাপিয়ে পরলো জয়ন্তদার ওপরে।

কিছুক্ষণবাদে আবার দেখতে পেলো, ছেঁড়া-রক্ত লাগা জমায় লেপ্টে আছে। তারা চ্যাং-দোলা করে কোথায় যেনো নিয়ে গেলো।

একদিন কলেজ থেকে ফেরার পথে অনামিকার পা মুচকে গেছিল। সে কি ব্যাথা, পা ফেলা মুস্কিল, হাঁটা তো দুরের কথা। রিকশারও পয়সা নেই, বাড়ি ফিরবে কি করে ? এমন সময় জয়ন্তদা কোথা থেকে যেন উদয় হোলো। “কি রে কি হয়েছে ?” খুব পরিচিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞাসা করল। তারপর সেদিন অনামিকাকে বাড়ি পৌছে দেবার ব্যবস্থাও করে দিল।

জয়ন্তদার সাথে তার পরে অনেকবার দেখা হয়েছে অনামিকার। প্রায় নিয়ম করেই। আজব ধরনের মানুষ। নেপালে ভূমিকম্প হোক, প্যারিস-এ আতঙ্ক, কিংবা বাংলার মেট্রো টিকিটের দাম বাড়ুক। জয়ন্তদার কোনো কিছু যেন আসে যায় না। খবরের কাগজ পড়ে না, নিউজ চ্যানেল দেখে না। কিন্তু মাঝেমধ্যে বাস্তব নিয়ে জ্ঞানের কথা বলে। সেসব কথা অনামিকার ভালো লাগে। একবার বলেছিল “কুকুর তোমায় কামড়ালে কুকুরকেও কামড়ানোর দরকার নেই, কিন্তু তাকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে ভাগানো খুবই দরকার।” এখন যেন অনামিকার মনে হয় ঠিকই বলেছিল। দিদিটা খুব উত্পাত করছে তো, শুধু শুধু অনামিকার পেছনে লাগা।

ত্রিশাদির বাড়িতে জয়ন্তদাকে ওরকম অশ্লীল অবস্থায় দেখার কথাটাও একবার বলেছিলো কথায় কথায়। জয়ন্ত শুধু হেঁয়ালি করে ছন্দ কেটেছিল “মানুষ মেরে মানুষ হবে, এটাই আধুনিক নীতি ; প্রতিহিংসার গল্প গুলি একদিন দেবে ইতি। “

অনামিকা এখন জার্নালিজম নিয়ে পড়ছে। সেমিস্টার-এ এসায়ন্মেন্ট দিয়েছে একটা আর্টিকেল লিখতে হবে। সেটা যে কোনো বিষয়ের ওপর হতে পারে। ভাবনা চিন্তায় ছিলো অনামিকা। জয়ন্ত বিষয়টা বলে দিল ‘স্ট্রিট ফাইটার’।

কিন্তু এরা তারা নয় স্ট্রিট ফাইটার বলতে আমরা যাদের বুঝি। এরা টাকার বিনিময়ে রাস্তা-ঘাটে কোনো গুপ্ত জায়গায় একে অপরের সাথে মারামারি করে রক্ত বওয়ায় না। এরা তারা, যারা জীবন অর্জনের জন্য রক্ত জল করে ঘরে ফেরে।

জয়ন্ত অনামিকাকে একটা ক্যামেরা-ওলা মোবাইলও দিয়েছে, প্রত্যক্ষ দর্শনের জন্য বাইকে করে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়েছে। অনামিকা বেশ কিছু ছবিও নিয়েছে। বড়বাজারে ঝাঁকা বোঝাই করা মুটে, দড়ির ওপর খেলা দেখানো বাচ্চা মেয়ে, ট্রাফিক পুলিশ, সারাক্ষন গাল খাওয়া বাস ড্রাইভার, শেয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসা ভীড়, রাস্তা পার হতে ব্যাস্ত ভীড়, বাটি হাতে ভিখারী, পাগল, ছটা বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানো একটা মা কুকুর।

জয়ন্তদার ল্যাপটপ আর ডেটাকার্ড টা সাথেই নিয়ে এসেছিল। সেটাতেই কাজ করছিলো অনামিকা। সেটা দেখে তার মা তাকে বলে “লোভ, অভিমান, হিংসা এসব বড় কম দামে আমাদের মধ্যে চলে আসে কিন্তু তার মূল্য বোঝাই করা এত সহজ নয়। সুচিস্মিতার কি হয়েছিল মনে রাখিস।”

সুচিস্মিতা, ত্রিশাদির বাল্য-বন্ধু। অভাবী সংসার থেকে বিখ্যাত অভিনেত্রী হওয়ার স্বপ্ন-এর গল্প। এক বিখ্যাত ও সফল অভিনেতা একটা রিয়ালিটি শোতে বলেছিলেন “স্বপ্ন কি? যা চোখ বন্ধ করে ঘুমের মধ্যে দেখি ? না। স্বপ্ন সেটাই যার জন্য দু-চোখের ঘুম চলে যায়। “

কিন্তু কি মূল্যে ?

সুচিস্মিতার ছোটবেলার সময় তাদের পাশের বাড়িতে একটা বাক্স দেখেছিল। সে বাক্সের ভেতরে একটা পৃথিবী আছে। সেখানে সুন্দর সুন্দর মানুষ থাকে। তারা কখনো গান গায়, কখনো নাচ করে। সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে। কত সুন্দর জীবন তাদের। সুচিস্মিতার খব মন টানতো। বড় হতে বুঝতে পারে সেই বাক্সের ভেতরের পৃথিবীর রহস্যের কথা। সেখানে পৌঁছবার লালসা এতটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল যে নিজের সৌন্দর্য-যৌবন ব্যাবহারে ঠিক-বেঠিকের খেই হারিয়ে ফেলেছিল।

সুচিস্মিতা আত্মহত্যা করেছিলো। তার কয়েকদিন আগে ইন্টারনেট-এ নীল্ দুনিয়ায় তার একটা অশ্লীল চলচিত্র দেখা গেছিলো। বিবেক যখন কড়া নাড়ে সেটা সহ্য করা নাকি সবচেয়ে বেশি দুস্কর। সুচিস্মিতারও তাই হয়েছিলো।

জয়ন্তদা এত সাহায্য করছে কেনো ? এই প্রশ্নটা বহুবার মাথায় এসেছে অনামিকার। কিন্তু কোনদিন জিজ্ঞেস করা হয়নি, আর তার উত্তরও মেলেনি।

কাঁচের একটা গ্লাসে খানিকটা হুইস্কি ঢেলে অর্নবকে বাড়িয়ে দেয় জয়ন্ত । তারপর, অনেক্ষনের নিরবতা ভেঙ্গে জয়ন্ত বলে ‘তুই যে একদিন আমার সাথে দেখা করতে আসবি, জানতাম ।” অর্নব খুবই খুশি ছিলো সেদিন, ত্রিশা তাকে জানিয়েছে যে সে বাবা হতে চলেছে। কুরিয়ার থেকে একটা পার্সল এসছিলো অর্ণবের অফিসে অর্নবের নামে। একটা খামে শুধু একটা পেন-ড্রাইভ, একটা কাগজও ছিলো। তাতে টাইপিং করে লেখা আছে ‘শুনলাম তুই বাবা হতে চলেছিস, কিন্তু এটাও জেনে রাখ বাচ্চাটার বাবা তুই নোস্। ‘ পেন-ড্রাইভটা ল্যাপটপে লাগিয়ে ওপেন করতে দেখে বেশ কিছু ত্রিশার ছবি। ত্রিশার বিয়ের থেকে শুরু করে ত্রিশার বাথরুমে তোলা নগ্ন সেলফি। ‘কে পাঠিয়েছে ? কেনো পাঠিয়েছে ? আর কোথাও কিছু নেই। কুরিয়ার সার্ভার-এর কাগজটাতে যে এড্রেস তা দেওয়া আছে সেটা যে মিথ্যে সেটা যাচাই করে দেখে নিয়েছে। জমি যেন অর্নবকে আঁকড়ে ধরে রয়েছে। ধীরে ধীরে যেন কোথায় তলিয়ে যাছে অর্নব বুঝতে পারছে না।

ত্রিশার অন্যরকম আচরণ অনেকবারই নজরে পড়েছিল, বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ওভাবে অতক্ষন ত্রিশাকে না খুঁজে পাওয়া সব যেনো তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।

ত্রিশা প্রায় বাড়ি থেকে কোনো না কোনো অঝুহাতে বেরিয়ে যেত, বেশিরভাগ দুপুরবেলা। অর্নব অফিস যাওয়ার নাম করে একবার ত্রিশার পিছু করেছিলো।

“কি চাইছ তুমি ? টাকা ?”

জয়ন্তর ঠোটে চিলতে হাসি, যেন অর্নবকে ব্যঙ্গ করছে । তারপর বলতে শুরু করে “জানিস, ত্রিশাকে কেউ ছুঁলে আমার মাথায় রক্ত উঠে যেত । ভালবাসার মানুষকে সমাজের কাছে, পরিবারের কাছে নিজের নাম দিয়ে ভোগ করার সুখ আমি শুধু ধারনাই করতে পারি । তুই টাকার জোড়ে মানুষটাকে তো পেলি, কিন্তু তার আত্মাকে তৃপ্তি দিতে পারলি না ।”

“এবার থেকে তুই প্রত্যেক মুহুর্তে ভাঙবি, প্রত্যেক মুহুর্তে ভাঙবে তোর অহংকার, যেমন আমার ভেঙেছিল । বিশ্বাস কর, আমি খুব মজা পাব । এই সময়টার জন্য আমি বহুদিন অপেক্ষা করেছি । এই মজাটা তুই টাকা দিয়ে মেটাতে পারবি না।” আরো কিছু হয়তো জয়ন্ত বলতো । তারমধ্যে অর্নবের হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেলো । শক্ত চোয়াল, ঘনঘন দীর্ঘশ্বাস পরছে অর্নবের । “বিশ্বাস করি না আমি, তুই মিথ্যে বলছিস ।”
অর্নবের কথা শুনে জয়ন্ত খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে । উফ কি বিরক্তিকর হাসি, কানে লাগে, অসয্য লাগছে সে আওয়াজ ।
জয়ন্ত মোবাইল বার করে অর্নবের হাতে ধরায় । তাতে চলছে অশ্লীল চলচিত্র । সাপ ব্যঙের, খাদ্য-খাদকের খেলাঘর । যেখানে খাদ্য প্রতিবাদ করে না, প্র্শ্যয় দেয় । একে অপরকে কামড়াচ্ছে, খিমচাচ্ছে । আর চলছে একে অপরের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালাগালি। এই যেন তাদের শেষ রাত। অর্নব আর সহ্য করতে পারছিলো না। খুব ভালোভাবেই জয়ন্ত সেটা বুঝতে পারছিলো। ‘তোর বউ আমায় বলেছে যখন আমি ওকে কাছে পাব না তখন যেন আমি এটা দেখে নিজেকে শান্ত করি।’ আবার হাসে “তোর্ সবতো শেষ অর্নব, এবার তুই কি করবি ?”

সেদিন জয়ন্তর সাথে আমার দেখা হয়েছিল । পচা একটা গন্ধে যখন আমার জ্ঞান এলো দেখি পুরানো আলমারির আয়নার ওপাশ থেকে জয়ন্ত আমায় দেখে হাসছে । গন্ধটা ওর গা দিয়েই আসছে । নোংরা একটা খেলা খেলে আসছে এতদিন ধরে, ওর মানসিক চিন্তা-ধারা পচে গেছে । হাতে কি ছিলো জানি না, ছুড়ে মারলাম । আয়নাটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো । পায়ের কাছে পরে থাকা একটা কাঁচের টুকরোতে দেখা যাচ্ছে তখনও জয়ন্তর কুত্সিত চেহারাটা । তখনও হাসছে , যেন বলছে “প্রতিশোধ তো আমাকে দিয়েই নিলি, ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে গেছে, আজকে আমাকে নোংরা মনে হচ্ছে ? আমার গা দিয়ে গন্ধ বেরোচ্ছে ? আমার জন্যই তো হলো সব ।”

ত্রিশার প্রানটা তখনও বেরইনি । পেটের ওঠা নামায় শ্বাসের চলাচল উপস্থিতি জানায় । তখনও ত্র্রিশার ছলছলে চোখ দুটো নীলচে কালো তারা মাখা আকাশের দিকে তাকিয়ে । পাশে আন্ডার কনস্ট্রাকশনের আকাশছুই ইমারত । যেখানের ওপর তলা থেকে কিছুক্ষন আগে ত্রিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে ।
কলকাতার একটু বাইরে এরকম জায়গা অনেক পরে আছে, বছর বছর ধরে একইরকম অবস্থায় । ত্রিশাকে অর্নব এরকমই এক জায়গায় নিয়ে এসেছিল নতুন ফ্ল্যাটের মাপকাটি দেখার অজুহাতে । চারিদিক নির্জন, অর্নব হোমওয়ার্ক করেই এসেছিলো । ত্রিশাকে বুঝতে দেয়নি বিন্দুমাত্র । এমনকি তার রাগে লাল চোখ দুটো, যাতে ঘেন্না বেশি ছিলো না প্রতি মুহুর্তে মরার ভয় বেশি ছিলো সেটুকু দেখার বা বোঝার সুযোগ দেয়নি ত্রিশাকে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ত্রিশার প্রানটা বেরিয়ে যাবে, মুহুর্তে মুছে যাবে ছোটো থেকে মনে মনে পুষে রাখা অভিমান, নিজের প্রতি ভালবাসা, অন্যের প্রতি অভিনয় । মুছে যাবে, যে কাকিমার দেখাশোনায় বড় হলো সেই কাকিমার প্রতি অছেদ্দা করার আফশোস । নিজে মা হওয়ার স্বপ্ন। নিজের সন্তানকে সেই সবরকম আনন্দ সুখ দেওয়ার ইচ্ছা যেগুলো সে কোনদিন পায়নি।
কেউ কোনো সময়ে দেখবে হয়তো । তারপর থানা-পুলিশও হবে । সনাক্ত হবে লাওয়ারিশ লাশটার ।।

সমাপ্ত

মন্তব্য করুন