Skip to content

চব্বিশ বছর — নীল অঞ্জন

বাড়িতে সেদিন বৈঠকী মজলিস বসেছিল,
কে যেন উচু গলায় বাবাকে সন্মোধন করে
বলে উঠেছিল, শুনেছো _____ বিপিন দা!
বাবার স্বপ্রশ্ন চাউনিতে উত্তর এসেছিল,
বলছি, ওপাড়ার মুখুজ্যেদের ছোট-বৌটার কথা।
কি যেন নাম ছিল তার?
হ্যাঁ রেবতী কিংবা কামিনী
অথবা হবে হয়তো ঐ ধরণের কিছু!
স্বামীর নাম কার্তিক, মনে আছে আমার।
সেবার যেবার বন্যায় ভেসে গেল পাড়াগাঁ,
মানুষের অন্ন জোটে না আর,
পুরুতগিরি শিকেয় তুলে কার্তিক ছুটেছিল শহরে।
তারপর আর খবর ছিল না তার।
বছর ঘুরতেই সকলে বলেছিল, বেঁচে নেই!
ওমনি মেয়েটার মাছ খাওয়া ঘুচে গেল,
লালপেড়ে শাড়ির বদলে শরীরে উঠেছিল সাদাথান।
গলায় সোনার হারের বদলে তুলসীর মালা।
এর কিছুকাল পরেই একদিন
রাতের অন্ধকারে পালিয়ে বেঁচেছিল মেয়েটি,
এক ছোট জাত, মাছওয়ালার হাত ধরে।
সারা গায়ে, লোকমুখে ঢিঢি পড়ে গেল!
বাবা শুনে বলেছিলেন বেশতো,
মেয়েটা অন্তত মাছ খেতে পেল!

বাড়িতে সেদিন ম-ম করা ইলিশের গন্ধ!
আমি বাটিতে করে সদ্য ভাঁজা ইলিশ খেতে বসেছি।
শান্তিজল ছিটাতে এসে থমকে গিয়েছিল অণুপিসি।
তারপর রাগে গড়গড় করতে করতে,
ওম শান্তি, ওম শুদ্ধি বলে দুয়ারে খানিক গঙ্গাজল!
তারপর অণুপিসির দ্রুত ঠাকুরঘরে চলে যাওয়া।
মা দেখে বলেছিল, আহা বেচারি!
চব্বিশ বছর মাছ খায়নি অণুপিসি।
আইবুড়ো নাম কাটিয়ে বিয়ের পরদিন
ফেলে গিয়েছিল যে লোকটা, তার জন্য চব্বিশ বছর;
চব্বিশ বছর মাছ ছোঁয়নি অণুপিসি!

রাত্রির অন্ধকারে রান্না ঘরে শব্দ পেয়েছিলাম।
উঠে দাঁড়াতেই সাদা কিছু ছুটে পালিয়েছিল আঁধারে।
সকালে সোরগোল, ভাজা মাছ একটাও নেই বাটিতে!
অণুপিসি সেই সাত-সকালে, তখনো ঠাকুর ঘরে ___
বললাম একটা সাদা বেড়াল ঢুকেছিল কাল রাতে।
আমার মনে পড়ছিল সেদিনের সেই, বাবার কথাটা;
মেয়েটা অন্তত মাছ খেতে পেল!
অণুপিসি তুমি কেন এমন করলে?
চব্বিশ বছর আগে, তেমনি কোন রাতের আঁধারে
কোন মাছওয়ালার হাত ধরে কেন পালিয়ে গেলে না!

মন্তব্য করুন