কর্তাবাবু
শান্ত চৌধুরী
# আজকের আকাশের রঙ অন্য দিনের চেয়ে ভিন্ন রকম মনে হচ্ছে, প্রকৃতির রূপ মানুষকে ভাবনার ত্রিমোহনায় নোঙ্গর করে, ভাবনা, কল্পনা, ঐশ্বরিক প্রবাহে, মানুষের চারিত্রিক গুণাবলি মানুষকে অন্য উচ্চতায় পৌছে দেয়।
সকালে অফিসে এসেই এক কাপ চা চাই সমর সাহেবের, অন্য দিনের মতো কলিং টিপতেই জাফর চলে আসে, কিন্তু তিন বার কলিং বেল টিপলেন সমর বাবু কারো কোন সাড়া শব্দ নেই। খুব মেজাজ খারাপ হচ্ছে সমর সাহেবের, বদ গুলো সব কি অফিস ফেলে পালিয়ে গেছে নাকি। দ্রুতই রুম থেকে বের হয়ে এডমিনকে জরুরী তলব করে। এডমিন মুকবুল সাহেব ভয়ে ভয়ে সমর সাহেবের রুমে আসলেন, মুকবুল সাহেব কে দেখে সমর বাবু খুব ক্ষেপে গেলেন, কি সব লোকজন রেখছেন ? কলিং বেল টিপতে টিপতে হয়রান হয়ে গেছি কারো আসার খবর নেই? জাফর, আলীম কেউ কি আজ অফিসে আসেনি ? আসছে স্যার, জাফর এমডি স্যারের জরুরী কাজে বাহীরে গেছে, আলীমের শরীর খারাপ অফিসে চলে গেছে, মুকবুল সাহেব বল্ল স্যার কি সমস্যা বলুন আমি দেখছি, সমর সাহেব আরো রেগে গিয়ে মুকবুল সাহেব কে রুম থেকে বের করে দিলেন।
# মুকবুল সাহেব সকালেই এক বুক হতাশা নিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু করলেন।নিজের রুমে এসে মনে মনে চিন্তা করলেন মানুষের মানুষিকতা নিয়ে! অথচ ঘন্টা, দিন, মাস, বছর জীবন থেকে হারিয়ে যায় স্মৃতির প্রবাহে, আর কেউ আসে কেউ চলে যায় সময়ের ব্যবধানে প্রান্ত বদল করে অন্য কোন ভালো সুযোগ সুবিদের অন্বেষণে। তবুও মানুষের জীবন থেকে থাকেনা জীবন প্রবাহে।
# সকাল ১০ টা সাতাশ মুকবুল সাহেব ঘড়ির দিকে চোখ রাখলেন, ১০.৩০ মিনিটে মিটিং নতুন বায়ারের কাজ শুরু হবে, কোন আয়োজনের কমতি নেই তারপরও ভয় কখন কোন কাজের যে ভুল সুত্র তুলে ধরা হয়। অফিসের বস বলা চলে সমর সাহেবকেই মালিক পক্ষের লোক তেমন একটা আসেনা, যদি জরুরী কোন মিটিং না থাকলে।
সময় মতো সবাই চলে আসে,প্রয়োজনীয় সকল আলাপ আলোচনা, কর্ম-পরিকল্পনা, কার্যক্রম শুরু ও শেষের লক্ষমাত্রা ঠিক করে মিটিং এখানেই শেষ।
# সমর সাহেব রুমে প্রবেশ করতেই জাফর পিছু পিছু রুমে দৌড়ে গেল, স্যার কেমন আছেন ? ভালো সমর সাহেবের সক্ষিপ্ত উত্তর। অন্য স্যারদের মতো কারে ভালো মন্দ শুনার সময় সমর সাহেবের নেই। জাফরকে কিছু কাজের কথা বলে সমর সাহেব কাজে মনোযোগ দিলেন।
কিছুক্ষণ পর জাফর সমর সাহেবের চা – নাস্তা নিয়ে রুমে গেল, অন্য দিনের চেয়ে গরম আজ একটু বেশী। চা নাস্তা টেবিলে রেখে সমর সাহেবকে প্রশ্ন জাফরের!
স্যার গরম আইজকা অনেক বেশী আপনার এসি কি ঠিক মতো কাম করে। সমর সাহেবর সক্ষিপ্ত উত্তর এখনও দেখছি ঠিক আছে। সমস্যা হলে তোমরাতো আছো।
সকাল সকাল অফিসে এসেই সবাইকে জরুরী তলব করলো এমডি সাহেব, সাথে ২ জন ডিরেক্টর , সমর সাহেব, মুকবুল সাহেব, আকিব সাহেব, রোকেয়া মেম সবাই গত ২ মাসের হিসাব নিকাশ নিয়ে দ্রুত বোর্ড রুমে আসলেন।
হিসাব নিকাশ চলছে, সবাই নিরব এমডি সাহেবের সামনে সমর সাহেব ফাইল / লাভ লচের হিসাব উপস্থাপন করলো। গত দু মাসে কোম্পানী লাভ করছে সকল খরচ বাদ দিয়ে ১কোটি ২০ লক্ষ ইউ এস ডলার।
# কাজ কর্মের জামেলায় খুব বেশী ব্যস্ত সমর সাহেব, জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলেন না, এমডি সাহেব মাঝে মধ্যে একটু ডেকে পাঠালে অথবা মিটিংএ বসলে সবার সাথে একটু কথা হয়। আজ সমর সাহেবের মন সকাল থেকেই ভালো, কর্ম-পরিকল্পনা মতো কাজ হচ্ছে কিনা সবাইকে ডেকে মিটিংএ বসলো। সমর সাহেব, মুকবুল সাহেব, আকিব সাহেব, রোকেয়া মেম অন্য দিনের চেয়ে একটু হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, সবার কথা বার্তা খুব পজেটিভ, ব্যবসা ভালো হচ্ছে মালিকপক্ষ খুশী, বায়ার খুশী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই খুশী। সমর সাহেব কলিং বেল টিপতেই আলীম এসে হাজির, স্যার কিছু লাগবে জিজ্ঞাসা করলো আলীম, সমর সাহেবের সক্ষিপ্ত উত্তর সবার জন্য নাস্তা / কফি নিয়ে আসো। আলীম দ্রুতই রুম থেকে বের হয়ে গেলো।
# তিন চার দিন অফিসে সবাই খুব বেশী ব্যস্ত। মাঝে মাঝে বাহীরের এক/দু’জন লোক দেখা করতে আসে সমর সাহেবের সাথে। কিছু নতুন লোকজনের সাথে পরিচয় হচ্ছে, নিজেও ব্যবসার কাজে হাত দিয়েছেন।সমর সাহেব বুদ্ধিমান লোক, সবাইকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন সব সময়, হয়তো রুমে অফিসের লোকজন যাতায়াত করলে তার ব্যক্তিগত ব্যবসার ক্ষতি হবে, যতটা এরিয়ে চলা যায়। তাছাড়া সমর সাহেব, আজ কাল খুব ভাবে থাকে, কাউকে পাত্তা দেয়না। এমন কি এমডি, ডিরেক্টর কাউকে না।
# চিরন্তন সত্য মানুষকে অনেক কিছু শিক্ষা দেয় , আকিব সাহেবের বেলাও তাই ঘটলো, আকিব সাহেবের উপর কোম্পানির অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ মালিক পক্ষের, জরুরী মিটিং ডেকে আকিব সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে, প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন। যদিও বিষয়টি অফিসের অনন্য কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অন্য ভাবে দেখে কেউ সমর সাহেবের ভয়ে মুখ খুলতে পারেনা।
# রঙিণ স্বপ্নের পিছনে মানুষ ছুটে, স্বপ্নের চেয়েও কিছু সময়, কিছু মানুষ বড় হয়। স্বপ্নের চেয়ে অনেক বাস্তবতায় ঠাঁই হয় জীবন প্রবাহ, সফলতা হাতছানি দেয় যখন সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা কোন বাঁধা হয়ে আসেনা শুধু সফলতার গল্পই জীবন ও বাস্তবতা ফুঁটে ওঠে। তবে ভাগ্য, সময়, সফলতা যখন যাকে ছুঁয়ে যায় পৃথিবীর কোন পিছুটান তাকে স্পর্শ করতে পারেনা সফলতা ছাড়া ব্যর্থতাকে । মানুষ স্বপ্নের পথে ছুটে চলে অনবরত কেউ সফল হয় কেউ ব্যর্থ হয় তবুও জীবন থেমে থাকেনা। জীবন আর জীবিকা না থাকলে স্বপ্ন, সফলতা, ব্যর্থতার গল্প কিছুই থাকতোনা মানব জীবনে । স্বপ্নের ফেরিওয়ালা মানুষ কর্ম আর সফলতা,ব্যর্থতায় বেঁচে থাকে। আর কর্তাবাবু বেঁচে থাকে ঘৃণা আর অভিশাপের বিস্তর দলিল হয়ে।
বিঃদ্রঃ গল্পের চরিত্র, বিষয় সবই কাল্পনিক / কারো সাথে মিলে গেলে লেখক দায়বদ্ধনা।
ধন্যবাদ ।