Skip to content

ওরে মরার ক্ষিধা —(মাহ্ফুজ নবীন)

-এই কেউর ধারে এট্টু বিষ হইবে?
মুই কাউরেই কিচ্ছু কমু না
কেউরে জানতেও দিমু না
ক‍্যাডা মোরে
বিষ দিয়া উপকার হরছে

-এক্কালে মুই অল্পট্টূহানেই খামু
ক্ষিধার জ্বালা আর সহ‍্য হয় না

-আর সহ‍্য হরতে পারি না
কেউ মোরে এট্টু বিষ দে—

চারিদিকে শুনসান নিস্তব্ধতা
একাই দিব‍্য চিৎকারে বকে চলছে
দূর থেকেও শোনা গেলেও
কারো কোন আগ্রহ নেই
এই বার্ধক‍্যের বিলাপ শোনার;
আবারও একইভাবে বকতে লাগলো
যখন জিজ্ঞসা করতে গেলাম

-এই যে কি হয়েছে আপনার?

-কিচ্ছু হয় নাই।
হুইন্না কী হরবেন?

-বয়স হইছে তো,
একছের ক্ষিধা লাগে

-আপনি কিছু খাবেন?

-খাওন দেবেন?

“কি খাবেন? বলেন

-খুব ক্ষিধা লাগছে
দ‍্যান য‍্যা দ‍্যান—

একটু কাছেই একটা দোকান থেকে একটা কলা, রুটি দিয়ে ওনার কাছে হাটুমুড়ে বসলাম

-কয়দিন খান নাই?

-তিন চাইরদিন হইবে

-কি বলেন!

-হঃ বাবা
গলায় দড়ি দিয়া ঝুল্লা মরলে
লোকে কয় পাপ হয়

-কেন আপনি মরতে যাবেন?

-পাপ হইবে দেইখ‍্যা আর হুনছি
এই বয়সে গলায় দড়ি দিয়া
মরলে মানে কি কইবো?
দ‍্যাখ “বুড়া মাগিও গলায় দড়ি দ‍্যায়!”
শোন বাবা- ভালো একটা শক্ত- দড়ি
কেনার পয়সা থাকলে কি আর মরতে চাইতাম?

আমি বাকরুদ্ধ; শুধু তাকিয়ে শুনছি বৃদ্ধা কি বলে চলছে

-কইতে পারো? আর কত বয়স হইলে
দ‍্যাশ আমারে তিন বেলা খাইতে দিবো?
স্বাধীনের কালে আমার বয়োস আছিল বারো বচ্ছোর
ব‍্যাডায় যুদ্ধে যাইয়া যোদ্ধা হইতে গেছিলো
আর ফিইরা আওনের নাম নাই;
কইছিলো ‘ফুলজান’ আমি ফির্রা আমু;
সব মিছা কথা কইয়া গেছে

-এইডা নাকি আমাগো দ‍্যাশ হইবো,
দ‍্যাশ স্বাধীন হইবো,
আবার ঠিক মতোন কাম কাইজ কইরা
ঠিক মতোন খাইতে পারমু
সব মিছা কথা কইয়া গ‍্যাছে,
সব মিছা কতা।

-ওরে ক্ষিধা; ওরে ক্ষিধা!
ওরে মরার ক্ষিধা। খালি লাগতেই থাহে।

কয়েক কামড়েই রুটি আর কলায় কামড়ে কামড়ে
যেন খুব প্রতিশোধে নিয়েই কথাগুলো বলতে লাগলো
আমার আর কোন উত্তর রইলো না।

আমার ব‍্যস্ততা হয়তো
বৃদ্ধাও বুঝতে পেরে বলে উঠলো—

-যাও বাবা; আল্লাহ্ তোমার ভালো করুক।

মন্তব্য করুন