Skip to content

এ কেমন ভালবাসা – ফারহানা চৌধুরী

হাসিখুশি মেয়ে তারা। গেল বছর এস এস সি পাশ করেছে। জিপিএ ফাইভ পাওয়াতে বাবা তাকে একটি মোবাইল কিনে দেন। সিলেট থেকে বদলি হয়ে পুরো পরিবার ঢাকা আসে। তারাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকার নামকরা একটি কলেজে। কলেজে সে একদম নতুন। কাউকে চেনেনা। এ অচেনার মাঝে থেকেও কয়েকদিনে বেশ ভাল ফ্রেন্ড পেয়ে যায় সে। দিনে ক্লাস আর রাতে পড়াশুনা। এভাবে সময় চলতে থাকে তারার। এভাবে কেটে যায় একটি বছর। একদিন হঠাৎ তারার মোবাইলে অচেনা নম্বর থেকে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লিখা ছিল আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি? তারা বুঝে উঠতে পারে না কি করবে? সে কোন জবাব দিল না। পরদিন সাহস করে সে ঐ অচেনা নম্বরে ফোন করল। মৃদু কণ্ঠে তারা বলল হ্যালো। আপনি কে? জানা গেল ছেলেটির পরিচয়। নাম অভি। অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার নম্বর কিভাবে পেলেন। এর জবাব দেয় না অভি। উল্টো আবার প্রশ্ন করে। আমরা কি বন্ধু হতে পারি? তারা জীবনে প্রথম কারো কাছে বন্ধুত্বের অফার পায় তাও অচেনা কেউ।সে উত্তরে কিছুই বলে না। শুধু বলে আমার এক্সাম চলছে।পরে কথা বলব। এ বলে তারা ফোন রেখে দেয়। এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস। খুব কম কথা হত তাদের। কথার চেয়ে চ্যাটিং হত বেশি। এভাবে করেই খুব ভাল বন্ধু হয়ে যায় তারা আর অভি। একে অপরকে দেখেনি। তারপরেও বন্ধুত্বের এত টান যে একে অপরের সাথে একদিনও কথা না বলে থাকতে পারে না। বোঝাই যায়, এ বন্ধুত্বের অন্তরালে একে অপরকে হয়তো ভাললাগতে শুরু করেছে। যা ভবিষ্যতে হয়তো রূপ নেবে ভালবাসায়।
এভাবে সময় কেটে যায়। তারা এইচ এস সি তেও ভাল ফলাফল করে। যতটুকু খুশি তারা এবং পরিবার তার থেকেও যেন বেশি খুশি অভি। এ খুশিতে তারা ঠিক করে দেখা করবে। ঠিক হলো তারার কলেজের কাছাকাছি কোন এক স্হান। তারা সেদিন অভির পছন্দের সবুজ রং এর শাড়ি আর ছোট সবুজ টিপ পড়ে হালকা সাজে এলো। ভারী মিষ্টি লাগছিল তাকে দেখতে। আর অভি পড়ে আসে কালো টি শার্ট আর প্যান্ট। একে অপরকে দেখে। অভির পছন্দ হয় তারাকে তারাও ভাবে এ যেন ঠিক আমার স্বপ্নের রাজকুমারের মতো। অবশেষে তাদের দেখা হল। তারা এখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর অভি চতুর্থ বর্ষ। দুজন এখন প্রায় দেখা করে। এভাবে চলে যায় বেশ কয়েক মাস। এক সময় একে অপরকে দুজনে ভাললাগার কথা জানায়। শুরু হয় তাদের ভালবাসার প্রথম গল্প।
ভালবাসা ভালই চলছিল। যত দিন যায় তাদের ভালবাসা আরও গভীর হয়। অভির পড়ালেখা শেষ হয়ে যায় এক সময়। চাকরি করে সে এখন। চাকরিতে ঢোকার পর যেন ব্যস্ততার কারণে সে আর আগের মত তারাকে সময় দেয় না। তারার খুব কষ্ট হয়। সে নীরবে কাঁদে। কিছু করতে পারে না। আগে যেখানে অভি তার সারাদিন খোঁজ নিত। সে অভি আজ তারাকে ফোন দেয়া তো দুরের কথা। তারা ফোন দিলেও সে ধরত না। ধরলেও ব্যস্ত বলে রেখে দিত। তারা বুঝতো অভি ব্যস্ত। কিন্তু তাই বলে কি তারাকে একদম ভুলে যাবে? একটুও কি সময় তার কাছে নেই তারার জন্য। এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে শুধু ঝগড়াই হতো তাদের মাঝে। এভাবে করে এক সময় তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরে। অভি একদিন সরাসরি তারাকে বলে দেয় যে তাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ। খুব কাঁদে তারা। চিৎকার করে। একদম একা হয়ে যায়। এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস।
একদিন তারার খুব ভাল বিয়ের কথা আসে। তারা কি বলবে বুঝতে পারে না। একদিকে সে অভিকে ভুলতে পারে না। তাই সে বিয়ে করবেনা। অন্যদিকে অভি তো এখন তাকে চায় না। তাহলে সে কি করবে। কোনকিছুর হদিস করতে না পেরে সে বিয়েতে রাজি হয়। হবু বর এর সাথে কথা হয় তার।কিন্তু সে কথার মাঝে ছিল না কোন ভালবাসা। সে নিজেই বুঝলো আমি এ লোকটিকে ভালবাসিনা। এটাও সে বুঝলো সে অভির উপর জিদ করেই বিয়ে করতে যাচ্ছে। মনে মনে ভাবে সে অভি যদি ফিরে আসত। ঠিকই অভি একদিন ফিরে আসে। নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চায়। আসলে কাজের চাপে সে এতটাই ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল যে কাউকেই চিনত না। এখন কি করবে তারা? বিয়ের কথা বহুদূর এগিয়ে গেছে। এখন কিভাবে সে মানা করবে। আর অভিকে সে ভুলে যায়নি। তবে তার উপর খুব অভিমান তারার। এখন সে অভিকে ফিরিয়ে দিল। কিন্তু সে পারছেনা তাকে ভুলে থাকতে। এদিকে অভির পাগলের মত অবস্হা। কখনও তাকে দেখা যায় তারার বাড়ির সামনে। কখনও ইউনিভার্সিটির সামনে। মূল কথা তারার পেছন পেছন। খুব কাঁদে অভি। আর একটা সুযোগ চায় তারার কাছে। তারারও মন কাঁদে অভির জন্য। অবশেষে তারা বিয়েটা ভেঙেই দিল। সকল বাঁধা বিপত্তি পার হয়ে দুজন এক হল।
অভির চাকরি চলে গেছে। নতুন চাকরির সন্ধানে সে। ভাল চাকরি পায় না। যা পায় তা তার পছন্দ হয় না। একটা ভাল চাকরি হলে আর দেরি করবে না। তারাকে বউ করে ঘরে তুলবে। তারাও অপেক্ষায় রইল। এভাবে দিন যায় তাদের। সময় ভালই যাচ্ছিল। হঠাৎ এক ঝড় এসে তাদেরকে চিরতরে আলাদা করে দিল। তারা এখন অনার্স শেষ বর্ষে। হঠাৎ তারার উপর নজর পড়ে তারই এক সহপাঠী ছেলে জিসানের। তারা বিষয়টা কিছুটা বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু সে সব স্বাভাবিকভাবেই উড়িয়ে দিত। জিসান পড়াশুনার নানা অজুহাতে তারার কাছে আসতে চেষ্টা করত। কিন্তু তারা সেটা বুঝতেই পারত না। সে ব্যাপারটা অভিকে কিছুটা শেয়ার করে। অভি তখন তারাকে সতর্ক করে যেন সে নিজেকে সামলে রাখে। জিসান আসলে তারাকে পছন্দ করত ঠিকই কিন্তু তার পছন্দ ছিল অন্যরকম। কারণ তারার আচরণ দেখে নয় তারার বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রতি তার ছিল লালসা। সে তারাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে প্রপোজ করতে চেষ্টা করে। তারার কোন ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সে তারার উপর শারীরিক আক্রমণের চেষ্টা করে। তারা অনেক কষ্টে নিজেকে রক্ষা করে। সে মন থেকে ভেঙে পড়ে। কাউকে কিছু বলতে সাহস পায় না। অভির খুব কষ্ট হয় তারার এ নীরবতায়। সে অভিকেও কিছু বলতে পারেনা। নিজেকে খুব অপরাধী ভাবে তারা। অভি বারবার সাবধান করেছিল তারাকে। কেন যে সে শুনলো না। তারা এদিকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে থাকে। তার কিছুই ভাল লাগেনা। সবার সাথে সে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে। মা বাবা ভাই বোন এমনকি অভির সাথেও। কিন্তু অভি হাল ছেড়ে দেবার নয়। তারাকে একবার হারাতে হারাতে আবার পেয়েছে। এবার আর যাই হোক তারাকে কিছুতেই একা ছাড়বেনা। তারার কষ্ট তাকে জানতেই হবে। অনেক জোর করার পর অবশেষে তারা অভির কাছে মুখ খুলল। কিছুটা আশ্বস্ত হলো। কিন্তু কে জানত ঘটনা অন্যদিকে মোড় নিবে। অভি জিসানের উপর এতটাই ক্ষেপে যায় যে সে জিসানকে শাস্তি দেবার প্রতিজ্ঞা করে। কিন্তু না। জিসান খুব চালাক আগে থেকেই সে এরকম কিছু বুঝতে পেরেছিল। তাই সে তারার বিরুদ্ধে এমন কিছু মিথ্যা রেকর্ড তৈরি করে যা তারা আর অভিকে চিরতরে আলাদা করে দেয়। অভি এসব দেখে ভুলে যায় তারা দীর্ঘ সম্পর্কের সে তারাকে, যে তারাকে সে মনপ্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তারা খুব কাঁদে। সে কান্না অভির কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। আড়াল থেকে শুধু জিসানের হাসিমুখ দেখা যায়। কারণ সে পেরেছে তার বুদ্ধিতে অভি আর তারার এত বছরের সম্পর্ক এক নিমেষেই ভেঙে চুরমার করে দিতে।
অভি কাঁদে। তারা কাঁদে। কেউ কারো কান্না দেখেনা। দেখার চেষ্টাও করে না। হয়তোবা জিসানের ছলনা অভি আর তারাকে চিরতরে আলাদা করে দিয়ে চলে গেল। কেউ আজ কারো সাথে নেই। ভবিষ্যতে আবার দুজন এক হবে কিনা জানা নেই কারো। তবুও তাদের পবিত্র ভালোবাসার স্মৃতিগুলো তাদের অন্তরে জেগে থাকবে চিরকাল ধরে।
“”””””””সমাপ্ত””””””””””

মন্তব্য করুন