Skip to content

উপন্যাস // মানবিক ( পর্ব ছয় )

মানবিক-

অফিস ফেরত মৃধা আর দীমান ঘরে ঢোকে মাঝ রাত্রে প্রায় টলতে টলতে, ওদের ফ্রেন্ডশিপের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে জোর পার্টি খাওয়া,দাওয়ার পর গ্লোবে নাইট শো , যাকে বলে প্রাণ খুলে এনজয় ! উফ্ কতদিন পর দীমানকে একেবারে নিজের মত করে পাওয়া , নাহ্ সহযে এ সময়টা ছাড়া যাবে না । যে যাই বলুক । অফিসের র্সোন্যাল সেক্রেটারী মিস্ মৃধা আজ মিসেস অম্বানী , মিঃ অম্বানীর কো মেট । আটকাবে কে ? রুপে,গুনে, বিচারে কোথায় পর্ণা আর কোথায় মৃধা । প্রথম দ্যাখায়ই যার প্রেমে উন্মাদ দীমান প্রায় ওর রুপেই এপয়েন্ট করেছিল যাকে এই সেই রুপসী মৃধা , দীমানের কলিজা , নেশা সব । কলিং বেল বেজেই চলেছে অঘোরে ঘুমোচ্ছে ওরা, ঘুমচোখে কোনরমে দরজা খোলে দীমান, সমুখে দুধের প্যাকেট ,খবরের কাগজ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে চামেলী , ” আরে কা ছাহাব ? ইত্তা টায়েম সে ………..” ঠিক আছে ” ! বাথরুমে ঢুকে যায় দীমান , মনে মনে বিরক্ত হলেও নিজের কাজে মন দেয় , বাসন কোসন একটাও এঁটো নেই, ঘর দোর ঝাড় পোছ করা,পরিষ্কার করা , সাহেব বেরোলেন ,” দু’টো কফি বানা, চারপিস এ্যমন্ড টোস্ট , দুটো ওমলেট তারাতারি দে “। ” ইত্তা যাদা “? ” হ্যাঁ মৃধা এসেছে ” ” উ কৌন হে ছাব ” ? ” তোর ভাবীর বহিন “দীমানের অস্পষ্ট উত্তর । এর মধ্যে পায়ে পায়ে মৃধা ফ্রেশ হয়ে দীমানের পাশের চেয়ারে বসে , কি গো কিছু বলছ ? চামেলীকে প্রশ্ন করে মৃধা, উত্তর দেয় না চামেলী, খাবার আসে টেবিলে , ছাব ! হমি পুছলম কি ভাবী ক্যয়সা হে” ?” ভাল আছে ” ” তোমার ভাবীর জন্য মন খারাপ করছে ” দীমানের পাশ কাটিয়ে মৃধার প্রশ্ন” কাহে নাহি ? উ তো মেরা ভগওয়ান হে , ‘ ” আচ্ছা , তাই নাকি ” মুখে মৃদু হাসি ।” তু কা জানে পুছো না ছাব সে, হায় না ছাহাব ? মেরা তো কোই না থে উ ভাবী মেরেকো ইত্তা সারি প্যার দিয়া কা বোলে” , বাম হাতের কনুই দিয়ে চোখ মোছে চামেলি । ” তোমার চেনাজানা কেউ আছে, আমার মা আর বাবা থাকেন , একটু দেখাশোনার জন্য বিশ্বাসী মেয়ে পাচ্ছি না গো ” মৃধা অপেক্ষা করে উত্তরের ।” নাহি দিদি, লোক তো হ্যয় লেকিন বিসওয়াসী হোবে কি না ও হম নাহি জানে , বাত কা দিদি ওয়সে হম গাঁওবালী এক লড়কী কো ভেজে থে লেকিন দো তিন রোজ বাদ উ শালী ঘরবালীর সোনে কি হার লেকে ভাগা , বোলো হমরা কা কসুর ? তবসে হম নাক,কান মোলে কি কভী কিসিকো কামপে না দু , কিউ কি উ হমরা ইজ্জত লিয়ে ভেগে গেল “! ” মৃধা আমি স্নানে গেলাম,দীমান টয়লেটে ঢোকে ” ” হ্যাঁ , আমিও যাবো ” চামেলী বাইরের লনে জল দিতে যায় টবে , বেগেনভেলিয়ার থোকা থোকা ফুলে ভ্রমরের আনাগোনা , আলতো করে হাত বোলায় , গাল ঠেকায় ভাবীর মতো , ওখানে ওর গন্ধ পায় চামেলী, পাশের ফ্ল্যাটের মহিলাটি কি যেন জিজ্ঞাসা করছে বোঝা যাচ্ছে না তবু , অনুমানে উত্তর দেয় চামেলী, ” হা ভাবিজী অসপতালমে আচ্ছা হে, হম্ আতে হে থোরা কাম করনে, কামবালী বাই হে না , তুমরা উও ভাবী আপিস মে হে? মন্ নাহি লগতা লেকিন কা করে , “বাচ্চাটি ফুল দেখায় হাত দিয়ে । অপকা বেটা বহৎ খুব সুরত আছে বলে দু’ কানের উপর দু হাত উল্টে বলে, ” লাজা বেটা হে ,উমমম্ !!! ” আমরা বেরোচ্ছি , চাবিটা নিচের তলার ভাবীর কাছে রেখে যাস “দ্রুত পায়ে লিফটের দিকে যেতে যেতে সঙ্গে মৃধারও সিহেব ” চললাম গো “” টা টা , বাহ্ কি সুন্দর মহিলাটির কোমড়ে হাত রেখে খিল খিল হাসিতে গাড়িতে উঠে বসল দুজনে, তারপর ড্রাইভার নয় আজ নিজেই গাড়ী ড্রাইভ করবে সাহেব, বেড়িয়ে গেল আল্ট্রা “, মুষড়ে পরে চামেলী, এই পাঁচ বছরের কাজে কোনদিন সাহেবকে এত খুশী দেখেনি চামেলী,এত প্রাণবন্ত ? কিন্তু কেন ? এতে কি যায় আসে কামবালীর ? কোথাও জ্বলণ ? কিংবা নিরীহ ভাবীর জন্য সহমর্মিতা ? সাজগোজ করলে ভাবীও কিছু কম সুন্দরী নয় ,তবে ?
কোনদিন মুখ ফুটে কোন দুঃখের কথা ভাবি বলেনি ওকে , তথাপি ওর মধ্যে কোথাও যেন এক অভিমানী নারীর গন্ধ পেত চামেলী । তাছাড়া সাহেবকে কোনদিন ভাবীর সাথে গল্প করা, ভালোবাসা , খুনসুটি করা চোখেই পরে নি কিংবা দেখেনি কোনদিন । আজ যেন পর্ণার জীবনের এক বৃহত্তর ক্ষতের সন্ধান পেয়ে রহস্য ক্রমশঃ ঘণীভূত হয় চামেলীর ! তবে কি ,”ভাবিজী ভি হমরে তরা দুখী হে ” ? ভেতর ভেতর এক্কেবারে ভেঙে পরে ও । এই ক’টা বছরে হৃদতন্ত্রীর গভীরতা যেন কোথাও গেঁড়ে বসেছে অস্তিত্ব , আপনাপন , এককথায় স্রেফ ভালোবাসা । ভিন্নতর জগৎ হলেও দুই নারীর অন্তরের আকূলতায় কোন পার্থক্য নেই ।পার্থক্য নেই চাওয়া পাওয়ায় , গভীরভাবে উপলব্ধ হয় ভাবীর এত কাছে থেকেও কোনদিন বিন্দুমাত্র টের পায় নি এতখানি বেদনার কথা কিন্তু চোখ তা বুঝে নেয় খুব তারাতারি , অধিক বেদনা যন্ত্রণা হয়ে ঝড়ে পরতেই থাকে গাল,গলা,শরীর বেয়ে……..এ যন্ত্রণা কিসের বোঝে চামেলী । নারীরা নারীর অসম্মাণে খুশী হয় কি? কেন নয় ? তবে এত নারীর জীবনের সমস্ত সুখের ক্ষেত্রগুলি ধ্বংসসাধনে প্রায়শই দেখা যায় নারীর গোপন প্রচেষ্টারই বেশী সফলতা , তাহলে চামেলী অযথা কষ্ট পাচ্ছে কেন ? সেও তো সময়ের, বিশেষত সাহেবের একাকিত্বের ফায়দা নিতে পারত , নিদেনপক্ষে বেশীরভাগ মহিলা যা করে ? সময় গড়িয়ে চলেছে সাথে ভাবনা, কোনরকম কাজ শেষ করে গ্রাউন্ড ফ্লোরের খুশী বৌদির ফ্ল্যাটে নক করে চামেলী দরজা খুলে ভেতরে আসতে বলে বৌদি , তুমি চামেলী ? হ্যাঁ ভাবী ! কেমন আছেন উনি ? ভাল ভাবীজি ! হন্তদন্ত হয়ে উত্তর দেয় চামেলী। হঠাৎ ওকে ওভাবে পরে থাকতে দেখে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম খুশী বৌদির অক্ষেপ !ঠিক বোলা ভাবী হমভি ডর কে মারে কিসিকো ন পুছে ।ব্যাপার কি ? আরে ভাবী মাত্ পুছে উও তো দুসরে ওরত লেকে ঘরমে ঘুষে গেল ভাবীকো কা হোগা ? ইত্তে অচ্ছে হে কি কুছো বোলত্ নাহি চামেলী হাফাতে থাকে । সত্যি ? তবে তো দারুণ চিন্তা রে ! সচ্ বাত আছে ভাবী , ছি! উও ওরত রত কো খুশীয়া মনায়ে ,খায়ে পিয়ে কোই এয়স্যা গন্দা হরকত ক্যায়সে কর সকতে ?দমবন্ধ রহস্য চেপে রাখতে না পেরে উগরে দেয় চামেলী। জানি না রে , আহা রে ! দেখে তো মনে হয় ভদ্র লোক খুব ভালো। ঐসে ভাবী দেখনে মে অচ্ছা লগতা হে লেকিন হ্যায় কোই অলগ কিসম কা আদমী। উসকা বাত চিৎ হমকা অচ্ছা নাহি লাগত , তুম হি বোলো অসপাতল মা ভাবী কয়সা হে ,হমরা মন করতা দেখনে । আচ্ছা তুমি এখন যাও আমি স্নানে যাব, খুশী বৌদি পূজার সময়ের কোন হের ফের সহ্য করেন না । ঠিক হে । অফিস থেকে ফোন ,” হ্যালো ডঃ স্মিথ , কাল একটু ব্যাস্ত থাকায় খবর নিতে পারিনি । জানি অাপনি আছেন “। ঠিকই জানেন । উনি সুস্থ আছেন । আজ বিকেল পাঁচটায় আসছি ।আসুন । আমিও শান্তি পাচ্ছি না ।পেসেন্টের বেডে চলে যায় ডঃ , অঘোরে ঘুমোচ্ছে পর্ণা ,কি স্বাভাবিক,কি নিস্পন্দে, ওদিকে ওর ছোট্ট ঘরটা জুড়ে আছে পাষন্ড কাপুরুষের মর্মান্তিক পরিণতি,ভাবলেই ভয়ে গায়ে কাঁটা দেয় । এই অসভ্য শয়তানের হাত থেকে ওর মুক্তি কি ভাবে সম্ভব ভেবে পায় না ডঃ । এগিয়ে এসে হাতের প্রেশার ,হার্টের গতি চেক করেন । ফিরতে উদ্যত হলে ওর হাত ধরে টানে পর্ণা,”আর একটু বোস না আমার পাশে , ওর পাশে এসে বসে প্রত্যুষ , ” এখন একটু ভাল লাগছে ”? একটু থেমে থেমে জনায় পর্ণা । দীমান আসেনি না ? কি জানি কি করছে একা , নম্বরটা একটু রিং করবে ? ঠিক আছে তুমি অত কথা বোল না , আমি ফোন করছি ,হ্যান্ডসেট অন করে প্রত্যুষ ” হ্যালো দীমানবাবু ? আপনি বিকেলে আসছেন তো” ? হ্যাঁ আসছি ।পর্না আপনার কথা জানতে চাইছে ।ওকে বলুন আমি ঠিক আছি বিকেলে আসছি ।স্পীকারে দীমানকে শুনে আস্বস্হ হয় ও। মাথাটা প্রচন্ড ভারী লাগছে , দু পাশের কানের দিকটা অসহ্য যন্ত্রণা , নিম্নাঙ্গ অসার , কেমন একটা আচ্ছন্নতা ওকে নিষ্প্রাণ করে তোলে, “আচ্ছা , প্রত্যুষ , আমার সন্তানটা আর নেই না “? তুমি সব জানতে পারবে প্লিজ এখন একটু তো চুপ কর । এরপর মাথায় ব্লিডিং শুরু হলে খুব সমস্যায় পড়বে তুমি । আমি ঘুমোলে তুমি চলে যাবে না তো প্রত্যুষ ? কোথায় আর যাবো বল ?আমার হাতের উপর হাত রেখে বলনা গো , আমি কি কোন ভুল করছি? বুঝলাম না !দীমানের পাপ গ্রহণ করে আমি কি কোন ভুল করছি ? এতে তোমার কি দোষ ? তোমার স্বামী তোমার এই বেশ দেখতেই বেশী পছন্দ করেন , দ্যাখো এট লিস্ট তোমার পরিস্থিতি তোমার এই রুপ তৈরী করেছে কাঁদছ কেন পর্ণা ? পৃথিবীর সব মানুষ কি সমান হয় ? ‘ সে আমি জানি না,তবে তোমার কিছুই কি করার নেই প্রত্যুষ? তবে আমরা মিলিত হলাম কেন ? কেন আবার এতকাল পরে তুমি আমার কাছে এলে ? তুমি কি ভাব এর কোন অর্থ নেই ? এখনই সময় আমাদের একত্রিত হবার ! না হলে আর কখনো নয় ।ঐ পাষন্ডটা বাড়ী নিয়ে গিয়ে আবার আমাকে ওর নোংরা কাজে লিপ্ত করাবে তার আগে তুমি আমায় নিয়ে পালিয়ে চল প্রত্যুষ প্লিস্ ,চল অনেক দূরে গিয়ে আমরা দুজনে ঘর বাঁধি ! শক্ত করে ধরে রাখে পৃথিবীর সবচাইতে আপন জনের হাত । তুমি পাগল হয়ে গেছ পর্ণা , কি বলছ তুমি নিজেই জান না । এভাবে সম্ভব নয় । তুমি বাড়ী যাও,সুস্থ হও তারপর ধীরে সুস্থে আমরা দুজনে ঠিক করব ,প্রয়োজন হলে তুমি ওকে ডিভোর্স দেবে । আমি চাই আমাদের মিলনটা হোক্ নিট এন্ড ক্লিন বুঝলে ? কঠিন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে পর্ণা একান্ত আপনজনের দিকে একটু একটু করে হালকা করে হাতের বাঁধন, পরে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে হতাশার স্বরে বলে, তুমি কোনদিনই ওকে চিনতে পারবে না প্রত্যুষ আর সময়ও পাবেনা ওকে চেনবার ,তারপর ধীরে বন্ধ করে চোখ। গড়িয়ে চলেছে জলের ধারা ,থামছে না ওর সর্বস্ব খোয়ানোর অশ্রুপাত , জোর করে টেনে ওর দুই হাত বুকের নিবিড়ে চেপে ধরে দীমান , ” এখানে কি চলছে টের পাও ? পাও ? কত সহস্র ভাঙা গড়া নিঃশব্দে , পাও কি শুনতে ? তোমার কি কিছু করার নেই পর্ণা ? টেল মি প্লিজ্ ….” ওর চোখেও চিকচিক জলের ধারা । নিঃশব্দ কেবিন , থেমে থাকা কিছুটা নিথর মুহূর্ত সাক্ষী হয়ে থাকে কেবিনের দরজা ,জানালায় দুটি অশান্ত হৃদয়ের শরীর মনের নিরবচ্ছিন্ন এক তোলপাড় অধ্যায় ।

মন্তব্য করুন