Skip to content

ঈশ্বরের সাথে বোঝাপড়া (২) – অনিকেত দাস

মৃত্যুর পরে শেষ ইচ্ছে নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা সভা বসেছে…
বাইপাসের ধারে এক বেসরকারি হাসপাতালে
সব ভেন্টিলেশনে যাওয়া মৃত্যুমুখী মানুষদের সাথে
ঈশ্বর আলোচনা সভায় মজেছেন ….
একজন ঈশ্বরকে বললেন, আমার মৃত্যুর পর
শ্রাদ্ধ-শান্তিতে আমার পরিবার যেন অনেক গরীবকে খাওয়ানোর সামর্থ্য পায়, আমি খাওয়াতে ভালোবাসতাম মানুষকে,
ভদ্রমহিলার বাড়ি উত্তর কলকাতায়, রুই-পোস্ত বানানোয় পরিচিতদের কাছে বেশ নামডাক….
*
আর একজন বললেন, পরের জন্মে আমি যেন পরিযায়ী পাখি হয়ে জন্মাতে পারি, আমার আবার বেড়ানোর খুব শখ….
লোকটা সরকারি অফিসে কেরানী ছিলেন, মধ্যবিত্তদের যা হয় আর কি!
*
কেউ বললেন, আমার যেন আর মানুষ রূপে জন্ম না হয়, ভীষণ কষ্ট পেলাম জীবনে
কানাঘুষো শোনা যায় এই ভদ্রলোকের দুটো বিয়ে ছিলো…
*
আর একজন বললেন, পরের জন্মে যেন আমি গায়ক হয়ে জন্মাতে পারি, নিজের ইচ্ছেমতো গাইতে পারি,
শোনা যায় ভদ্রলোক বাথরুমে গান গাইছিলেন একবার, সেই গান ভালোবেসে কেউ ঢিল ছুঁড়ে বাথরুমের কাচ ভেঙে ফেলেছিলো…
*
কেউ আবার বললেন , আমার মৃত্যুর দিন যেন খুব বৃষ্টি হয়, রাস্তাঘাটে সবার চোখ দিয়ে জলপড়ে…
শোনা যায়, ভদ্রলোক মারাগেলেও চোখের জল ফেলার মতো তিনকুলে কেউ নেই..
*
আর একজন বললেন, আমি ধর্মে হিন্দু কিন্তু আমার দেহ যেন পোড়ানো না হয়, আমাকে যেন কবর দেওয়া হয়…
আসলে ভদ্রলোক স্কুলে পড়াকালীন এক মুসলিম মেয়েকে ভালোবেসেছিলেন, তারপর যা হয় আর কি….
*
আর একজন ভদ্রমহিলা বললেন, আমার মৃত্যুর পর কে কাঁদবে জানিনা, কিন্তু আমার ছোটোছেলের বউ যেন খুব কাঁদে
শোনা যায় ভদ্রমহিলার সাথে ছোটো বউমার মোটেই বনিবনা ছিলোনা…
*
কেউ বললো, আমার মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় ‘হরি বোল’ না বলে সবাই যেন রবি ঠাকুরের কবিতা পাঠ করে
ভদ্রলোক নাকি পাড়ায় বিজয়াদশমীতে রক্তকরবীর ডিরেকশন দিতেন…
*
একজন হঠাৎ চেঁচিয়ে বললেন, আমার মৃতদেহ পোড়ানো ছাই এনে যেন আমার ফুলের বাগানে দেওয়া হয়…
শোনা যায়, বাগানতো দূরের কথা এই ভদ্রলোক কখনও একটি গাছও লাগাননি…
ঈশ্বর থমকে গেলেন…
কারণ ঈশ্বর জানেন মৃত্যুর সময় কেউ মিথ্যে বলেনা… কেউ না, তবে?

একজনের কথা শুনে এসে ঈশ্বরও থমকে গেলেন, অনেকদিন….

মন্তব্য করুন