Skip to content

আষাঢ়ের এক সন্ধ‌্যা – প্রভাত মণ্ডল

  • by

———————————
আষাঢ়ের এক বাদলা সন্ধ‌্যা, বিকেল হতে অবিরত বৃষ্টি। সবে মাত্র ৭টা বাজে, রাস্তা-ঘাট শুনশান, একান্ত খুব দরকার না হলে এই বর্ষায় কেউই ঘর থেকে বেরোবে না। রমেন টিউশন পড়িয়ে বাইকে করে ঘরে ফিরছে, এখন বৃষ্টি পড়া একটু কমেছে। আরো একটা পড়ানো ছিল ফোনে বলে দিয়েছে এই বর্ষায় আজ আর যাবে না।
Women’s কলেজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ
স‌্যার, স‌্যার বলে একটি মেয়ে ডাকে, রমেন বাইক দাঁড় করায়, কলেজের সামনে বাস স্ট‌্যান্ডে হতে একটি মেয়ে
ছুটে আসে।
রমেন বলে, কিরে নমিতা এখানে কি করচ্ছি?
নমিতা বলে, স‌্যার কখন থেকে দাড়িয়ে আছি কোনো
বাস নাই, একটা এক্সটা ক্লাস ছিল, তাই দেরি হয়ে গেছে। অনেকক্ষণ হতে বাস নেই। একটু বাড়ি পর্য‌্যন্ত নামিয়ে দেবেন।
রমেন বাস স‌্যান্ডের দিকে গাড়ি লাইট ফেলে দেখে এক ভদ্রলোক, ও দুটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
নমিতা বলে ওই ভদ্রলোক ওদের প্রফেশর আর মেয়ে দুটো ওর বান্ধবী। স‌্যার ও ওরা দুজন একই জায়গায় থাকে, অটো ভাড়া করে চলে যাবে। নমিতার জন‌্যই ওরা যেতে পারছিল না।
নমিতা নবম ও দশম শ্রেনীতে রমেনের কাছে পড়তো সায়েন্স গ্রুপটা, রমেন ওদের বাড়িতে গিয়েই নমিতাকে পড়াতো। মাধ‌্যমিকে নমিতা ৮৫% নম্বর পেয়ে পাস করেছে।
রমেন বলে, গাড়ীতে বস।
নমিতা বাইকে উঠে বসে, রমেন বাইক চালাতে আরম্ভ করে।
নমিতা বলে, স‌্যার আপনার সঙ্গে কতদিন পর দেখা, আপনি কি এখানে থাকেন না।
রমেন তাকে জানায় সে বছর তিন কলকাতায় একটা প্রাইভেট অফিসে কাজ করছিল, সেখানে পোষায় নি বলে, আবার দূর্গাপুরে এসে টিউশন আরম্ভ করেছে।
নমিতা বলে, বুঝতে পারছিলাম আপনি এখানে থাকতেন না।
রমেন বলে, কি করে বুঝতে পেরেছিস তুই, আমি এখানে
থাকতাম না।
নমিতা হেয়ালী করে বলে, পড়ে বুঝতে পারবেন। নমিতা বলতে থাকে আপনাকে কতদিন পর দেখলাম, এই যে কথা বলচ্ছি খুব ভালো লাগচ্ছে।
কথায় কথায় নমিতাদের বাড়ি সামনে বাইক এসে দাড়ালো।
নমিতা বাইক থেকে নেমে স‌্যার আসুন বলে।
রমেন দেখে আজ যখন আর টিউশন যাবেই না, কাকু
কাকিমার সঙ্গে দেখা করে নেবে। রমেন গাড়ী থেকে নামে, নমিতা গেট খুলে আগেই বাড়ীতে ঢোকে।
গেট খোলার আওয়াজ পেয়ে নমিতার বাবা বাড়ীর দরজা খুলে এগিয়ে আসেন।
কে মাস্টার মহাশয়, চিৎকার করে স্ত্রীকে ডেকে বলেন,
দেখো কে এসেছেন, নমিতার মাস্টার মহাশয় এসেছেন।
আসুন আসুন ঘরে আসুন।
রমেন জুতো খুলে ঘরে ঢুকে সোফায় বসে, আড়ষ্টতার কোন কারন নাই, এই বাড়ী প্রত‌্যেকটা দেওয়াল ওর চেনা।
রমেনের দেওয়ালের দিকে চোখ যেতেই মনটা আঁতকে উঠে। এটা কি ধরনের ছেলে খেলা, জল -জ‌্যান্ত মেয়েটার ফোটোতে মালা দিয়ে রেখেছে।
রমেন নমিতাকে ডেকে এই কথাটা বলতে যাবে,
ঠিক সেই সময় দেখে চোখ মুছতে মুছতে কাকিমা এসে বললেন, স‌্যার অনেকদিন পর কি মনে করে?
রমেন বলতে আরম্ভ করে টিউশন থেকে আসার সময় নমিত তাকে দেখতে পেয়ে ডেকে বলে অনেকক্ষণ ধরে বাস নাই, তাই এদিকে আসা।
নমিতার বাবা চিৎকার করে বলে এ কি ধরনে তামাশা আপনার।
রমেন বুঝতে পারে না এই কথার অর্থ। রমেন দেখে নমিতা দরজার সামনে দাড়িয়ে চোখে জল।
নমিতার মা জানায় আগের বছর এই রকম এক বর্ষার
সন্ধ‌্যায় অঙ্কের অনার্সের একটা ক্লাস করা পর নমিতা, ওর
অঙ্কের প্রফেশর আর দুই বন্ধু বাসের জন‌্য স্ট‌্যান্ডে অপেক্ষা করছিল, হঠাৎ একটা বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে
বাস স‌্যান্ডে ধাক্কা মারে, সেখানেই ওদের চার জনের মৃত‌্যু
হয়,
রমেনের বিশ্বাস হয় না, রমেন দরজা দিকে তাকায় নমিতার চোখে জল নিয়ে মুচকি হাসছে।
রমেন কিছু বলতে যায়, কিন্তু মুর্ছিত হয়ে যায়।

মন্তব্য করুন