Skip to content

~ আমি হিমু (২য় পর্ব)

আসসালামু আলাইকুম–

লেখকঃ সাইম আরাফাত (হিমু)

খালা আমাকে দেখে তেমন চমকালেন না।তিনি এমন ভাব করতে লাগলেন যেন তিনি জানতেন আমি এই ভিজে কাপড় পড়া অবস্থায় তার বাড়িতে এসে উপস্থিত হব।আমি হাসি মুখে বললাম, কেমন আছ,খালা?
খালা শুকনো মুখে উত্তর দিলেন,ভালো আছি।
আমি ভিতরে ঢুকলাম।খালা বলল,গরম পানি করছি,তুই গিয়ে চট করে গোসল করে আয়।
—না খালা আমি গোসল করব না।কি জন্যে ডেকেছ সেটা বল।

খালা এবার প্রায় কেঁদে ফেললেন বললেন,হিমু রে,তুই আমার ছেলেটাকে বাঁচা।আমার ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে।

—পাগল হয়ে গেছে? এটা তো ভালো কথা।পৃথিবীতে পাগলরাই সবচেয়ে সুখী মানুষ।তারা যখন যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। চাইলে একটা খুন ও করতে পারে,তাতেও তাদের কিছু হবে না কারন পাগলদের জন্য তেমন কড়া আইন নেই।বাদল,পাগল হয়ে গেছে এটা তো ভালো কথা,এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।
— পাগল হয়ে যাওয়া ভালো? এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই?
—হুম।
—হিমু,শোন।তোর এসব সস্তা পাজলামি আমি অনেক শুনেছি,আর শুনতে চাই না।তুই যেভাবে পারিস বাদলকে ভালো করে দে।
—আমি কিভাবে ভালো করে দেব? আমি তো কোনো পাগলের ডাক্তার না।
—আমি জানি তুই ই পারবি।
—আচ্ছা দেখি কি করা যায়।
—দেখাদেখির কিছু নেই,তোকে ভালো করতেই হবে,তোর খালু তো ছেলের শোকে প্রায় আধমরা হয়ে গেছে।হার্টের রোগ, কখন কি হয়ে যায় বলা যায় না।একমাস ধরে অফিসে যাচ্ছে না।

আমি উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললাম,ঠিক আছে বাদলের সাথে দেখা করে আসি।বাদল কোথায়?
—বাগানে।

আমি বাদলের সাথে দেখা করতে বাগানের দিকে যেতে লাগলাম।বাদলদের বাগানে যেতে হলে খালু সাহেবের ঘরটার পাশ দিয়ে যেতে হয়।আমি খালু সাহেবের ঘরে উঁকি দিয়ে দেখলাম খালু সাহেব মদ খাওয়ার ব্যবস্থা করছে,গ্লাসগুলো সাজাচ্ছে।আগে খালু সাহেব ছাদে বসে ড্রিংক করতেন।এখন মনে হয় পুত্র শোকে ঘরে বসেই করেন।আমি খালু সাহেবের রুমের পাশ থেকে সরে এলাম।

বাদলদের বাগানটা বিশাল।খালু সাহেবের বাবা এই বাগান করে গিয়েছিলেন।এখানে অনেক ধরনের ফুল গাছ আছে তবে লাল রংয়ের কোন ফুল নেই।কারন খালু সাহেব লাল রং চোখে দেখেন না।তিনি Red colour blind.বাদলকে দেখলাম মোটা রেইনট্রি গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। কাছে গিয়ে দেখলাম ও গাছে রক্ত দিচ্ছে।মানুষের তাজা রক্ত।আমি বললাম,কিরে বাদল! কি করছিস?

বাদল তার বত্রিশ পাটি বের করে বলল,গাছকে রক্ত দিচ্ছি।

—রক্ত দিচ্ছিস ভালো কথা তা রক্ত পেলি কোথায়?

—ব্লাড ব্যাংক থেকে কিনে এনেছি।মা কি তোমাকে কিছু বলেছে?
— কি বলবে?
—এই যে আমি গাছে রক্ত দিচ্ছি, উলঙ্গ হয়ে হয়ে দরজা বন্ধ রেখে ধ্যান করছি।তারা ভাবছে আমি পাগল হয়ে গেছি।
—উলঙ্গ হয়ে ধ্যান করছিস?
বাদল এবারও তার বত্রিশ পাটি বের করে বলল,ওমা!ভুলে গেলে,তুমিই তো বলেছিলে যে,উলঙ্গ হয়ে দরজা বন্ধ করে ধ্যান করলে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা পাওয়া যায়।

—বলেছিলাম হয়ত। তা তুই কি কোনো আধ্যাত্মিক ক্ষমতা পেয়েছিস?

—হিমু ভাই,তোমার যা কথা! তুমি তো বলেছিলে টানা ১০ বছর এই সাধনা করতে হবে,তবেই আধ্যাত্মিক ক্ষমতা পাব কিন্তু আমি তো মাত্র একমাস হলো শুরু করেছি।
—ও আচ্ছা।চালিয়ে যা..হাল ছাড়িস না।ক্ষমতা তুই পাবিই।তোর মধ্যে সেই ক্ষমতা পাওয়ার স্পৃহা আছে।
—আমি চালিয়ে যাচ্ছি।আর গাছে কেন রক্ত দিচ্ছি যান?
—জানি।তবুও তোর মুখ থেকে শুনতে চাই।

—ও তুমি তো জানবেই।তুমি তো যে কেউ না তুমি হলে হিমু।আচ্ছা শোন আমি কেন গাছকে রক্ত দিচ্ছি।আমার মন হলো মানুষের যেমন রক্ত দরকার গাছদেরও দরকার।কিন্তু তারা বোবা বলে নিজের মুখে বলতে পারে না।রক্তের অভাবে মারা যায়।

—তুই কিভাবে বুঝিস কোন গাছের রক্ত লাগে?

—আমি দেখি কোন গাছগুলো সাদা, যে গাছগুলো সাদা, মাটি কালার, বুঝতে হবে সেই গাছের রক্তের অভাব আছে।যেমন ধর এই রেইনট্রি গাছটার রং ছিল মাটি কালার।আমি টানা এক সপ্তাহ রক্ত দিয়েছি,এখন দেখছ না গাছটার কালার কি হয়েছে? একেবারে লাল হয়ে গেছে,,এখন গাছটার শরীরে পর্যাপ্ত রক্ত আছে।মানুষদের যেমন তিন মাস পর পর রক্ত বদলাতে হয়,গাছদেরও তেমনি বদলাতে হয়। তিন মাস পর আমি আবারও এই গাছটাই রক্ত দিব।ভালো করছি না হিমু ভাই?
— ভালো করছিস।আচ্ছা তুই রক্ত দিয়ে যা আমি খালুর সাথে এই ফাঁকে দেখা করে আসি।
—হিমু ভাই,বাবার কাছে ভুল করেও যেও না।বাবা তোমার উপর ভীষণ ক্ষেপেছে।তোমাকে পেলে নাকি পুলিশে দেবে।কিন্তু আমি জানি পুলিশ তোমাকে কিছুই করতে পারে না কারন তুমি হিমু।
—পুলিশে দিলে তো ভালোই হয়।অনেকদিন পুলিশের খাতির যত্ন পায় না।
—কি যে বল তুমি হিমু ভাই!!আচ্ছা শোন আজ তুমি আমার সঙ্গে থাকবে আজ কোথাও যাবে না।তুমি দেখবে আমার আত্যাত্মিক ক্ষমতা লাভের ধ্যান কেমন হয়।আর আজ সারা রাত আমরা মুভি দেখব।নতুন নতুন মুভি এনেছি।
—ঠিক আছে।

আমি এখন খালু সাহেবের ঘরের দিকে হাঁটা লাগালাম।খালু সাহেবের ঘরে সামনে দাড়াতেই খালু সাহেব বললেন,কে?হিমু? ভেতরে আস।
আমি ভেতরে ঢুকলাম।দেখলাম খালু এখনও ড্রিংক করছে।আমি বললাম,খালু,কয় পেগ হলো?
—মাত্র ১০ পেগ নিলাম কিন্তু এখনও ঠিক মতো নেশা হচ্ছে না।আচ্ছা ছাড় এসব।তুমি কি বাদলের অবস্থা টা দেখেছ?
— না তো কি করেছে?
—দেখনি তুমি?
—না আমি তো এসেই সোজা আপনার ঘরে চলে এলাম।
—আমার ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে।হারামজাদাটা৷ন্যাংটো হয়ে ঘরে দরজা বন্ধ করে ধ্যান করে।এটা একটানা দশ বছর কান্টিনিউ করলে নাকি ও কিসের আধ্যাত্মিক ক্ষমতা পাবে।আর এই আইডিয়া তুমিই ওকে দিয়েছ এতে আমি শতভাগ নিশ্চিত।এরকম পাগলামি বুদ্ধি তুমি ছাড়া আর কেউ দিবে না।
—খালু এটা পাগলামি বুদ্ধি না।ইন্ডিয়ার এক সাধু এভাবে দশ বছর সাধনা করে…
—থাম তুমি।আমাকে শেখাতে হবে না।হিমু?
—জ্বী।
— তুমি যে একটা আস্ত উন্মাদ সেটা কি তুমি জান?
—জানি।
— জান?
—জ্বী,জানি।পৃথিবীর সব মানুষই পাগল,একেক জন একেক রকম পাগল।কেউ টাকার পাগল,কেউ ভালোবাসার পাগল আবার কেউ সম্পদের পাগল,খাওয়ার পাগল।দুনিয়ার সবাই পাগল, কেউই সুস্থ নয়।
— তোমার কাছ থেকে আমি এসব দার্শনিক কথাবার্তা শুনতে চাইছি না।শোন আমি তোমাকে একটা অফার দিচ্ছি,রাজি থাকলে ভালো,না রাজি থাকলে আমি অন্যব্যবস্থা নেব।
—কী অফার?
—অফারটা হচ্ছে আমি তোমাকে প্রতি মাসে ২০০০ করে টাকা দেব কিন্তু তুমি এই বাড়িতে আসতে পারবে না,কোনদিনও না।ভেবে দেখ…
—ঠিক আছে ডান।
—আমি জানতাম তুমি রাজি হবে।হিমু?
—জ্বী।
—তুমি ছেলে হিসেবে ভালো কিন্তু তুমি যে কেন এসব পাগলামি করে বেড়াও সেটা আমি বুঝি না।তোমাকে আমি ফ্রিতে একটা এডবাইস দেই।সুস্থ হয়ে বাঁচ।সুস্থ মানুষের মতো জীবন যাপন কর।সুস্থ মানুষের মতো জীবন যাপন কর।
—খালু আপনি মাতাল হয়ে যাচ্ছেন।একটা কথা বারবার বলছেন।
—ঠিকই বলেছ।আমার লিমিট ১২ পেগ পর্যন্ত কিন্তু আমি ১৫ ক্রস করে ফেলেছি।আচ্ছা এই নাও তোমার এই মাসের এডভান্স টাকা আর শোন তুমি যে বাদলের কাছ থেকে এসেছ এটা আমি জানি আর বাদল তোমাকে এও বলেছে যে,আজ রাতে তুমি ওর সঙ্গে থাকবে আর ও তোমাকে ওর সাধনা দেখাবে।বলেনি?
—বলেছে।
—গুড….বি ট্রুথফুল ম্যান।শোন হিমু এখন তুমি একটা কাজ করবে।
— কি কাজ?
— তুমি এখন এই টাকাটা নিয়ে সোজা বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবে আর কখনও আসবে না।
— বাদলের সঙ্গে আজ রাত থাকব না?
—না থাকবে না।সোজা বের হয়ে যাবে আর বাদলের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবে না। আমি চাই না ছেলেটা তোমার সঙ্গে যোহাযোগ করে মাথাটাকে আরও বিগড়ে ফেলুক।
—ঠিক আছে….দুপুরের খাবারটা খেয়ে যাই?
—না খাবার তুমি কোনো রেস্টুরেন্ট থেকে খেয়ে নিও, এখন তুমি যা করবে তা হলো তুমি এক্ষণি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে,চিরদিনের জন্য।আমি এই বাড়িতে তোমার মুখ আর কখনও দেখতে চাই না।
—তাহলে মাস শেষে টাকা কোথা থেকে নেব?
— ওটা আমার ম্যানেজার তোমার ম্যাসে পৌঁছে দিবে।এখন বিদেয় হও।
—আচ্ছা।

আমি এখন দাড়িঁয়ে আছি কিসমত রেস্টুরেন্টের সামনে।খাবার খেতে নয়,খাবার আমি বাদলদের বাসা থেকেই খেয়ে এসেছি।আমি এখান থেকে একটা টেলিফোন করব।রূপাকে টেলিফোন করব।আমি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম।রেস্টুরেন্টের মালিক কিসমত মিয়া আমাকে দেখেই বলল,হিমু ভাই না? এত দিন পরে আমার কথা মনে পড়ল? টেলিফোন করতে আসছেন?
আমি আমার পান খাওয়া দাঁতগুলো বের করে হেসে বললাম,হুম,একটা টেলিফোন করব।

কিসমত আমার কাছে টেলিফোন এগিয়ে দিল।আমি ৩ বার ট্রাই করলাম কিন্তু একবারও কেউ টেলিফোন ধরল না।চতুর্থবার রূপার এসে টেলিফোন ধরল।আমি খুশি খুশি গলায় বললাম,রূপা আমি হিমু।
—চিনতে পারছি,কেন ফোন করেছ বলো?
—এমনিই।কিন্তু তোমার গলাটা এমন লাগছে কেন?
—ঘুমুচ্ছিলাম তাই এরকম লাগছে।
—তাহলে তুমি ঘুমাও আমি ফোন রেখে দিই।
—না ফোন রেখ না, তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে।
—কি কথা বলবে?
—এটাই তো সমস্যা,কথা বলতে ইচ্ছা করছে কিন্তু কি কথা বলব তা খুজে পাচ্ছি না।আচ্ছা তুমি কথা বল,তোমার তো কথার অভাব নেই।
—রূপা আজ আমি তোমাদের এখানে আসব।তুমি নীল শাড়ি পড়ে থাকবে।
—তুমি মিথ্যে বলছ…আমি জানি তুমি আসবে না…আচ্ছা তুমি মানুষকে বিভ্রান্ত করে কি মজা পাও? ঐ দিন দেখলাম রাস্তায় কড়া রোদে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করছ।তুমি কেন মানুষকে বিভ্রান্ত কর?
—আমি হিমু।মানুষকে বিভ্রান্ত করাই আমার কাজ।
—তুমি যে পাগল তা তুমি জান?
—জানি।
— তোমাকে দ্রুত ভালো একজন সাইকিয়াট্রিস্ট দেখানো দরকার।নয়ত একদিন দেখা যাবে উলঙ্গ হয়ে রাস্তার মাঝখানে বসে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন করছ।আচ্ছা শোন, আমার চেনা একজন ভালো সাইকিয়াট্রিস্ট আছে,আমি একদিন তোমাকে তার কাছে নিয়ে যাব।
— আচ্ছা।
—তুমি কি জান আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?
—জানি।
—না তুমি জান না..
তুমি কিচ্ছু জান না,তুমি শুধু জান মানুষকে বিভ্রান্ত করে মজা নিতে।প্লিজ তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ তুমি সুস্থ মানুষের মত বাঁচ।
—না রূপা এটা হয় না।কারন আমি হিমু, হিমুকে আর দশটা মানুষের থেকে আলাদা হতে হবে।
—কি হবে আলাদা হয়ে? তুমি কি ভাব,মানুষকে বিভ্রান্ত করলেই,খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটলেই মহাপুরুষ হওয়া যায়?
—রূপা ফোন রেখে দেই…তুমি উত্তেজিত হয়ে পড়ছ।
—না ফোন রেখ না।ফোনটা এক মিনিট ধরে রাখ,কোনো কথা বলতে হবে না,শুধু এক মিনিট ধরে রেখে কেটে দিও।
—আচ্ছা আর শোন তুমি নীল শাড়ি পড়ে থাকবে।

আমি একমিনিট পর ফোন রেখে দিলাম।
আমি কিসমতের দিকে তাকিয়ে বললাম,কত হয়েছে?
—এইডা আপনে কি কইলেন হিমু ভাই? আমি আপনের কাছ থেইক্যা টাকা নিমু?

আমি পকেট থেকে খালুর দেয়া দুহাজার টাকা বের করে কিসমতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,রাখ এটা।
—এইডা আপনে ঠিক করতাছেন না,হিমু ভাই? আমারে টাকা দিয়া লজ্জায় ফালায়া দিতাছেন।আর বিল তো হইছে মাত্র বিশ টাকা আর আপনে দিতাছেন দুইহাজার টাকা?
—পুরোটাই রেখে দাও।
কিসমত লজ্জিত ভঙ্গিতে টাকাটা নিয়ে ক্যাশ বাক্সে রেখে বলল,আপনে কিন্তু আমারে বড়ই লজ্জায় ফেলে দিলেন ভাই সাহেব।
—লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।

আমি কিসমতের রেস্টুরেন্ট থেকে রাস্তায় নেমে এলাম।আমি জানি রূপা আমার জন্যে নীল শাড়ি পড়ে অপেক্ষা করবে।সে জানে আমি আসব না তবুও সে অপেক্ষা করবে।এটার নামই কি ভালোবাসা?আমার কি রূপার কাছে যাওয়া উচিত? না,আমার রূপার কাছে যাওয়া উচিত না কারন আমি হিমু। হিমুর কাজ মানুষকে অপেক্ষা করিয়ে রাখা।হিমুদের মানুষের এত কাছে যেতে নেই…মানুষের এত কাছে গেলেই জন্ম নেবে মায়া আর এই মায়ার বাঁধন থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন।আমাকে যে করেই হোক এই মায়া থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।মায়াকে প্রশয় দিলে চলবে না,আমি হিমু,আমাকে এটা থেকে বাঁচতেই হবে।

আমি রাত বারটায় মেসে ফিরলাম।রুমে ঢুকে দেখি জয়নাল সাহেব রুমে বসে আছেন।তার মুখ খুশি খুশি।তার হাতে মিষ্টির প্যাকেট।আমি রুমে ঢুকতেই তিনি আমাকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দিলেন।তিনি খুশি খুশি গলায় বললেন,ভাই সাহেব,আপনার ভালো হোক।ভাই সাহেব আমার মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আপনি জামাইয়ের যেমন বর্নণা দিয়েছিলেন ঠিক সেরকমই হয়েছে।জামাই মাশাল্লাহ রাজপুত্রের মতো,টাকা পয়সাও মাশাল্লাহ ভালোই আছে।ভাই সাহেব আপনার বহুত দয়া।আল্লাহ আপনার ভালো করুক।
—তা মেয়ের বিয়ে কোন দিন?
—সামনে মাসের পাঁচ তারিখ।ভাই সাহেব আপনার কাছে আমার একটাই আবদার আপনি আমার সাথে আমার মেয়ের বিয়েতে যাবেন…আমার মেয়ের অনেকদিনের শখ সে আপনাকে দেখবে।
—ও আমাকে চিনে?
—চিনবে না মানে? আপনি কি যে সে কেউ?আপনার কথা আমি তার কাছে এত বার বলেছি যে…
জয়নাল সাহেব খুশিতে আর কথা বলতে পারছেন না।
তিনি কষ্ট করেই বললেন,ভাই সাহেব,আপনি যােন তো আমার মেয়ের বিয়েতে?
—অবশ্যই যাব।
—আচ্ছা এখন মেলা রাইত হয়ছে….আপনি এখন ঘুমিয়ে পড়ুন,আমি যাই।

জয়নাল সাহেব রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আমি বিছানায় শুলাম কিন্তু ঘুম আসছে না।তাই আমি আবার ঘর থেকে বের হয়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম।এখন বাজে রাত একটা।এই সময় ঢাকা শহরের রাস্তা-ঘাট প্রায় ফাঁকা থাকে।আমি রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের অল্প আলোতে হাঁটতে লাগলাম।আমার পিছে পিছে তিনটা কুকুর আসতে লাগল।মনে হয় এদের কোনো সঙ্গি নেই,,আমাকে পেল তাই আমার সঙ্গেই যেতে লাগল।আমি সামনের দিকে তাকিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম।এই হাঁটা যেন অনন্তকালের হাঁটা,এই হাঁটার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই।

চলবে……

মন্তব্য করুন