Skip to content

আমার সংসারনামা-পর্ব১- ঈশান মাহমুদ

কথা আছে মনের মিল থাকলে স্বামী-স্ত্রী দুজনে নাকি একটি বেঞ্চিতেও ঘুমাতে পারে। আর মিল না থাকলে এক ছাদের নীচে বসবাস করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। আমার স্ত্রীর সঙ্গে আমার দারুন মিল, আমার স্ত্রী আমাকে পেয়ে রীতিমতো অভিভূত, কারন আমি তার বশীভুত। বিয়ের আগে আমার এক নানা আমাকে উপদেশ দিয়েছিলেন, নাতি বিলাইটা কিন্তু বাসর রাইতেই মাইরা ফেলবা, যদি না পার, তবে নিজেই বিলাই হইয়া যাইবা।’ আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, ‘বুঝলানা ? বাসর রাইতে বিলাই মারার অর্থ হইলো, প্রথম রাইতেই বউকে বশ কইরা ফালাইবা, যদি না পার তবে নিজেই তার বশ্যতা স্বীকার কইরা নিবা। ভুলেও তার সঙ্গে পারত পক্ষে ঝগড়ায় লিপ্ত হইবা না, তাইলে দেখবা, তুমি হইবা জগতের সবচে সুখী ব্যক্তি, আর যদি উল্টাটা কর, তবে তোমার সংসার হবে রণক্ষেত্র আর তোমার বধু হবে রণরঙ্গিনী। রণরঙ্গিনী বধুর একঘেয়ে রণ সঙ্গীত যে কতো ভয়াবহ তা তখন তুমি হাড়ে হাড়ে, রগে রগে টের পাইবা।’ নানার উপদেশ আমলে নিয়ে বার বছর বউয়ের সঙ্গে নির্বিবাদে কাটিয়ে দিলাম। আমার সংসারে তার কথাই শেষ কথা। বিনিময়ে প্রাপ্তিও কিন্তু কম নয়। না চাইতেই বউয়ের ষোল আনা ভালোবাসা পাচ্ছি, ডাইনিং টেবিলে পছন্দের মেনু গুলো পাচ্ছি। আমার একটু অসুস্থায় তার মাত্রাতিরিক্ত উদ্বেগ আর সেবা পাচ্ছি। সুখী হওয়ার জন্য আর কি চাই !

তবে কিছু কিছু ব্যাপারে তার মাত্রাতিরিক্ত খবরদারি খুবই অসহ্য লাগে। যেমন, আমি চা খেলে নাকি প্রায়ই শব্দ হয়। যদিও আমি নিজে কখনো শব্দ পাইনা। সেদিন বিকেলে দুজনে বসে চা খাচ্ছি। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। খুবই রোমান্টিক পরিবেশ। এমন সময় সে বলে বসলো, খবরদার শিয়ালের মতো চু চু শব্দ করে চা খাবে না। বন্ধুরা, জীবনে কখনো কোন শিয়ালকে চা খেতে দেখেছন ? আমার বউ দেখেছে এবং সে শিয়ালটা নাকি আমি। আবার ধরুন তার কোন কথা শুনে আমি হাসছি, তখন সে বলে বসবে শিয়ালের মতো দাঁত কেলিয়ে হাসবা না। অর্থাৎ সে শিয়ালকে শুধু চা খেতে দেখেনি, হাসতেও দেখেছে। সেদিন বঙ্গবাজার থেকে খুব সস্তায় গ্রে কালারের একটা ব্লেজার কিনে আনলাম। সে দেখেই নাক সিঁটকাল, ‘শিয়ালু কালার আমার একদম অপছন্দ’। ইদানিং আমার ফিগার নিয়েও সে আতিশয় চিন্তিত হয়ে পড়েছে। আমি নাকি ক্রমশ ‘আটার বস্তা’ হয়ে যাচ্ছি এবং হাঁটলে নাকি আমার আগে আমার ভুড়ি চলে। কয়দিন আগে সে আমাকে সাফ বলে দিয়েছে, ভুড়ি সাইজে না আনলে সে নাকি আমার সঙ্গে আর বাইরে যাবে না।

আমার বিরুদ্ধে তার আরেকটি অস্বস্তিকর অভিযোগ হলো, আমি নাকি নাসিকা গর্জন করি। যদিও এটা তার ‘সম্পূর্ন মনগড়া’ এবং ‘বানোয়াট’ অভিযোগ। প্রায় রাতেই পাজঁরে কনুইয়ের গুঁতা খেয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তার দিকে ঘুম ঘুম চোখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালে সে বলে, ‘তুমি যেভাবে বাশীঁ বাজাচ্ছ, একটু পরেতো প্রতিবেশীরা সব বংশদন্ড হাতে তোমাকে সাইজ করতে ছুঁটে আসবে’। নাক ডাকার ‘মিথ্যে’ অভিযোগ এনে সে আমার নাম দিয়েছে, ‘নিশিরাতের বংশীবাদক’। আমি অবশ্য এর জোরালো প্রতিবাদ করি। সে একদিন প্রমাণ স্বরূপ মোবাইলে ধারন কৃত একটি ওডিও ক্লিপ শুনিয়ে দিয়ে বলে, কাল রাতে তুমি যখন বাশীঁ বাজাচ্ছিলে, তখন রেকর্ড করেছি’। আমি অবশ্য ট্রেনের হুইসেল ছাড়া আর কিছুই শুনতে পাইনি।
চলবে…

মন্তব্য করুন