Skip to content

অভিশেখের হাগা – ইন্দ্র চন্দ্র নীল

অভিষেকের হাগা।।

অভিষেকের হাগা এক প্রোপাগাণ্ডাকারী পুঁজিবাদী কমিউনিস্ট প্রশ্ন তুলনেন– নেতারা পাবলিকের বাড়িতে শুধু খান কেন? বৈচিত্র্য আনার জন্য হাগতেও তো পারেন৷

এই খবর রাজনৈতিক দলগুলির অফিসে গেল৷ মাথারা ভাবলেন ভেবে দেখা দরকার৷ তৌসিফ হক বলেছেন মানে ভালোর জন্যই বলেছেন৷

জরুরি মিটিং বসলো৷ জনৈক আমলা বললেন– স্যর এই গরমে স্নানও ভালো অপশন৷

ভুঁড়িওয়ালা দামোদর শেঠ গোছের নেতা বললেন– পাগল হো ক্যায়া? হম ক্যামেরা কে সামনে নাহায়েঙ্গে!! কহিঁ গামছা খুল গয়া তো? অর ইয়ে সফেদ পাজামা৷ পানি লগনে সে বর্ডার কা ইধার উধার সব দেখা যাতা হ্যায়৷

এক বাঙালি আমলা বললেন– স্যর গরীবের খাটে একটু ঘুমিয়ে আসুন৷ তাহলে একঘেয়েমিটা কাটে আর কী! তাছাড়া এই অভূতপূর্ব ঘটনায় আপনার নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷
দামোদর শেঠ বললেন– আবে বুড়বক! বোকা আছে নাকি? বঙ্গাল মে উইপোকা কে সাথ সাথ ছারপোকা ভি হ্যায়৷ হিন্দু-মুসলমান করকে উইপোকা কো তো ফির ভি ম্যানেজ কর সকতে হ্যায়, লেকিন ছারপোকা? ইতনা বড়া পিছওয়াড়া হমারা৷ কঁহি না কঁহি সে ঘুস যায়েগা৷ সব ঘুসপেটিয়া আছে!

শেষমেশ ঠিক হল দামোদর শেঠ বাংলায় কোনও দলিতের বাড়িতে হাগবেন৷ আমলারা বারবার বললেন– স্যর রিস্ক নেবেন না৷ খাটা পায়খানায় হাগতে গিয়ে গুয়ে পড়ে যাবেন৷ চোখে সর্ষেফুল দেখবেন৷ এটা বাংলা স্যর৷

দামোদর শেঠ বিচক্ষণ নেতা৷ ঘোড়া কেনাবেচাতেও মুন্সিয়ানা রয়েছে৷ তিনি বললেন– আপলোগ হমসে জাদা জানতে হ্যায়? পাঁচ রাজ্য মে মেজোরিটি না মিলনে পর ভি সরকার বনায়া! হমে মত শিখাইয়ে৷

নেতা সত্যিই বিচক্ষণ। তিহার জেলফেরত আসামিদের মতো অভিজ্ঞ৷ তিনি জানেন প্রকাশ্যে স্নান বা শোয়াতে ক্যামেরা নিয়ে সাংবাদিকরা এলেও হাগার সময় আসবেন না। আর যাই হোক, ঢাকঢোল খুলে হাগার সময় মিডিয়া নিশ্চিতভাবে লাইভ টেলিকাস্ট করবে না৷ আমাদের মিডিয়া এতটাও নীচে নামেনি। খুব ট্রাই করলেও মোক্ষম সময়ে পচা শাকপাতার গন্ধে কেউ ধারেকাছে আসতে পারবে না৷

দলিতের বাড়িতে অপরিষ্কার পায়খায় দামোদর শেঠ কীভাবে হাগবেন? খাবার বাইরে থেকে আনা যায়৷ মাটির প্লেটে সাজিয়ে দেওয়া যায়৷ কিন্তু পায়খানা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়৷ তারপর ভুঁড়িওয়ালা নেতাজির কোষ্টকাঠিন্যের ধাত, দেখা গেল তিনি হাগতেই পারলেন না৷ হেগে বেরিয়ে আসার পর নিশ্চিতভাবে মিডিয়া গিয়ে সুরতে হাল চেক করবেই। টিআরপির মামলা। এরপর বাপপন্থীরা বলবে– নেতা হাগতে পারেন না৷ দেশ কীভাবে সামলাবেন?
দলিত সংগঠন বলবে– উনি দলিতের বাড়িতে না হেগে চলে এসেছেন৷ দলিতের বাড়ি বলেই হাগেননি৷ এই অপমান আমরা মেনে নেবো না৷
ভোটের আগে দলিতরা ক্ষেপলে কারা ফায়ফরমাস খাটবে? নীচুতলায় খাটার লোকও তো চাই৷ থোড়াই ঠাকুর-ব্রাহ্মণরা…

দামোদর শেঠ অনড়৷ ব্যাপারটিকে ইগোতে নিয়ে নিয়েছেন। –হম হাগেঙ্গে৷ ম্যায় কর সকতা হুঁ তো কর সকতা হুঁ৷ দুধ কা দুধ পানি কা পানি হো যায়েগা৷ আগর না কর সকা তো রাজনীতি ছোড় দুঙ্গা৷

দামোদর শেষ যে বাড়িতে যাবেন সেখানে বাথরুম ঝকঝকে তকতকে করে তোলা হল। কেউ একজন গোবরজল দিয়ে ধোওয়ার কথাও বলেছিল। তা শুনে দামোদর শেঠ বললেন– সব জগা এক নীতি নহি চলেগা। জাঁহা ফিনাইল লগেগা ওঁহা ফিনাইন, জাঁহা গোবর পানি জরুরি হোগা ওঁহা গোবরপানি৷ মিডিয়া মে কঁহি আ গয়া তো বাওয়াল হো জায়েগা।

নির্দিষ্ট দিন উপস্থিত। ১০-১২ টি মিডিয়ার তীক্ষ্ম দৃষ্টি নেতার কর্মসূচির দিকে৷ মিডিয়া যেভাবে ছন্দ মিলিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের নাম দেয় তেমন একটি হিন্দি চ্যানেল অনুষ্ঠানের নাম দিল এভাবে– “দলিত কে ঘর হাগনা / দেশ কা নয়া জাগনা?”

নেতা ধুতি পরেছেন৷ বাংলায় কর্মসূচি বলে কথা৷ ধুতি পরাটা সুবিধাজনক না হলেও পরতে হল৷ লুঙ্গি পরাটাই সবচেয়ে সহজ হত৷ কিন্তু লুঙ্গি? সেসব পরলে অন্য সমস্যা৷ পার্টি যে ন্যারেটিভে রাজনীতি করে তা গুবলেট হয়ে যাবে৷

প্লাস্টিকের বালতিতে জল। তাতে মগ ভাসছে। দেহরক্ষী পায়খানা ঘরের দরজা পর্যন্ত বয়ে দিলেন বটে, কিন্তু নিয়ে ঢুকতে তো নিজেকেই হবে৷ এত বড় নেতা ধুতি পরে নেতা হাগতে ঢুকছেন৷ এই বিরল দৃশ্য ভারতীয় রাজনীতিতে আগে দেখা যায়নি৷ সবাই ধন্য ধন্য করে উঠছে৷ ‘আমি আদরনীয় নেতাজিকে হাগতে দেখেছি। এই হাগার ফলে দেশের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।’ জাতীয় সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টও রেডি৷ সময়মতো কপি-পেস্ট শুরু হবে৷ নেতা হাগতে ঢুকলেন৷ টিআরপির গন্ধ পেয়ে মিডিয়া ক্ষেপে গেছে৷

এক সাংবাদিক এবং নিউজ রুমের সঞ্চালিকার কথোপকথন চলছে৷

“ঠিক কী বুঝতে পারছ রাজর্ষি? কী মনে হচ্ছে? দামোদরবাবু কতখানি হাগবেন? হাগার কালার সম্পর্কে তোমার কী অনুমান?”

“দ্যাখো সুপ্রিয়া, এভাবে কিছুই বলা যাচ্ছে না। যতটুকু জানা যাচ্ছে দামোদর শেঠ গতকাল রাতে পালং পনীর খেয়েছিলেন৷ ভ্যাড়ভ্যাড়ে হলুদ-সবুজ হাগা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিনশো গ্রামের বেশি হওয়ার কথা নয়৷”

“রাজর্ষির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমরা এখন বিশেষজ্ঞদের কাছে জেনে নেবো হাগার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। আচ্ছা শিবনারায়ণবাবু আপনার কী মনে হচ্ছে?”

“সুপ্রিয়া একটা বিষয় আমি বলতে পারি৷ হাগা বেশ শক্তই হবে৷ কারণ দামোদর শেঠের কোষ্টবদ্ধতা রয়েছে।”

হাগার রঙ এবং প্রকৃতি নিয়ে স্টুডিওর মধ্যেই বিশেষজ্ঞরা বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছেন৷ কেউ বলছেন পাতলা হাগা হবে, কেউ তথ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন কেন পাতলা হাগা হবে না৷ হাগার ফলে উৎপন্ন গ্যাসের প্রকৃতি নিয়েও জোর তরজা চলছে।

এরমধ্যেই দামোদরের স্নেহধন্য এক নেতা টুইট করেছেন– “এই হাগা শুধু হাগা নয়৷ বামপন্থী এবং দেশবিরোধীদের মুখে ফেভিকল৷”

এক মিডিয়া তড়িঘড়ি খবর করলো– এই বক্তব্যে ফেভিকলের উল্লেখ থেকে বোঝা যাচ্ছে নেতার আঠালো হাগা হবে৷ আমাদের মিডিয়াই প্রথম আপনাদের জানালো নেতা আঠালো হাগবেন৷

প্রায় আধঘন্টা অতিক্রান্ত। নেতা বেরোচ্ছেন না৷ তা দেখে মিডিয়ায় হইচই৷ নেতা-কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে৷

এক ফিচকে বামপন্থী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিল– ‘হাগতে গিয়ে অক্কা পেলেন।’

সেই পোস্টে হামলে পড়ে নেতার সমর্থকরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মা-বোন উদ্ধার করে তাকে কার্যত পাকিস্তানে পাঠিয়ে দিলেন৷

অবশেষে নেতা বেরিয়ে এলেন৷ তিনি শৌচ করে হাত ধুয়েছেন কি ধোননি৷ সাংবাদিকরা ছুটে গেলেন৷ নেতাকে ঘিরে প্রশ্ন করলেন– স্যর ক্যায়সা হাগা হুয়া? দলিত কে ঘর মে হাগকর ক্যায়সা লগ রাহা হ্যায়? দেশ মে বদল আয়েগা?

নেতার মুখ ব্যাজার৷ তিনি বিরক্ত৷ নিজের বাড়ির বিলাসবহুল বাথরুমে হাগার অভ্যাস তাঁর৷ এই পায়খানায় হাগা হয়? রাজনীতির জন্য কতকিছু করে বেড়াতে হয়৷ হেগে জল দেওয়াও যায় না৷ কারণ মিডিয়ায় হাগু হাইলাইট হলে জনমানসের পজিটিভ প্রভাব পড়বে৷ যত্তসব! ক্রোধ প্রকাশ পাবে না অথচ কড়াভাবে বলা হবে, এমনভাবে দামোদর বললেন– আপলোগ কৃপিয়া করকে মুঝে জানে দিজিয়ে৷ আপলোগ স্পট মে যাকে দেখিয়ে, আপকো সব তথ্য মিল যায়েগা৷

সাংবাদিকরা ছুটলেন৷ একে অন্যের ঘাড়ে চড়ার মতো পরিস্থিতি৷ আশ্চর্য প্রতিযোগিতা। কে আগে নেতার হাগুর ব্রেকিং নিউজ মিডিয়ায় আনতে পারবেন৷ ছোট পায়খানা ঘর, সেখানেই গুঁতোগুঁতি। আরেকটু হলে একজন ওখানেই পড়ে যেতেন৷

অবশেষে মিডিয়ায় দামোদর শেঠের হাগুর ছবি এল৷ ইটের মতো শক্ত কালচে হাগা৷ পঞ্চাশ গ্রামেরও কম৷ সেই হাগার সমর্থন এবং সমালোচনা নিয়ে দেশ তোলপাড়৷

দিল্লির এক সাংবাদিক তাঁর প্রাইমটাইম শো তে দামোদর শেঠের হাগু সম্পর্কে একটানা বলে যাচ্ছেন–
“দামোদরজি চাইলে বেশি হাগতে পারতেন৷ কিন্তু যে দেশে জলের সংকট সেখানে বেশি হাগা মানে জল অপচয়৷ তিনি সেপথে যাননি। এতেই প্রমাণিত হয় তিনি কতখানি সচেতন৷ উনি সম্ভবত একই কারণে জল কম খান। শক্ত পায়খানা তারই প্রমাণ৷ একজন নেতা কতখানি মহান হলে জল কম খান, কারণ তিনি জানেন দেশের বহু অংশে এখনও পানীয় জল পৌঁছয়নি। এর গুরুত্ব কেবল একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিকই বুঝবে৷”

এইপর্যন্ত প্রায় সবই প্রত্যাশিত ছিল৷ সকালে খবরের কাগজ খুলে দেখি নেতার ছবির নীচে তাঁর গতকালের রস শুষে নেওয়া হাফ ল্যাংচা সাইজের গুয়ের ছবি৷ পয়েন্ট করে করে লেখা আছে গুয়ের নানা বিবরণ৷ হাগতে কত সময় নিয়েছেন, হাগার পরিমাণ কী, হাগার মধ্যে উপস্থিত রাসায়নিক উপাদান, সে হাগা জমিতে পড়লে কতখানি জায়গা উর্বর করবে ইত্যাদি৷
*****

2 thoughts on “অভিশেখের হাগা – ইন্দ্র চন্দ্র নীল”

মন্তব্য করুন