Skip to content

কবিতার ভাষা – মাহামুদুল হাসান

মাহামুদুল হাসান

যে কবিতা পারেনি আজও বুকের গভীরে লিখে দিতে রক্তাক্ত মৃত্তিকার অধিকার
জলের, জঙ্গলে, শস্যদানার স্বভাষায় বেঁচে থাকার অঙ্গীকার
যে কবিতা পারেনি ফেরাতে মৌলিক বিরহে যে পথ হেঁটে গেছে সুদূর নীলে
মুখরিত স্লোগানে স্লোগানে
অথবা ফেরারি কেউ আজও বলেনি এসে, দেখ পিতা স্বাধীনতা আমার বখাটে
যে কবিতা পারেনি দিতে আজও ক্ষুধা আর দারিদ্র্যের মাঝে প্রসন্ন আশ্রয়
সে কবিতা আমার নয়-কোনো কবির চেতনার কাব্য নয়। 

জীবন থেকে যে একধাপ পিছিয়ে গেছে রুদ্র হাসি জোটে তার বরাতে
প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ফিরে আসে জংলির স্বভয়
ক্ষমতার লালসার তাণ্ডবে দিশেহারা ভিটে মাটি, নারীর গোপন আশ্রয়
ক্লান্ত জীবনের কাছে মনুষ্যের ধিক্কার কে আর শুনতে পায়! 
খোলসের আবরণে দেহ কতটুকুই বা দুঃখ পুষতে জানে! 
প্রেমিকার শরীর লুটে যায় শৈল্পিক আলিঙ্গনে
বিশ্বাসের নদী কিবা আর নতুন করে হারায়। 

যে কবিতা জানে না নিবিড় একাকিত্বের মানে
পাখি আর প্রজাপতি উড়ে চলে কোন বিশ্বাসের প্রাণে
যে কবিতা কবিকে চেনে না
শোনে না দুঃখের ভয়াল অসুখ
স্পর্শ করেনি তার উগ্র চিবুক—
সে কবিতা আমার নয়—কোনো কবির চেতনার কাব্য নয়। 

যদি আর কেউ না ফিরে
না শোনায় বেদনার রিক্ত বুক চিরে
না জাগায় অপেক্ষার ঘুম থেকে মানুষ ও মনুষ্যের শাশ্বত দ্বীপ
প্রবহমান স্রোতের মতো কবি জ্বেলে রাখ শব্দের প্রদীপ
ছুড়ে দাও আক্ষরিক তীর শূন্যে
সত্য-কুসুম বীজ গর্ভমূল থেকে বেরিয়ে পড়ুক লোকালয় থেকে অরণ্যে
অথবা অধিক। 

তোমার প্রতিটা শব্দ নীড়হারা দুঃখের আশ্রয়স্থল
শিশিরের জড়ো ঘুমে—ফলবতীর গোপন নির্মল জল
রুক্ষ মাঠের বুকে সবুজের লকলকে শরীর
জঠরে অবাক নির্মাণ বিস্ময়ের অবগুন্ঠনবতীর। 
নিপীড়িত কণ্ঠের সুরেলা ধ্বনি
উদ্ধত ডানায় অকুতোভয় নিষেধের গ্লানি। 
বসন্তের ওমে অদ্ভুত ফুলের মেলা
সবই আদোশিশু সৌরভের সাথে খেলা
চর পড়া স্রোতের বুকে প্রবাহিত যৌবনের নদীর নাব্যতা
দু’কুল জুড়ে মগ্নজলে খেলা করা বাঙালি মাছের সভ্যতা
গাঙের মাঝির পাল তোলা ছন্দের বৈঠা
জারি সারি ভাটিয়ালির উচ্ছল ধ্যানের নিমগ্নতা
সরল জীবনের চেরাগের বাতি
নিঃস্ব মায়ের কোল জোড়া পালকের মতি
রোগ ও শোকের ওপর হুজুরের কেরামতি 
বিশ্বাসের প্রতিফলে আলোকিত খুঁজে পাওয়া শূন্যতার জ্যোতি
মৌলবাদের চিহ্ন ঘুচে দাঁড়ির নজর জুড়ে থাকা শুভ্রতা
পঠিত হোন আপন সত্তার নিজস্বতা

সৃষ্টির লক্ষ্যে নতুন সৃষ্টির পরিভাষা
ধর্ম বর্ণ গোত্রবিহীন কবিতার ভাষা।

১৯.১.১৮ ইং তারিখে দৈনিক ভোরের কাগজে প্রকাশিত হয়েছে।

মন্তব্য করুন