প্রথম পাতা প্রচ্ছদ
চাবি – শক্তি চট্টোপাধ্যায়
আমার কাছে এখনো পড়ে আছে
তোমার প্রিয় হারিয়ে যাওয়া চাবি
কেমন করে তোরংগ আজ খোলো?
থুতনিপরে তিল তো তোমার আছে
এখন? ও মন নতুন দেশে যাবি?
চিঠি তোমায় হঠাত্...
সে বড়ো সুখের সময় নয়, সে বড়ো আনন্দের সময় নয় –...
পা থেকে মাথা পর্যন্ত টলমল করে, দেয়ালে দেয়াল, কার্নিশে কার্নিশ,
ফুটপাত বদল হয় মধ্যরাতে
বাড়ি ফেরার সময়, বাড়ির ভিতর বাড়ি, পায়ের ভিতর পা,
বুকের ভিতর বুক
আর কিছু...
পোপের সমাধি – উৎপল কুমার বসু
লাল-হলুদ কাচের জানালার দিকে তাকিয়ে
সেদিন অকস্মাৎ
বিকেলের অপরিচ্ছন্ন মুহূর্তে আমি
জটিলতাহীন
সূর্যরশ্মির দিকে চোখ মেলে
“পোপের সাম্রাজ্য আর
তাঁর আসুখের
রহস্যময় বীজাণুর স্হিতিস্হাপকতা”
আঙুলে একটি বড়
গ্লোব পৃথিবীর
বর্তুল পরিধি দেখিয়ে
আমি কলকাতায় তোমাকে...
পুলিন – ব্রত চক্রবর্তী
আমি ও নিভা কথা বলতে শুরু করলেই
পুলিন এসে দাঁড়ায় আমাদের মাঝখানে।
পুলিন একসময় নিভার বন্ধু ছিল। আমারও।
ঠিক এখনও আছে কিনা বুঝে উঠতে পারি না।যে দিনগুলাে...
বংশমর্যাদা – ব্রত চক্রবর্তী
পাথরের বাঘ এসে পাথরের বাঘকে বললাে, কী করা হয়?
দুজনের কেউই কিছু করে না, তবু মাঝে মাঝে এ-ওকে,
এক পাথরের বাঘ আর এক পাথরের বাঘকে এরকম...
মনে থাকবে? – আরণ্যক বসু
পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?
বুকের মধ্যে মস্তো বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দু’জন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার...
এখন শান্তিও যুদ্ধ – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
এখন যুদ্ধ না শান্তি স্পষ্ট করে বুঝতেই পারি নাভেবেছি পুণ্যাহে বিঝি স্বর্গতেরা একত্র হয়েছে :
বিলাচ্ছে করুণা আর অভিজ্ঞতার শুধু সুনির্বাচিত সমাচার
সূর্যান্তিকে, কিন্তু যেই একটি...
পথ ঢেকেছে মন্দিরে মসজিদে – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
ইউক্রেনিয়ার বিমানবন্দরে
কাসটমস্ এর মেয়েটি বলে ওঠে :
"এ কী কাণ্ড! এ ভিসা রাশিয়ার!"রাশিয়া গিয়ে মুখ ফসকে যেই
"লেনিনগ্রাদ" বলেছি তক্ষুনি
ওরা বলল বিদায় নিতে হবে |যাবার পথে...
মৌলবাদী নই – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
লুপ্ত হয়ে যায় শরীর, আমি আজ বিশ্বকল্যাণে
তোমার চুম্বন করেছি প্রার্থনা | মশাল জ্বেলে কারা
এখুনি ছুটে গেল, "মৌলবাদী ওরা" বলেই একজন
সে-দলে ভিড়ে গিয়ে আমার উদ্দেশে...
চৌরঙ্গীর ফুটপাথে – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
চৌরঙ্গীর ফুটপাথে
আমার শতাব্দীর কামধেনু
ঢেলে দিচ্ছে কালো দুধ সীসা-রঙা
যে খাবে তার মৃত্যু হবে যে খাবে না তার
মূর্খতা ভালোবাসি না
এক বেশ্যা অনায়াসে ভিতরমন্দিরে ঢুকে যায় – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
বুদ্ধমন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে গেলে
এক বেশ্যা ঢুকে যায় পেছন-দুয়ার ঠেলে
দাঁড়ায় বৃদ্ধের ঠিক পাশে ;
দুটি দেবদারু দেয় দ্বারপ্রান্তে সযত্নে পাহারা
কেউ যেন বুঝতে না পায়,
শ্রমণ বুঝতে...
বধুবরণ – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
পানের তলায় তোমার মুখ ঢাকা,
বাইরে আমি দাঁড়িয়ে,
পানে ঢাকা তোমার মৌন মুখ,
মুখর আমি বাইরে বাইরে ঘুরছি |গোধুলি এলো গোখুররেণু মাখা,
হাত-বাড়ানো একটি ভিক্ষুক
চৌকাঠ মাড়িয়ে ;
ফিকির খুঁজে...
অগাস্ট ১৯৪৭ – অনিতা অগ্নিহোত্রী
বাহাত্তর বছর আগে নতুন করে সীমান্ত লেখা হল, মানুষ উদ্বাস্তু
হল, ছিন্নমূল। নিজের ঘরবসতের সঙ্গে পোয়াতি বউ আর কাঁধে সন্তান নিয়ে
পথ হাঁটল, সীমান্তের ওপারে যে...
ছেলেটি – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
টিফিনের পয়সা জমিয়ে
. ডোমপাড়ায়
. পায়রা কিনতে যায় |
একবার পায়রা কিনতে গিয়ে
. অন্তরায়
সারা শরীর ছায়
পায়রাগুলো, কিন্তু সে তবুও
. নতুন পায়রা চায়
. ডোমপাড়ায়
যাবার পরে যতই দুয়ো...
বুধুয়ার পাখি – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
জানো এটা কার বাড়ি? শহুরে বাবুরা ছিল কাল,
ভীষণ শ্যাওলা এসে আজ তার জানালা দেয়াল
ঢেকে গেছে, যেন ওর ভয়ানক বেড়ে গেছে দেনা,
তাই কোনো পাখিও বসে...
মুক্তি – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
১
তুমি এসো বার্লিনের দুদিক থেকে
অবিভক্ত সাদা-কালো খঞ্জন আমার
ছৌ-কাবুকির ছদ্মবেশে
চূর্ণ করে দাও যত অলীক সীমান্ত
আমি যদি কৃত্তিম প্রাচীর গড়ি
মৃদু পক্ষাপাতে ভেঙে দিয়ো
ডানার অটুট রাখো ভাঙে...
আগম-নিগম – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
শিশুরা খেলবে
এই তো নিয়ম
বুড়োরা দেখবে
তাই বুঝি কম
হঠাৎ দেখছি
হলদিয়া মাঠে
বদলিয়ে গেছে
আগম-নিগম :
বুড়োরা খেলছে
শিশুরা দেখছে
কালান্তর – অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত
ইন্ডিয়া যবে গেল ইন্টারনেটে
পাড়ার ছেলেরা গড়াগড়ি খেয়েছিল
ন্যু-মার্কেটের মসৃণ কার্পেটে,
আমি কাপুরুষ পালিয়ে গিয়েছিলাম
অরণ্য খুঁজে ল্যাটিন আমেরিকায়
সেখানেও দেখি ইন্টারনেট হায় |ইন্ডিয়া গেল ইন্টারনেটে যবে
পাড়ার ছেলেরা ভুল...
চিরমায়া – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
বাহিরে দেখি না, শুধু স্থির জানি ভিতরে কোথাও
চৌকাঠে পা রেখে তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ,
চিরমায়া।
দাঁতে-চাপা অধরে কৌতুক স্থির বিদ্যুতের মতো
লগ্ন হয়ে আছে, ভুরু
বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বাঁকানো, জ্বলে
কোমল...
জয় কালী – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
পঁয়তাল্লিশ বছর বাদে দেখা, তবু কারও
ভুলভাল হল না।
এসপ্ল্যানেডে বর্ষার সন্ধ্যায়
এক-নজরে দুজনেই দুজনকে চিনলুম। পক্ককেশ
পৌঢ় পরক্ষণে
বালকের মতো হাসল, প্রশ্ন করল, “কী রে,
আজকাল কোত্থেকে ঘুড়ি কিনিস?...
ঠাকুমা বলতেন – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ঠাকুমা বলতেন, “দাদা, খুব বেশি তো আর
বাঁচব না, এখন তাই সাধ্যমতো আল্গা দিয়ে থাকি।
যে অল্প সময় আছে বাকি,
দেখতে-দেখতে কেটে যাবে, তোমরা থাকো ভাল।
আমি দেখি...
অঞ্জলিতে ছেলেবেলা – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
এই তো আমার অঞ্জলিতেই মস্ত পুকুর,
কেউ আচম্কা ছুঁড়লে ঢেলা
দেখতে থাকি কেমন করে প্রকাশ্য হয়
খুব নগণ্য ছেলেবেলা।দর্পণে মুখ লগ্ন রেখে ছোট্ট খুকুর
এখন দিব্যি কাটে সময়।
কাটুক,...
অরণ্য-বাংলোয় রাত্রি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
নাকারা নাকারা কারা কারা…
ঘুমের গহ্বর থেকে মধ্যরাতে জেগে উঠল পাড়া
অরণ্যের অন্দর-মহলে।
আকাশ নির্মল নয়, কিছু জ্যোৎস্না ছড়াবার ছলে
জলেস্থলে চতুর্গুণ রহস্য ছড়ায়
হলুদ বর্ণের চাঁদ। কে যায়,...
এ কেমন বিদ্যাসাগর – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
আমার শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের দিনগুলি আজ
হাজার টুকরো হয়ে
হাজার জায়গায় ছড়িয়ে আছে।
আমার বালিকাবয়সী কন্যা যেমন
নতজানু হয়ে
তার ছিন্ন মালার ভ্রষ্ট পুঁতিগুলিকে
একটি-একটি করে কুড়িয়ে নেয়,
আমিও তেমনি
আমার...
কাম্ সেপটেমবর – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
কনেকটিকাট অ্যাভেনিউয়ের উপরে আমি দাঁড়িয়ে ছিলুম।
তখন সেপটেমবর মাস,
নতুন বিশ্বে গাছের পাতা তখন হলুদ হয়ে যাচ্ছে।
শেষ রাত্তিরে বৃষ্টি হয়েছিল,
রাস্তার উপরে তার চিহ্ন তখনও মুছে যায়নি।
ইতস্তত...
নিজ হাতে, নিজস্ব ভাষায় – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
এখন নিজস্ব শ্রমে যাবতীয় উদ্যানের বেড়া
বেঁধে দিতে ইচ্ছা হয়।
স্নেহের চুম্বনখানি এঁকে দিতে ইচ্ছা হয়
সমস্ত শিশুর গালে।
সমস্ত দেওয়ালে
এখন নিজস্ব হাতে নিজস্ব ভাষায় গিয়ে লিখবার সময়:
কে...
বকুল, বকুল, বকুল – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
‘সামনে রিফুকর্ম চলছে,
পিছন দিকে রাস্তা বন্ধ!’
এই, ওরা কী যা-তা বলছে!
বকুল, তোমার বুকের গন্ধ
এই অবেলায় মনে পড়ে।এই অবেলায় বকুল ঝরে
শ্যামবাজারে, ধর্মতলায়,
এবং আমরা তাকেই ধরছি
ফাঁদ পেতে...
শব্দে শব্দে টেরাকোটা – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
আমি কি তোমার কাছে সনন্দ দিয়েছি কবিতার,
যে আমি তোমার জন্যে যাব
পাতালে, অথবা ঊর্ধ্বে আকাশে ফোটাব
তোমারই আলেখ্য? ঝানু বুড়ো,
আমি কি তোমার কাছে সনন্দ নিয়েছি কবিতার?যে...
আমার ভিতরে কোনো দল নেই – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
আমার পিছনে কোনো দল নেই, আমার ভিতরে
দলবদ্ধ হবার আকাঙ্ক্ষা নেই, আমি
সাদা কালো লাল নীল গাং-গেরুউয়া জাফরান বাদামি
হরের রঙের খেলা দেখে যাই।
একলা-পথে হাঁটতে-হাঁটতে একলা আমি...
আমি ও তিনি – নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
আমি বললুম, “এটা কিছু নয়।”
তিনি বললেন, “এটাই
মন্দাকিনীর ধারা নিশ্চয়,
এতেই তৃষ্ণা মেটাই।”আমি বললুম, “মন্দাকিনী কি
এত কাছে? এটা ছল।”
তিনি বললেন, “না, না, এটা ঠিকই
স্বর্গঙ্গার জল।”আমি বললুম,...