Skip to content

সেই মানুষটি যে ফসল ফলিয়েছিল – বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

সেই বিরাট খামারটাতে কখনো বৃষ্টি হয় না
আমারই কপালের ঘাম দিয়ে গাছগুলোকে
তৃষ্ণা মেটাতে হয়
সেখানে যে কফি ফলে, আর চেরি গাছে
যে টুকটুকে লাল রঙের বাহার ধরে
তা আমারই ফোঁটা ফোঁটা রক্ত, যা জমে কঠিন হয়েছে
কফিগুলোকে ভাজা হবে, রোদে শুকোতে হবে,
তারপর গুড়ো করতে হবে
যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের গায়ের রঙ হবে
আফ্রিকার কুলির গায়ের রঙের ঘোর কৃষ্ণবর্ণ
আফ্রিকার কুলির জমাট রক্তে ঘোর কৃষ্ণবর্ণ

কে ভোর না হতেই ওঠে?
কে তখন থেকেই খেটে মরে?
কে লাঙ্গল কাঁধে দীর্ঘ রাস্তা কুঁজো হয়ে হাঁটে?
আর কেই বা শস্যের বোঝা বইতে বইতে ক্লান্ত হয়?
কে বীজ বপন করে?
আর তার বিনিময়ে যা পায়, তা হ’লো
ঘৃণা, বাসি রুটি, পঁচা মাছের টুকরো,
শতচ্ছিন্ন নোংরা পোশাক, কয়েকটা নয়া পয়সা?
আর এরপরেও তাকে পুরস্কৃত করা হয়
চাবুক আর বুটের ঠোক্কর দিয়ে
কে সেই মানুষ?
কে ক্ষেতগুলোতে গম আর ভূট্টা ফলায়?
আর সারি বাধা কমলা গাছগুলোতে
ফুলের উৎসব আনে?
কে সেই মানুষ?
কে উপর ওয়ালাকে গাড়ি, যন্ত্রপাতি,
মেয়ে মানুষ কেনার টাকা আর
মোটরের নিচে চাপা পড়ার জন্য
নিগ্রদের মুন্ডুগলি যোগান দেয়?
কে সাদা আদমিকে বড়লোক তৈরি করে
তাকে রাতারাতি ফাঁপিয়ে তোলে
পকেটে টাকা যোগায়?
-কে সেই মানুষ?
তাদের জিজ্ঞাসা করো
যে পাখিরা গান গায়
যে ঝর্ণারা নিশ্চিত মনে
এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে
যে বাতাস এই মহাদেশের মধ্যকার মানচিত্র থেকে মর্মরিত হচ্ছে
তারা সকলেই উত্তর দেবে
ঐ কালো রঙের মানুষটা-
যে দিনরাত গাধার খাটুনি খাটছে।
আহা!
আমাকে অন্তত ঐ তালগাছটার চূড়োয় উঠতে দাও
সেখানে বসে আমি মদ খাবো
তালগাছ থেকে যে মদ চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে;
আর মাতলামোর মধ্যে আমি নিশ্চয়ই ভুলে যাব
আমি একজন কালো রঙের মানুষ
আমার জন্যেই এই সব।
মূল রচনা: আন্তোরিও হাসিন্টে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।