Skip to content

সাইমন-কমিশনের রিপোর্ট – কাজী নজরুল ইসলাম

[A]

সাইমন-কমিশনের রিপোর্ট

(প্রথম ভাগ)
ভারতের যাহা দেখিলেন

কোরাস : ‘কী দেখিতে এসে কী দেখিনু শেষে,’
রিপোর্টে লেখেন সাইমন –
হুটোপুটি করে ছুটোছুটি করে
বুড়োবুড়ি, কাজে নাই মন!
‘ম্যাদা’দল আর ‘উদো’দল পায়ে
হস্ত বুলায় হর্দম,
পুঁচকে দলের ফচকে ছোঁড়ারা
ছিটাইছে বটে কর্দম!

ত্যক্তের চেয়ে ভক্তই বেশি,
আহাহা ভক্ত বেঁচে থাক!
ছোলা ভেজা দেব, কাঁচকলা দেব,
নিশ্চয়ই মনে এঁচে রাখ॥

আসিতে ভারতে সানকি লইয়া
আসিলে ফকির ফোকরা,
পিছন হইতে ঠোকরায় টাকে
ডেঁপো গোটা কয় ছোকরা।

ছেলে যা দেখিনু, ছেলের চাইতে
পিলে বড়ো, অধিকন্তু –
বৃহত্তম ‘জু’দেখিনু জীবনে –
প্রথম দুপেয়ে জন্তু॥

মাথা নাই হেথা, নাইকো হৃদয়,
শুধু পেট আর পিঠ সার,
এত ‘পিঠে’খেয়ে কেমনে হজম
করে, করে নাকো চিৎকার!

ঠুঁটো হাত শুধু চিত করে রাখে
শূন্যের পানে তুলিয়া,
বিপদে শ্রীপদ ভরসা, তাহাও
শ্লীপদে গিয়াছে ফুলিয়া॥

মাড়োয়ারি আর ‘মালোয়ারি’জ্বর
এদের পরম মিত্র,
মরমরদেরে একেবারে মেরে
রাখিছে দেশ পবিত্র!

ইহাদের হরি বন্ধু মোদেরই
‘গুড ওল্ড জেন্টলম্যান’,
কচুরি-পানায় ডোবা ও খানায়
এঁর কৃপা করে ‘ভ্যানভ্যান’॥

এদেশের নারী বেজায় আনাড়ি,
পুরুষের হাতে তবলা,
তবলাতে চাঁটি মারিলে সে কাঁদে,
ইহারা কাঁদে না, অবলা!

জরিশাড়ি-মোড়া চকলেট ওরা
বন্দী হেরেম-বাক্সে,
বাহির করিলে খেয়ে নেবে কেউ,
কাজেই বাক্সে থাক সে॥

ইসকুলে, প্রেমে, জ্বরে পড়ে পড়ে
জীবন কাটায় ছেলেরা ;
মাঝে মাঝে করে ভ্রান্ত শিষ্ট –
শান্তে লেনিন ভেলেরা।

চোখের চাইতে চশমাই বেশি,
ভাগ্যিস ওরা অন্ধ,
নইলে কখন টানিয়া ধরিত
আমাদের গলাবন্ধ॥

আমাদের দেখাদেখি কেহ কেহ
করিছে ক্লাবের মেম‍্‍বার,
স্কার্ট পরে চাষারা, বাবুরা
বিবি লয়ে যায় চেমবার!

বিলিতি দাওয়াই ধরিতেছে ক্রমে,
আর বাকি নাই বেশি দিন,
গুডবয় হয়ে গিলিছে আফিম,
হুইস্কি, ব্রাণ্ডি, কুইনিন॥

কাফ্রি চেহারা, ইংরিজি দাঁত,
টাই বাঁধে পিছে কাছাতে;
ভীষণ বম্বু চাষ করে ওরা
অস্ত্র-আইন বাঁচাতে!

চাচা-ভাইপোতে মিল নাই সেথা
আড়াআড়ি টিকি দাড়িতে,
যুদ্ধ বাধাই উহাদেরই দিয়ে,
ধরিয়া আনাই ফাঁড়িতে॥

উহাদের মতো কেলে রং সব
গাছপালা জল আকাশের,
উহাদের গাই মোদেরই গাই-এর
মতো সাদা দুধ দেয় ফের।

কালো চামড়ার ভিতরে ওদের
আমাদেরই মতো রক্ত,
এ যদি না হত – শাশ্বত হত
ও-দেশে মোদের তক্ত!

(দ্বিতীয় ভাগ)
ভারতকে যাহা দেখাইলেন

কোরাস : জিশুখ্রিস্টের নাই সে ইচ্ছা,
কী করিব বলো আমরা!
চাওয়ার অধিক দিয়া ফেলিয়াছি
ভারতে বিলিতি আমড়া॥

চামড়া ওদের আমাদের মতো
কিছুতেই নহে হইবার!
হোয়াইটওয়াশ যা করিয়াছি–তাই
দেখিতেছি নহে রইবার!

আমাদের মতো যারা নয় তারা
অমনই রবে, কী করে বল!
সাদাদের মতো কালা অসভ্য
হইবে স্বাধীন? হরিব‍্‍ল!

আঁঠি ও চামড়া বিলিতি আমড়া
মন্টেগু দিল চুষিতে;
শাঁস নাই বলে কাঁদিল, দিলাম
বিলিতি কুমড়ো তুষিতে।

তাহাতেও যারা খুশি নয়, এতো
ভুসি খেয়ে ভরে নাকো পেট,
ঘুসি বরাদ্দ তাহাদের তরে,
ঝুঁটি ধরে করো মাথা হেঁট॥

পুলিশের লাঠি আরও বড়ো হোক,
আরও যেন তাতে থাকে গিঁঠ,
হস্তেরে ফেলো অস্ত্র-আইনে,
ঘর হতে তোলা হোক ইঁট!

কাগজের শুধু হইয়াছে নোট,
কাগজের হোক রুটিও,
মাথা কেটে দাও, কেটে দাও হাত
থাকে নাকো যেন টুঁটিও॥

যতটুকু দড়ি ছাড়িয়াছ, তাহা
গুটাইয়া লও পুনরায়,
একবার যদি বেড়া ভাঙে, তবে
আরবার ধরা হবে দায়!

আরও প্রশস্ত করে দাও পিঠ
ধুর্মুস-পেটা করিয়া,
টিকি ও দাড়ির চাষ করো, লহো
নখর দন্ত হরিয়া॥

ও-দেশের জলে ম্যালেরিয়া-বিষ,
উহারা বিলিতি-জল খাক।
গুলি খেতে দাও তাদেরে, ওদের
চ্যাঁচায় যে এক দল কাক!

পা কেটে ওদের ঠেকো করে দাও,
উহাদের সাথে ছুটিতে
হার মেনে যায় এরোপ্লেন, পায়ে
গুলি পারে নাকো ফুটিতে॥

সিরিঞ্জ লইয়া আরও ফাঁপাইয়া
দাও প্লীহা আর যকৃৎ!
ঢাক কিনে দাও হিঁদুরে, মুসল –
মানে বলো, করো বকরিদ।

ভাতে নাই কিছু ভিটামিন, ওতে
মদ হোক, ওরা খাক ফেন,
এ স্বাস্থ্যে ভাত বড়ো ক্ষতিকর,
খুব জোর দুটো শাক দেন॥

অতিশয় বেশি কথা কয়ে কয়ে
বাড়াতেছে প্যালপিটেশন,
গ্যাগ পরাইতে করো সশস্ত্র
ডাক্তারে ইনভিটেশন।

মা ভগবতীর সার উহাদের
ব্রেনে আরও দাও পুরিয়া,
যদি থাকে মেরুদণ্ড কারুর
দাও তা ভাঙিয়া চুরিয়া॥

বোমা মেরে মেরে পায় নাকো খুঁজে
আজও উদরে ‘ক’অক্ষর,
এ মেষ কেমনে সভ্য ষাঁড়ের
সহিত হানিবে টক্কর?

পায়ে ও গলায় ছাড়া ইহাদের
কোনো সে অঙ্গে বল নাই॥
ব্যারাম মাফিক ওষুধ দিলাম,
দিলাম কিন্তু ফল নাই॥

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।