Skip to content

নবধারাজলে – উৎপল কুমার বসু

মন মানে না বৃষ্টি হলো এত
সমস্ত রাত ডুবো-নদীর পারে
আমি তোমার স্বপ্নে-পাওয়া আঙুল
স্পর্শ করি জলের অধিকারে |

এখন এক ঢেউ দোলানো ফুলে
ভাবনাহীন বৃত্ত ঘিরে রাখে—
স্রোতের মতো স্রোতস্বিনী তুমি
যা-কিছু টানো প্রবল দুর্বিপাকে

তাদের জয় শঙ্কাহীন এত,
মন মানে না সহজ কোনো জলে
চিরদিনের নদী চলুক, পাখি |
একটি নৌকো পারাপারের ছলে

স্পর্শ করে অন্য নানা ফুল
অন্য দেশ, অন্য কোনো রাজার,
তোমার গ্রামে, রেলব্রিজের তলে,
ভোরবেলার রৌদ্রে বসে বাজার |

সেদিন ঝড়ের রাতে তুমি চাঁদ ডুবন্ত, একাকী
দেখেছিলে লক্ষ ঢেউ জলে ভাঙে প্রতিচ্ছায়া — মেঘজটাজাল
খুলে যায় অন্যমনে | এত অলৌকিক অন্ধকার ঘিরেছিল চতুর্দিকে,
এত অলৌকিক বাতাসে মত্ততা যেন বলে গেল ‘কে খোলে কপাট ?
কে যায় বনের যাত্রী— ঝটিকায় তুমি কোথাকার |’
আমি তখন নির্বাক থাকি | চন্দ্রাহত—- তোমার পূর্ণিমা
কখন দিগন্তে ডোবে আমি ততদিনে স্পষ্ট জেনে গেছি |

এখনি যাবে কি তুমি ফিরে এল বৃষ্টি দুপুরের
মাঠের ওপার থেকে, দু’টি শান্ত গৃহকোণে কিছু জল দিয়ে—
উত্তরে, ধানের ক্ষেতে, যেখানে অদেখা
গতরাত্রির সব ভালোবাসাবাসি— জলে মিশে আছে |
যেখানেই থাকো তুমি একটি পথের রেখা ধ্রুব, কূট, নিশ্চিত শ্রাবণে
তোমাকে সহজ কোনো আলে আলে নিয়ে যায়, যখন সহসা
দুধারে চঞ্চল স্রোত, জল, নদী, কম্পিত ডাহুক,
একটি মুহূর্তে শুধু তুলে নেয় প্রতিচ্ছবি, তোমার ভঙ্গিমা—
আবার সহজে ভাঙে— যেন খেলা কেবলই মেঘের
প্লাবিত ধানের ক্ষেতে বারবার বৃষ্টি দিয়ে যাওয়া – যেন মত্ত
কখনো আঙুল অন্যের করতলে বিঁধেছিল—- অন্য করতল

রাখে না প্রেমের ভার, সে প্রাচীন, সে চিরন্তন !
অথচ বর্ষা আসে | আদিগন্ত একাকী মাঠের দৈর্ঘ্য কত—
ভয় কত—-এখনি যাবে কি তুমি ?

অমন কালো মেঘের দিনে জন্মেছিলেন আমার প্রিয় কবি |
অন্য সকল দিনের মত বৃষ্টি নামল— রোদ উঠল কত
উনি আমায় রক্তে লীন দেবায়তন দেখিয়েছিলেন |

যদিও ঐ সিংহাসনে কুয়াশাময় সম্রাটের অস্থিরতা ছিল,
তবু আমি ক্ষমাই চেয়েছিলাম—
যা আমাকে ধন্য করে, প্রিয় কবিকে, মহিষটিকে |

নিষ্করুণ মাতাল হাতে ছড়িয়ে থাকা শত বধ্যভূমি |
ভীষণ শব্দে বেজে উঠল মহিষটির দীপ্ত গলা ‘ক্ষমা করুন’,
‘ক্ষমা করুন’ আমি শান্ত, অনুচ্চারিত শব্দে বলেছিলাম |

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।