Skip to content

[A]

গোলেস্তান

তুমি কি সেই গোলেস্তান? তবে আজ তুমি এত বিশ্রী কেন? তোমার ফুলে সে সৌন্দর্য নেই, শুধু তাতে নরকের নাড়ি-উঠে আসা পূতিগন্ধ! তোমার আকাশ আর তেমন উদার নয়, কে যেন তাকে পঙ্কিল ঘোলাটে করে দিয়েছে! তোমার মলয় বাতাসে যেন লক্ষ হাজার কাচের টুকরো লুকিয়ে রয়েছে! তোমার সারা গায়ে যেন বেদনা! …

কী করলে বেদৌরা তুমি? – বেদৌরা! – নাঃ, এই যে ব্যথা দিলে তুমি, – এই যে প্রাণ-প্রিয়তমের কাছ থেকে পাওয়া নিদারুণ আঘাত, এতেও নিশ্চয়ই খোদার মঙ্গলেচ্ছা নিহিত আছে! আমি কখনই ভুলব না খোদা, যে, ‘তুমি নিশ্চয় মহান আর তোমার-দেওয়া সুখ-দুঃখ সব সমান ও মঙ্গলময়! তোমার কাজে অমঙ্গল থাকতে পারে না, আর তুমি ছাড়া ভবিষ্যতের খবর কেউ জানে না!’ ব্যথিতের বুকে এই সান্ত্বনা কী শান্তিময়! …

আচ্ছা, তবু মন মানছে কই? কেন ভাবছি, এ নিশ্চয়ই আঘাত? – তৃষাতুর চাতক যখন ‘ফটিক জল ফটিক জল’ করে কেঁদে কেঁদে মেঘের কাছে এসে পৌঁছে, আর নিদারুণ মেঘ তার বুকে বজ্র হেনে দিয়ে বিদ্যুৎ-হাসি হাসে, তখন কেন মনে করি, এ মেঘের বড়োই নিষ্ঠুরতা? – কেন?

কিন্তু এত দিনেও নিজের স্বরূপ জানতে পারলুম না! আগে মনে করতুম, আমি কতো বড়ো – কতো উচ্চ! আজ দেখছি, সাধারণ মানুষের চেয়ে আমি এক রত্তিও বড়ো নই! আমারও মন তাদের মতো অমনই সংকীর্ণতা আর নীচতায় ভরা। নইলে আমি বেদৌরার এ দোষ সরল মনে ক্ষমা করতে পারলুম না কেন? হোক না কেন যতই বড়ো সে দোষ! বাহিরটা তার নষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু ভিতরটা যে তেমনই পবিত্র আর শুভ্র রয়েছে! অনেকে যে ভিতরটা অপবিত্র করে বাহিরটা পবিত্র রাখবার চেষ্টা করে, সেইটাই হচ্ছে বড়ো দোষ। কিন্তু এই যে বেদৌরার সহজ সরলতায় তার ভিতরটা পবিত্র রয়েছে জেনেও তাকে প্রাণ খুলে ক্ষমা করতে পারলুম না, সে দোষ তো আমারই; কেননা আমি এখনও অনেক ছোটো। জোর করে বড়ো হওয়ার জন্যে একবার ক্ষমা করতে ইচ্ছে হয়েছিল বটে, কিন্তু তা তো হতে পারে না। সে যে হৃদয় হতে নয়! নাঃ, আমাকে পুড়ে খাঁটি হতে হবে। খুব দূরে থেকে যদি মনটাকে ঠিক করতে পারি, তবেই আবার ফিরব, নইলে নয়। – ওঃ কী নীচ আমি! প্রথমে বেদৌরার মুখ থেকে তার এই পতনের কথা শুনে আমিও তো একেবারে নরক-কুণ্ডে গিয়ে পৌঁছেছিলুম। মনে করেছিলুম আমিও এমনি করে আমার সুপ্ত কামনায় ঘৃতাহুতি দিয়ে বেদৌরার উপর শোধ নেব। তারপর নরকের দ্বার থেকে কেমন করে হাত ধরে অশ্রু মুছিয়ে আমায় কে যেন ফিরিয়ে আনলে! সে বেশ শান্ত স্বরেই বললে, – ‘এ প্রতিশোধ তো বেদৌরার উপর নয় ভাই, এ প্রতিশোধ তোমার নিজের উপর!’ ভাবলুম, তাই তো, অভিমানের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে এ কী, আত্মহত্যা করতে যাচ্ছিলুম! আমি আবার ফিরলুম। তার পর বেদৌরাকে বলে এলুম, – ‘বেদৌরা! যদি কোনো দিন হৃদয় হতে ক্ষমা করবার ক্ষমতা হয়, তবেই আবার দেখা হবে, নইলে এই আমাদের চির-বিদায়! মুখে জোর করে ক্ষমা করলুম বলে তোমায় গ্রহণ করে আমি তো একটা মিথ্যাকে বরণ করে নিতে পারিনে। আমি চাই, প্রেমের অঞ্জন আমার এই মনের কালিমা মুছিয়ে দিক।’ বেদৌরা অশ্রু-ভরা হাসি হেসে বললে, – ‘ফিরতেই হবে প্রিয়তম, ফিরতেই যে হবে তোমায়! এ সংশয় দু-দিনেই কেটে যাবে। তখন দেখবে, আমাদের সেই ভালোবাসা কেমন ধৌত শুভ্র বেশে আরও গাঢ় পূত হয়ে দেখা দিয়েছে! আমি তোমারই প্রতীক্ষায় গোলেস্তানের এই ক্ষীণ ঝরনাটার ধারে বসে গান আর মালা গাঁথব। আর তা যে তোমায় পরতেই হবে। ব্যথার পূজা ব্যর্থ হওয়ার নয় প্রিয়! … কোথায় যাই এখন, আর সে কোন্ পথে? ওগো আমার পথের চিরসাথি, কোথায় তুমি? –

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।