Skip to content

তারা গোনা পাগলি – সুদেব ভট্টাচার্য

পাগলিটা আকাশের তারা গুনত শুধু
রাস্তার খোলা হাওয়া লাগিয়ে শরীরে,
শুধু রাতের পর রাত তারা গুনে যেত আপনমনে
ও কি জানত স্বাতি, রেবতী , কৃত্তিকাদের নাম?
না জেনেও তো ভালবাসা যায়।
ওই ছিল এক পাগলি
আস্তাকুঁড়ের জঞ্জালে মাথা রেখে, আঁশটে গন্ধ মেখে গায়ে –
যে শুধু রাতের পর রাত তারা গুনে যেত…

রাস্তার কুকুরেরা ওকে জানতো কাছের মানুষ
ওদের সাথেই ফুটপাথ গেরস্থালি, উচ্ছিষ্ট ভাত |
পাড়ার রকের কুকুরদের দৃষ্টিও ছিল তীক্ষ্ণ
যারা রাতে মিশে মিশে থাকে ওত পেতে
তারা গোনা পাগলিদের অপেক্ষায় …

একদিন মিশে থাকা কুকুরেরা এলো নিশব্দে
রাত তখন একটা , সুনসান এপাড়া-ওপাড়া।
কামড় বসালো যত্রতত্র , আঁচরে দিল গায়ে
পাগলি সেদিন আপ্রাণ খুজেছিল ধ্রুবতারা-
মেলেনি|
স্বাতি-রেবতী-কৃত্তিকারাও মুখ ঢেকেছিল মেঘে
অসহায় পাগলি তবু মনে মনে তারা গুনেছিল
আঁচর-ক্ষত পৌছোয়নি তার পৃথিবীতে …

আরো কিছুমাস পর পাগলীর তলপেটে দুর্যোগ –
আকাশ ভরা বেদনা তারা |
ফুটপাথ জুড়ে সেই এলোপাথারি যন্ত্রণার সাক্ষী ছিল শুধু
রাস্তার কুকুরগুলো! রকের কুত্তারা নয় ..
তারপর সেইদিন এলো ।
সন্ধ্যেবেলা ফুটপাথে সেই আঁশটে গন্ধ মেখে পড়ে ছিল এক লাশ ,
তলপেটের পাহাড় বেড়িয়ে এসেছে এক মাংসপিন্ড হয়ে
রক্তস্রাব রাস্তা চুইয়ে পড়ছে কর্পোরেশন নালায় ।
যারা রাতে মিশে মিশে থাকত
তারা সেদিন মিশে গিয়েছিল ভিড়ে …
সেই সন্ধেতে কালপুরুষ উঠেছিল আকাশে
কটিদেশে তলোয়ার যেন নিকষ অন্ধকারে জ্বলছে-
বিড়ালের চোখের মত ধূর্ত হয়ে ।
স্বাতি-রেবতী-কৃত্তিকাদের সেদিন খুঁজে পাওয়া যায়নি ।
আর কোনদিন সেই পাড়ার সন্ধ্যাকাশে
তাদের দেখা গেছিল কিনা, কেউ গুনেও দেখেনি অবশ্য….

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।