Skip to content

জন্মদিনের রুটি – শ্রীজাত

একটা সকাল আপনাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে ঝর্নার জল।
সে জানে আপনার একটা পা নেই,
বদলে জেদ বসানো হাঁটু থেকে গোড়ালি অবধি।

একটা রাত আপনাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে ডাকবাংলো।
সে জানে আপনার একটা চোখ নেই,
বদলে শত্রুদের হাসি মুঠো পাকিয়ে ঠুসে দেওয়া।

একটা দুপুর আপনাকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছে ধুলোর মরুভূমি।
সে জানে আপনার পাঁজরের একটা দিক নেই,
বদলে কৃষ্ণনগর টু কলকাতার রেললাইন দপদপ করছে।

কেবল একটা সন্ধে কিছুতেই শেষ হচ্ছে না।
সে একটা অসমাপ্ত সোয়েটারের মতো ডাকছে আপনাকে,
ডাকছে না-দেখা প্রুফের মতো,
ডাকছে মল্লিকাদি’র নতুন বই আর রোরো’র পুরনো জামার মতো, বারবার।

আপনি একটা উড়ানের ছায়া পেরোচ্ছেন আর ছুটে যাচ্ছেন
আপনি একজন বন্ধুর শবদেহ পার হচ্ছেন আর ছুটে যাচ্ছেন
আপনি কোনও সভা থেকে নামছেন আর ছুটে যাচ্ছেন
কবিতায় কবিতায় প্রতিবন্ধী হয়ে যাওয়া আপনার অর্ধেক শরীর
রোজ, কয়েক কোটিবার ছুটে যাচ্ছে তার দিকে।

আর বাকি অর্ধেক বসছে টেবিলে।
লেখার জন্য, খাওয়ার জন্য।
পাশের মাঠে শতাব্দীর অন্ধকার, পাশের চেয়ারে অনাগত পাণ্ডুলিপি

আপনার একটা হাত
কনুই থেকে কব্জি অবধি কারখানার চিমনি বসানো একটা হাত
এগিয়ে যাচ্ছে থালার দিকে।

ওই থালা থেকে একদিন উঠে এসেছিল খিদের মতো লেখা
ওই থালায় একদিন মিলিয়ে গেছিল লেখার মতো খিদে

এই রুপোলি মিথ্যেয় মোড়া পৃথিবীতে
জন্মদিনের রুটি আলাদা করে চেনা যায়, সুবোধদা?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।