Skip to content

একটি বৃষ্টির জন্য – প্রদীপ বালা

আমি তার আসার জন্য কখনই প্রস্তুত থাকতাম না
তবুও সে আসতো, আকাশ কালো করে
সোঁ সোঁ শব্দ করতে করতে তেড়ে আসতো, আর
তীরের ফলার মতো বিঁধতে চাইত শরীরে
কানে সুড়সুড়ি দিত……
তখন হয়তো পলতার জলে
সবেমাত্র ফাতনা গিলছে কোন বেবোধ মাছ
আর আমি টান দেব বলে……

সেই সময় খালের অপারে সোঁ সোঁ শব্দ
সাথে সাথে ছিপে আলপটকা টান মেরে
ছুটতাম মাঠ পেরিয়ে
পেছনে সোঁ সোঁ শব্দে তেড়ে আসতো বৃষ্টি

প্রাণপণে ছুটতে ছুটতে শুনতাম
কারও কারও গলার আওয়াজ
অমুকের মা কিম্বা তমুকের ঠাকুমারা সব
হাঁটু অব্দি কাপড় তুলে মাঠে দাঁড়িয়ে ডাকছে

ডাকছে তাদের অবাধ্য বাছুর গুলোকে আয় আয় আয়…
ডাকছে তাদের অবাধ্য ছাগলের পাল কে, আয় আয় আয়…
ডাকছে তাদের অবাধ্য মুরগী গুলোকে, আয় আয় টিটি টিটি…টিটি…
অথবা তাদের অবাধ্য হাঁস গুলোকে, আয় আয় চৈচৈ চৈচৈ…চৈচৈ…
থমকে পেছনে তাকাতেই বৃষ্টি এসে আছড়ে পড়ত শরীরে
বাড়ি ফিরে ছিপ রাখতে রাখতেই দেখতাম
খেলার মাঠে ফুটবল নিয়ে
লাফিয়ে বেড়াচ্ছে এক দঙ্গল ছেলেপেলে
সবারই খালি গা…
দৌড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া তাদের মধ্যে
কাউকে হয়তো চিত করে ফেলা কারোবা
পায়ের ফাঁক দিয়ে স্লিপ কেটে চলে যাওয়া
দুম করে আছাড় খেয়ে পড়া তারপর–
মুখ বেঁকিয়ে খিস্তি–
.           ‘কাছে আয় ক্যাামোন বাটাম দিই বুকাচ্চু…’

এই প্রক্রিয়া ততক্ষন পর্যন্ত চলত
যতক্ষণ না কেউ
চ্যালাকাঠ নিয়ে তেড়ে আসছে বাড়ি থেকে…

তবুও সেসব দিনে বৃষ্টি আসতো নিয়ম করে

আর আজ এই শহরের রাস্তায়
বহুদিন পরে আবিষ্কার করলাম আর এক বৃষ্টিকে
যাবার সময় সে বলে গেল আবার ফিরবে বিকেলে…

আমি সেই থেকে দাঁড়িয়ে আছি
ল্যামপোস্টের মতো ফুটপাতে
মাথা নীচু করে আর
সেই পথ দিয়ে যাওয়া শহরের যত বেখেয়ালী
কুকুরের দল যেতে যেতে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে
আমার পায়ের কাছে পেচ্ছাব করে গেল
বেখেয়ালি পথচারীরা
পানের পিক দিল গায়ে
.                             থুতু ছিটোলো…
আমি তবু দাঁড়িয়ে রইলাম, বৃষ্টি আসবে বলে…
অথচ সে এলই না।
কথা দিয়ে কথা রাখল না!

কিন্তু কি আশ্চর্য,
বেখাপ্পা শব্দগুলো একের পর এক জুড়ে গিয়ে
খাতা ভর্তি করে দিল……

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।