Skip to content

আমরা সকলেই – শক্তি চট্টোপাধ্যায়

সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের হারানো দিনের-গল্প বলে গেলো
সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের উঠতে বললো না
কেবল বললো বসে বসে শোনো তোমরা
তোমাদের সেই দিনগুলি যা তোমরা পিছনে ফেলে রেখে এসেছিলে
. তা কেউ কুড়িয়ে নেয়নি আর
তুমি টাকা হারিয়ে এসো, পিছন থেকে কুড়িয়ে নেয় অনেকে
পথ হারিয়ে এসো তুমি, সে-পথেই সারিবদ্ধ পথিক চলেছে
মৃতদেহ ফেলে রেখে এসো তুমি, — শকুন শৃগালে ভোগ করেছে মাংস
দরজা খুলে রেখে এসো তুমি—ত্রস্ত মেয়েমানুষ নিয়েছে পিতলের বাসন
বাড়ি ফেলে রেখে এশো তুমি— সমস্ত নৈরেকার, সকলি নৈরেকার !
তুমি ছেঁড়া জামা দিয়েছো ফেলে
ভাঙা লন্ঠন, পুরোনো কাগজ, চিঠিপত্র, গাছের পাতা—
. সবই কুড়িয়ে নেবার জন্যে আছে কেউ
তোমাদের সেই হারানো দিনগুলি কুড়িয়ে পাবে না তোমরা আর |
তোমরা যতো যাবে ততোই যাবে মৃত্যুর দিকে
বোঝাবে সকলে – ঐ তো জীবন, ঐ তো পূর্ণতা, ঐ তো সর্বাঙ্গীন সর্বাবয়ব
ঐ তো যাকে বলে সমাজ, ধর্ম, সাহিত্য, ধ্যান, পরমার্থ বিষাদ—

সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের হারানো দিনের গল্প বলে গেলো
তারা কোথা থেকে পেয়েছো বলে গেলো না
স্বীকার করলো না তারা পথ থেকে চুরি করেছে কিনা আমাদের
. সেই হারানো স্বপ্নগুলি, স্মৃতিগুলি
তারা আমাদের বলে গেলো হারানো দিনের সেই অনুপম স্বপ্নগুলি স্মৃতিগুলি
আমরা অনুভব করলাম আবার—সেইসব হারানো গল্প
. যা আমরা এতাবত্কাল হারিয়ে এসেছি
হারিয়ে এসেছি বনে-প্রান্তরে পুরানো খাতার শ্লেটে রাসতলায়
নদীসমুদ্রে বেলাভূমিতে পথে ডালে-ডালে টকি হাউসে
হারিয়ে এসেছি ইস্টিশানে খেয়াঘাটে কলকাতার গ্রামে গ্রামে
কারুর চুলে কারুর মুখে চোখে কারুর অঙ্গীকারে—
হারিয়ে এসেছি হারিয়ে এসেছি হারিয়ে এসেছি – ফিরে পাবো না
. জেনে কখনো আর
কখনো ফিরে পাবো না সেইসব দিন যা ঝড়-বৃষ্টি-রৌদ্রে হেমন্তে ভরা
সেইসব বাল্যকালের নগ্নতার কান্নার পয়সা-পাবার-দিন
. ফিরে পাবো না আর
ফিরে পাবো না আর কাগজের নৌকা ভাসাবার দিন উঠানের
. ক্ষণিক সমুদ্রের কলরোলে
ফিরে পাবো না আর ফিরে পাবো না আর ফিরে পাবো না আর
সেইসব জ্যোত্স্নার ঝরাপাতার কথকতার দিন ফিরে পাবো না আর |
সমস্ত সকালবেলা ধরে কারা আমাদের সেইসব হারানো দিনগুলির
. কথা বলে গেলো
সকালবেলা তাই আমাদের কোনও কাজ হয়নি করা
আমরা অনন্তকাল এমনি চুপচাপ হারানো দিনের গল্প শুনছিলাম
. পুলিশের মতো
আমরা আমাদের কর্তব্য স্থির করছিলাম পুলিশের মতো
আমরা ভাবছিলাম সেইসব হারানো দিনগুলি ফিরে পাবার জন্য
. লাকি মিতাকে পাঠিয়ে দেখবো একবার
আমরা বসে বসে এলোমেলো উত্তাল সম্ভাবনার স্বপ্নে এমনি করে
. ব্যস্ত রাখছিলাম আমাদের
আমরা এমনি করে সময়ের একের পর এক চড়াই-উৎরাই হচ্ছিলাম পার
এমন সময় তারা বললো—‘গাড়ি’ এসে গেছে, উঠে পড়ো উঠে পড়ো –
এখানে থাকলে বাঘে খাবে তোমাদের’
আমরা তখনই লাফিয়ে লাফিয়ে অনেকে হামাগুড়ি দিয়ে হেঁটে
. ভবিষ্যৎ-গাড়ির দিকে চলে গেলাম
আমরা সকলেই এখানে বাঘের জিহ্বা এড়িয়ে গিয়ে ওখানের বাঘের
. জিহ্বার দিকে চলে গেলাম |

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।