রাজা। | সাধু সাধু! কিন্তু নটরাজ, এ হল ললিত চাঞ্চল্য– এবার একটা দুর্ললিত চাঞ্চল্য দেখিয়ে দাও। |
নটরাজ। | এমন চাঞ্চল্য আছে যাতে বাঁধন শক্ত করে, আবার এমন আছে যাতে শিকল ছেঁড়ে। সেই মুক্তির উদ্বেগ আছে শ্রাবণের অন্তরে। এসো তো বিজুলি, এসো বিপাশা।
হা রে, রে রে, রে রে, আমায় ছেড়ে দে রে, দে রে– |
সভাকবি। | মহারাজ, আমাদের দুর্বল রুচি, ক্ষীণ আমাদের পরিপাকশক্তি। আমাদের প্রতি দয়ামায়া রাখবেন। জানেন তো, ব্রাহ্মণা মধুরপ্রিয়াঃ। রদ্ররস রাজন্যদেরই মানায়। |
নটরাজ। | আচ্ছা, তবে শোনো। কিন্তু বলে রাখছি, রস জোগান দিলেই যে রস ভোগ করা যায় তা নয়, নিজের অন্তরে রসরাজের দয়া থাকা চাই। মম মন-উপবনে চলে অভিসারে আঁধার রাতে বিরহিণী |
নটরাজ। | অরণ্য আজ গীতহীন, বর্ষাধারায় নেচে চলেছে জলস্রোত বনের প্রঙ্গণে–যমুনা, তোমরা তারই প্রচ্ছন্ন সুরের নৃত্য দেখিয়ে দাও মহারাজকে। |
নাচ | |
রাজা। | তোমার পালা বোধ হচ্ছে শেষের দিকে পৌঁছল– এইবার গভীরে নামো যেখানে শান্তি, যেখানে স্তব্ধতা, যেখানে জীবনমরণের সম্মিলন। |
নটরাজ। | আমারও মন তাই বলছে।
বজ্রে তোমার বাজে বাঁশি সে কি সহজ গান। |
নটরাজ। | মহারাজ, রাত্রি অবসানপ্রায়। গানে আপনার অভিনিবেশ কি ক্লান্ত হয়ে এল। |
রাজা। | কী বলো, নটরাজ! মন অভিষিক্ত হতে সময় লাগে। অন্তরে এখন রস প্রবেশ করেছে। আমার সভাকবির বিরস মুখ দেখে আমার মনের ভাব অনুমান কোরো না। প্রহর গণনা ক’রে আনন্দের সীমানির্ণয়! এ কেমন কথা।! |
সভাকবি। | মহারাজ, দেশকালপাত্রের মধ্যে দেশও অসীম, কালও অসীম, কিন্তু আপনার পাত্রদের ধৈর্যের সীমা আছে। তোরণদ্বার থেকে চতুর্থ প্রহরের ঘণ্টা বাজল, এখন সভাভঙ্গ করলে সেটা নিন্দনীয় হবে না। |
রাজা। | কিন্তু তৎপূর্বে উষাসমাগমের একটা অভিনন্দন-গান হোক। নইলে ভদ্ররীতিবিরুদ্ধ হবে। যে-অন্তগমন নব অভ্যুদয়ের আশ্বাস না রেখেই যায় সে তো প্রলয়সন্ধ্যা। |
নটরাজ। | এ কথা সত্য। তবে এসো অরুণিকা, জাগাও প্রভাতের আগমনী। বিশ্ববেদীতে শ্রাবণের রসদানযজ্ঞ সমাধা হল। শ্রাবণ তার কমণ্ডলু নিঃশেষ করে দিয়ে বিদায়ের মুখে দাঁড়িয়েছে। শরতের প্রথম উষার স্পর্শমণি লেগেছে আকাশে।
দেখো দেখো, শুকতারা আঁখি মেলি চায় |
নটরাজ। | মহারাজ, শরৎ দ্বারের কাছে এসে পৌঁচেছে, এইবার বিদায়গান। রসলোক থেকে আপনার সভাকবি মুক্তি পেলেন বস্তুলোকে। |
সভাকবি। | অর্থাৎ, অপদার্থ থেকে পদার্থে।
বাদলধারা হল সারা, বাজে বিদায়-সুর। |
—সমাপ্ত—