Skip to content

রবিদা ও বাঁকে সিং – শ্রীজাত

রবিদা’র কাছ থেকে মুড়ি খাই আমি।
বিহারের বাঁকে সিং হজমি বেচেন।
শহরের সব পথ অবসাদগামী,
রবিদা ও বাঁকে সিং কোথায় গেছেন?

টোম্যাটো হবে না আর খুবই কম ঝাল
তেঁতুল অল্প, মিহি টক হয় যাতে।
আমাদের কথা হয়, যেন দিনকাল
মেশায় মশলাপাতি ঠিক অনুপাতে।

রবিদা জানেন সব। কখন কী খাই।
সন্ধের জমায়েতে স্বাদু লেনদেন…
টানা দিন দশ যদি দোকানে না যাই,
অভিযোগ, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’

বাঁকে সিং গাড়ি নিয়ে স্কুল চত্বরে।
ছ’দশকে কলকাতা ঘুরে দেখা তাঁর।
পোড় খাওয়া পাঁচ আঙুলে জাদু হয়ে ঘোরে
হজমি, আমসি আর কুলের আচার।

অল্প কারেন্ট নুন, লঙ্কার গুঁড়ো
দেবেন এমন স্বাদ, কথা থেমে যাবে।
এ-শহর ভালবাসা ভিনদেশি বুড়ো
এখন কোথায় আছে? কতটা অভাবে?

স্তব্ধ আচারগাড়ি, মুড়ির তেপায়া
ঢাকা আছে প্লাস্টিকে কোনও এক কোণে
রোজগারে নেমে আসা অনাহারছায়া
খিদের প্রতিধ্বনি পাহাড়ও কি শোনে?

রোজই দেখা হতো, তাই ঠিকানা জানি না।
পরমাত্মীয়, তাই সাকিন খুঁজিনি।
কে জানে ওঁদের ঘরে আজও আছে কিনা
রুটি, চাল, জেদ, নুন, সাহস ও চিনি…

খেয়েছি ওঁদেরই হাতে কত কত দিন…
আজ যে খাওয়াব কিছু, সে-উপায় নেই।
ব্যর্থ হাতের কাছে ঘুমিয়েছে ঋণ,
একা নুন জেগে থাকে চালের পাশেই।

অযুত আচারগাড়ি, মুড়িঠেলা চলে
দেশকাল পার ক’রে ইতিহাসগামী
কখন রক্ত মেশে তেঁতুলের জলে,
স্বপ্নে দু’মুঠো খেয়ে টের পাই আমি।

ভরা পেট অপরাধী। আমার। তোমার।
খিদে দিয়ে এঁকে রেখো বিভাজনটাকে।
পাশাপাশি হেঁটে চলা মুড়ি ও আচার
রবিদা ও বাঁকে সিং যেন বেঁচে থাকে…

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।