Skip to content

ফেরীঘাট – উৎপল কুমার বসু

হে সূর্য, ককুদবৃষ, সাবলীল সোনার গাছের
প্রচ্ছায়ায়, অন্ধকারে সমস্ত তৃণের রোমে একই সঙ্গে
                     ক্ষুধা ও চুম্বন
রেখেছ স্তম্ভিত করে । হে সূর্য, উদ্ভিন্ন বাহু, তুমি পরাঙ্মুখ
        আমাকে দাওনি ধান, গোলাঘর, বীজের উথ্বান
 আমাকে দাও নি সার, বৃষ্টিজল, কূপের বিন্যাস
আমাকে দাও নি শেষ জলসিঞ্চনের মতো জননীপ্রতিভা

ওখানে দিনের শেষে অপরাহ্নের ফুল ঝরে যায় দ্রুত ।
      ওখানে প্রার্থনারত কঙ্কালের বাহুবদ্ধ ছায়া
খুলে ফ্যালে একে একে কৌতূহলহীন ত্বক, মাংসের জটিল
উপশিরাগ্রস্ত পাতা । একে একে অরণ্যের গাছ মরে যায় ।
                     কেননা দিগন্তে তুমি
কীর্ণ হয়ে উঠে এলে এইমাত্র --- কেননা সোনার গাছ
       গ্রাস করে বেড়ে ওঠে---- বেড়ে ওঠে উন্মাদ হাওয়ায়
অন্য সব ফুল, ফল, জীবের বিজ্ঞান
   সাম্যতার, প্রতিসাম্যতার দিকে ছুঁড়ে দিয়ে
এখনো ডুমুর গাছে পৌষের লিপ্ত কুয়াশায়
       মরা পালকের পুঞ্জে শুয়ে আছে পাখি----
মাটির গর্ভ খুঁড়ে আমরা অর্জন করি লোহার আকর
      এত লোহা কাদের মঙ্গলে পরস্পর প্রতিবন্ধে গড়ে তোলে
           এঞ্জিন, স্তব্ধ রেল,  সাঁকো, বাড়ি, কলোনি, বাজার ------
ক্ষীরের আর্শি থেকে স্বাস্থ্য ভিক্ষা করেছিল যক্ষ্মা-রোগিনীরা
           ফলের আর্শি থেকে একবাটি স্বচ্ছন্দ রসের
                        ফেনায়, তারল্যে, প্রেমে
      ডুবে যেতে চেয়েছিল দিল্লীর বাসিন্দা
দুধের আর্শি থেকে মৃত্যুপথগামী ওরা চেয়েছিল দীর্ঘ পরমায়ু
হে সূর্য, নাক্ষত্রতন্তু ছিঁড়ে তুমি বারবার
                      ক্ষীরে, ফলে, দুধের প্রবাহে
পৌষে, শীতের রাতে,  মাংসে,  ত্বকে,  উচ্ছ্বসিত রোমে
      একই সঙ্গে হাহাকার, করতালি, ইন্দ্রিয়ের বাঁশি
কুকুরের দীর্ণ ডাক, ভাঙা ঘন্টা, জলের গর্জন
                  সোনার গাছের তলে উত্সারিত করে দিলে ---
            সোনার গাছের তলে এই কি চুম্বন?
কুয়াশার রাজহংসের ফৌজ দৌড়ে চলে যায়।
                  হায় সূর্য, তোমাকেও আবিষ্কার তৎক্ষণাৎ
পূর্বঘাটে, বঙ্গোপসাগরেরজলে, সিন্ধুর আপ্ত-তরঙ্গের ‘পরে
        অশ্বারূঢ় ম্লান অক্ষৌহিণী ----
       তোমাকেও আবিষ্কার তৎক্ষণাৎ
কাঞ্চীকাবেরীর জঙ্গলের মর্ম ছিঁড়ে চন্দনবনের করাতকলের পাশে,
   তোমাকেও আবিষ্কার তৎক্ষণাৎ গতরজনীর আলেয়ায়, খাজুরাহে
     নৈকষ্যকুলীন, শূদ্র, ব্রাহ্মণের শোভাযাত্রাময় ঐ
                       ভাঙা স্তম্ভে, মিথুনবিপ্লবে ---
হিমালয়ে, ডালহৌসী পাহাড়ে এক চিঠির অক্ষরে,
           বস্তুত, ধূলির খেলা ফেলে দিয়ে আমি বারবার
অন্য সকলের মতো ধ্রুব তত্ত্বে, আত্মজিজ্ঞাসায়
     ফিরে যেতে চেয়েছি যৌবনে
তবু আত্মরতিহীন কোন্ সৌরময়দানে আধিপত্য মানুষের?
      তবু ব্যথাহীন কোন্ বিচ্ছেদের নীল?
                     কোন্ মৃত্যু ঔদাসীন্যহান?
এতগুলি বিপরীত প্রতিদ্বন্দ্বী বোধ, ইচ্ছা, পরস্পর সারে সারে
      মাথার এ-পাশ থেকে ঐ পাশে উড়ে চলে যায়---
         জ্যোত্স্নায় এখনি উত্সব শুরু হবে।
         কেননা সমস্ত হাঁস যুদ্ধের সন্তান।
      কেননা উত্সব এক জাগতিক, বাঁকা উপত্যকা
         চাঁদের প্লাবন, শিরা, রক্ত, বুদ্ধি, তীব্রতা ডিমের
ফুল-ফোটানোর আগে। এতগুলি বিপরীত, প্রতিদ্বন্দ্বী
                  উচ্চকিত থালা ।
সহসা ঘোরাও তুমি যুদ্ধে,  জন্মে,  যোনির শিখরে ;
      কেননা জন্মও তত কষ্টকর--- বিচ্ছেদের মতো ।
রক্তপাত ভয়ঙ্কর ততখানি গম্বুজের ভাঙা দেয়ালের মতো ।
স্বাধীনতা ! অকস্মাৎ তোমাকেও মনে হয় নির্নিমেষ করুণ অঙ্গার
      সভ্যতার নাভির ভিতরে---
ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আছো,  ক্রেমলিনে,  যুক্তরাষ্ট্রে
                  হয়তো বা বৈকুন্ঠের যৌনমখমলে,
হিন্দুর জিজ্ঞাসা নয় । শুধু কিছু ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের
কেবলই মঙ্গল করো । তুমি আপেক্ষিক
     অন্য সকলের প্রতি ---- যেহেতু বিভেদ
‘আন্তর্জাতিক’ বলে উদ্যত মুষল----যেহেতু মানুষ
রেডিোর মতো এক অর্বাচীন বক্তার সম্মানে
     পরিবারসহ শ্রোতা । যেহেতু কাগজে
নিত্যই সম্পাদক ছাপার কলের সঙ্গে কী ভাবে সঙ্গম করে---
     তারই বিবরণ ধুরন্ধর লিখেছে বিশদ
স্বাধীনতা ! তোমাকেই দেখা হল বংশপরম্পরা
      নির্মল বীজের থেকে ক্রমাগত পূর্ণ মহিলায়
    কেবলই উঠেছে জেগে --- কূট পাণ্ডুলিপি থেকে বাত্স্যায়নের
     স্বপ্নদূতীর মতো, নিতম্বের বিপুল আঘাতে
        ঠেলে ফেলে দাও দূরে পূর্বএশিয়ার চুক্তি পশ্চিমের সাথে
আমাকেও খদ্যোৎ হিন্দুর মতো উড়ে যেতে বলো কালো নাভির ভিতরে
                      যেখানে অঙ্গার
      হে সত্তা, হেমন্তলীন, পাতার ঔরসে
   নির্বেদ শূন্যতায় ঝরে যাওয়া ত্যক্ত বিপুলতা,
পাটল খড়ের স্তূপ, অপরাহ্ন হতে টানা মেদুর কম্বল,
 হে সত্তা, কুয়াশালীন, খিন্ন প্রাণীর মর্মে পৌঁছে দাও ভাষা---
       উদ্বেল আখের বনে, বার্লিক্ষেতে, যবের কিনারে,
          তরঙ্গশাসিত তটে, কাপ্তানের বাইনাকুলারে,
       শত্রুজাহাজে, পণ্যে, অন্ধকারে গুপ্ত আর্মাডায়
হে সূর্য, আলোকবিন্দু, একই সঙ্গে প্রসারিত করো
        তোমার জ্যোতির থাবা---- ক্ষুধা ও চুম্বন

[A]

1 thought on “ফেরীঘাট – উৎপল কুমার বসু”

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।