Skip to content

[A]

দেখেছি তৃতীয় আশমানে    চিদাকাশে

চির-পথ-চাওয়া মোর নতুন  চাঁদ হাসে।

দেহ ও মনের রোজা আমার

‘এফতার’ করে গেরেফতার

করিব, তৃষিত বক্ষে মোর    ওই চাঁদে,

সহিতে পারি না বিরহ ওর,   মন কাঁদে!

জুড়াব এবার জুড়াব গো,

খুশির পায়রা উড়াব গো

নামিবে ও চাঁদ মোর হৃদয়-আশমানে,

মত্ত হইব আনন্দের রসপানে।

বদলাবে তকদির আমার,

ঘুচিবে সর্ব অন্ধকার,

পরিব ললাটে, চুমু দেব,    বাঁধব তায়

আল্লাহ্ নামের রজ্জুতে     দিল্‌-কোঠায়।

সাম্যের রাহে আল্লাহের

মুয়াজ্জিনেরা ডাকিবে ফের,

পরমোৎসব হবে সেদিন      ময়দানে

সাত আশমান দোল খাবে   জয়-গানে

এক আল্লার জয়-গানে,

মহামিলনের জয়-গানে

‘শান্তি’ ‘শান্তি’ জয়-গানে!

একঘরে হেথা দশ প্রাচীর,
হিংসা-ক্লৈব্য-বদ্ধ নীড়
ভেঙে যাবে, মন রেঙে যাবে এক রঙে।
এক আকাশের তলে রব এক সঙে।
চাঁদ আসিছে রে, নতুন চাঁদ!
অপরূপ প্রেম-রসের ফাঁদ
বাঁধিবে সকলে এক সাথে গলে গলে
মিলিয়া চলিব তাঁর পথে দলে দলে।
রবে না ধর্ম জাতির ভেদ
রবে না আত্ম-কলহ-ক্লেদ,
রবে না লোভ, রবে না ক্ষোভ অহংকার,
প্রলয়-পয়োধি এক নায়ে হইব পার।
একের লীলা এ, দু-জন নাই
তাঁহারই সৃষ্টি সবাই ভাই,
কত নামে ডাকি – সর্বনাম এক তিনি,
তাঁরে চিনি নাকো, নিজেরে তাই নাহি চিনি।
আলো ও বৃষ্টি তাঁহার দান
সব ঘরে ঝরে এক সমান
সকলের মাঠে শস্য দেয় ফুল ফোটায়,
সকল মানুষ তাঁর ক্ষমা করুণা পায়।
প্রলয়ের রূপ ধরে যবে
তাঁর ক্রোধ নেমে আসে ভবে,
সব ধর্মের সব মানব মরে তখন,
থাকে না হিন্দু-মুসলমানের আস্ফালন!
এককে মানিলে রহে না দুই,
এসো সবে সেই এককে ছুঁই,
এক সে স্রষ্টা সব কিছুর সব জাতির।
আসিছে তাহারই চন্দ্রালোক এক বাতির!
মরিছে যাহারা – তাহারা নয়,
আসিছে – যাহারা বাঁচিয়া রয়,
নিত্য অভেদ উদার-প্রাণ নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
আশমানে চাঁদ দেয় আজান নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
মৃত্যুকে তারা করে না ভয় নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
তাহারা বুদ্ধি-বদ্ধ নয় নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
কাপুরুষ তার্কিক যারা
কেবল বিচার করে তারা,
অগ্রে চলে না ক্লীব ভীরু, ভয় দেখায়,
যারা আগে চলে, পিছে তাদের টানিতে চায়!
প্রাণ-প্রবাহের শত্রু সব,
ধূর্ত যুক্তি-শৃগাল-রব
দুই কূলে করে, তবু চলে নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
মহাবন্যার তরঙ্গসম সম্মুখে দলে দলে
তবু চলে নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
জাগাবে জোয়ার নতুন চাঁদ
এদেরই বক্ষে ; ভাঙিবে বাঁধ
জরায় জীর্ণ মড়া ঘাটের বিলাসীদের
মানিবে না এরা হট্টগোল মণ্ডূকের
সত্য বলিতে নিত্য ভয়
যুক্তি-গর্তে লুকায়ে রয়
ইহারা তাদের দলের নয় – নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
এরা জীবন্ত মুক্ত-ভয় নৌজোয়ান!
ভীরু ইঁদুরের কিচি-মিচি
শোনে নাকো এরা মিছামিছি,
এরা শুধু বলে, ‘চল্‌ আগে নৌজোয়ান!’
অসম্ভবের অভিযানে এরা চলে,
না চলেই ভীরু ভয়ে লুকায় অঞ্চলে!
এরা অকারণ দুর্নিবার প্রাণের ঢেউ,
তবু ছুটে চলে যদিও দেখেনি সাগর কেউ।

জানে পারাবার, জানে অসীম,
এরাই শক্তি মহামহিম,
এরা উদ্দাম যৌবন-বেগ দুরন্ত
মুক্তপক্ষ নির্ভয় এরা উড়ন্ত।
নাই ইহাদের অবিশ্বাস
যা আনে জগতে সর্বনাশ।
প্রতি নিশ্বাসে এরা কহে – ‘মোরা অমর!’
তনুমনে নাই সন্দেহের বিসর্গ অনুস্বর।
হাতের লাট্টু এদের প্রাণ
গুলতির গুলি এদের প্রাণ
বেপরোয়া ছুঁড়ে ছুঁড়ে মারে দিকে দিকে,
এদের বুদ্ধি চিকমিকায় না ঘেরা চিকে!
তিন্তিড়ি গাছে জোনাকি-দল
চাঁদের নিন্দা করে কেবল,
পুচ্ছের আলো উচ্ছের ঝোপে জ্বালায়ে কয় –
‘মোরা আলো দেব, চন্দ্রের দেশে ভীষণ ভয়!’
পাহাড়ে চড়িয়া নীচে পড়ে – নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
অজগর খোঁজে গহ্বরে – নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
চড়িয়া সিংহে ধরে কেশর – নৌজোয়ান!
বাহন তাহার তুফান ঝড় – নৌজোয়ান!
শির পেতে বলে – ‘বজ্র আয়!’
দৈত্য-চর্ম-পাদুকা পায়,
অগ্নি-গিরিরে ধরে নাড়ায় – নৌজোয়ান!
দলে দলে তারা খুঁজে বেড়ায়
ভূকম্পের ঘর কোথায় –
নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!
বিলাস এদের দারিদ্র্য,
গতি ইহাদের বিচিত্র,
দেখেনিকো জ্ঞান-বিলাসীরা এদের পথ,
শুনিলেও কাঁপে বলি-যূপের ছাগের বৎ!
এরাই দেখিবে নতুন চাঁদ জ্যোতিষ্মান,
ইহাদের নাই দেহ ও মন, কেবল প্রাণ!
নৌজোয়ান, নৌজোয়ান!

এদেরেই পথ দেখাতে ওই
নতুন চাঁদের জ্যোৎস্না-খই
আকাশ-খোলায় ফুটিছে! ভীরুরা যাসনে কেউ,
যাদের পিছনে লেগেছে বুদ্ধি ভয়ের ফেউ!
মৃত্যুর ভয় প্রতি পদে ওই পথে
লঙ্ঘিতে হবে কত সমুদ্র পর্বতে।
বিলাসীরা থাকো চুপ করে
রূপ দেখে খেয়ো টুপ করে
যাত্রী অরুণ-তীর্থের পথে নৌজোয়ান!
পথ দেখায় যে, সে শুধু কয় – ‘জীবন দান
জীবন দান, নৌজোয়ান!’
জীবনে না করে নিষ্ঠীবন,
মৃত্যুর বুকে সঞ্চরণ
করে যারা, তারা নবযুগের নৌজোয়ান!
তাহাদের পথে এসো না কেউ ভীরু, আল্লার না-ফরমান।
ওরা দুর্জয় ভয়-হারা
ওদের ভ্রান্ত কয় কারা?
এই মর্ত্যের ভোগের গর্তে যারা মরে?
অমৃত আনিতে যায় – তারে অনাদর করে?
এক আল্লার সৃষ্টিতে
এক আল্লার দৃষ্টিতে
দেখিবে সবারে দুনিয়াতে নৌজোয়ান!
তলোয়ার তার বক্ষে লুকানো
নববধূ সম শয্যাতে –
নৌজোয়ান!
নৌজোয়ান!

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।