Skip to content

[A]

চাষি রে! তোর মুখে হাসি কই?

তোর     গো-রাখা রাখালের হাতে বাঁশের বাঁশি কই?

তোর     খালের ঘাটে পাট পচে ভাই পাহাড়-প্রমাণ হয়ে,

তোর     মাঠের ধানে সোনা রং-এর বান যেন যায় বয়ে,

সে পাট ওঠে কোন লাটে?

সে ধান ওঠে কোন হাটে?

উঠানে তোর শূন্য মরাই মরার মতন পড়ে–

স্বামীহারা কন্যা যেন কাঁদছে বাপের ঘরে।

তোর     গাঁয়ের মাঠে রবি-ফসলছবির মতন লাগে,

তোর     ছাওয়াল কেন খাওয়ার বেলা নুন লঙ্কা মাগে?

তোর

তরকারিতেও সরকারি কোন ট্যাক্স বুঝি বসে!

তোর     ইক্ষু এত মিষ্টি কি হয় চক্ষুজলের রসে?

তোর     গাইগুলোকে নিঙড়ে কারা দুধ খেয়েছে ভাই?

তোর     দুধের ভাঁড়ে ভাতের মাড়ের ফেন – হায়, তাও নাই!

তোর     ছোটো খোকার জুড়িয়েছে জ্বর ঘুমিয়ে গোরস্তানে,

সে     দিদির আঁচল ধরে বুঝি গোরের পানে টানে।

বিকার-ঘোরে দিদি তাহার ডাকছে ছোটো ভায়ে,

দুধের বদল ঝিনুক দিয়ে আমানি দেয় মায়ে।

কবর দিয়ে সবর করে লাঙল নিয়ে কাঁধে,

মাঠের কাদাপথে যেতে আব্বা তাহার কাঁদে।

চারদিকে তার মাঠ-ভরা ধান আকাশ-ভরা খুশি,

লাল হয়েছে দিগন্ত আজ চাষার রক্ত শুষি!

মাঠে মাঠে ধান থই থই, পণ্যে ভরা হাট,

ঘাটে ঘাটে নৌকা-বোঝাই তারই মাঠের পাট।

কে খায় এই মাঠের ফসল, কোন সে পঙ্গপাল?

আনন্দের এই হাটে কেন তাহার হাড়ির হাল?

কেন তাহার ঘরের খোকা গোরের বুকে যায়?

গোঠে গোঠে চরে ধেনু, দুধ নাহি সে পায়!

ওরে চাষা! বাঁচার আশা গেছে অনেক আগে

গোরের পাশের ঘরে কাঁদা আজও ভালো লাগে?

জাগে না কি শুকনো হাড়ে বজ্র-জ্বালা তোর?

চোখ বুজে তুই দেখবি রে আর, করবে চুরি চোর?

বাঁশের লাঠি পাঁচনি তোর, তাও কি হাতে নাই?

না থাক তোর দেহে রক্ত, হাড় কটা তোর চাই।

তোর     হাঁড়ির ভাতে দিনে রাতে যে দস্যু দেয় হাত,

তোর     রক্ত শুষে হল বণিক, হল ধনীর জাত

তাদের হাড়ে ঘুণ ধরাবে তোদেরই এই হাড়

তোর     পাঁজরার ওই হাড় হবে ভাই যুদ্ধের তলোয়ার।

তোরই মাঠে পানি দিতে আল্লাজি দেন মেঘ,

তোরই গাছে ফুল ফোটাতে দেন বাতাসের বেগ,

তোরই ফসল ফলাতে ভাই চন্দ্র সূর্য উঠে,

আল্লার সেই দান আজি কি দানব খাবে লুটে?

তেমনি আকাশ ফর্সা আছে, ভরসা শুধু নাই,

তেমনি খোদার রহম ঝরে, আমরা নাহি পাই।

হাত তুলে তুই চা দেখি ভাই, অমনি পাবি বল,

তোর ধানে তোর ভরবে খামার নড়বে খোদার কল!

[A]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।